আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
এই মওসুমে বঙ্গোপসাগরে এরকম ঝড় এই শতাব্দীতে প্রথম
দেশনিউজ ডেস্ক |
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্পান সোমবার দিনের প্রথম ভাগেই সর্বোচ্চ তীব্রতার একটি ‘সুপার সাইক্লোনে’ পরিণত হয়েছে বলে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ এদিন জানিয়েছে।
এই ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যে নাগাদ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত দীঘা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের মধ্যবর্তী সমুদ্রতটের কোনও একটি জায়গা দিয়ে উপকূলে আছড়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আবহবিদরা জানাচ্ছেন, তীব্রতার মাপকাঠিতে এই ঘূর্ণিঝড় এর মধ্যেই অনেক রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
‘আম্পানে’র মোকাবিলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সোমবার বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারতের ন্যাশনাল ডিজ্যাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি-র কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসছেন।
দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ‘আম্পান’ নামের ঘূর্ণিঝড়টি যে আজ সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ একটি ‘অতি প্রবল’ বা ‘এক্সট্রিমলি সিভিয়ার’ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে, ইন্ডিয়ান মেটিওরলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট তা টুইট করে জানিয়েছিল সকালেই।
এর মাত্র ঘন্টা কয়েক বাদেই তারা আবার টুইট করে ঘোষণা করে – বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ সেটি একটি সুপার সাইক্লোনে বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।
কোথায়, কবে আঘাত হানবে?
দিল্লিতে ভারতের আবহাওয়া বিভাগের মহাপরিচালক মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানান, “আম্পান নামে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া এই ঘূর্ণিঝড়টি থেকে ২০শে মে বুধবার আমরা সবচেয়ে বড় বিপদের আশঙ্কা করছি। সেদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে কোনও একটা সময় এটা উপকূলে আছড়ে পড়বে।”
“মঙ্গলবার ১৯শে মে থেকেই উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। বুধবার ২০শে মে সকাল থেকে তার সঙ্গে যোগ হবে তীব্র ঝোড়ো বাতাস।”
“ঝড়টি এখন উত্তর-উত্তর পূর্ব অভিমুখে এগোচ্ছে, বুধবার এটি পশ্চিমবঙ্গের দীঘা আর বাংলাদেশের হাতিয়ার মাঝামাঝি কোনও একটা এলাকা দিয়ে সমুদ্রতট অতিক্রম করবে।”
“ডাঙায় আছড়ে পড়ার সময় বাতাসের বেগ ঘন্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটারের মতো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
ভারতের ন্যাশনাল ডিজ্যাস্টার রেসপন্স ফোর্সের অন্তত ৩৭টি দলকে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশাতে এই ঝড়ের মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে ওই বাহিনীর প্রধান জানিয়েছেন।
ঠিক বছরখানেক আগেই ওড়িশাতে আছড়ে পড়েছিল সাইক্লোন ফণী, তবে এবার আম্পানের আঘাত থেকে ওই রাজ্যটি বেঁচে গেলেও যেতে পারে আশা করা যাচ্ছে।
কিন্তু ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলের একটা বিস্তীর্ণ অংশ নিয়ে তেমন একটা আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না – যার একটা বড় কারণ আম্পানের তীব্রতা।
কেন আম্পানকে নিয়ে ভয়?
ভারতের বেসরকারি আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থা স্কাইমেটের প্রধান মহেশ পালাওয়াট জানাচ্ছেন, “এই শতাব্দীতে প্রাক-মনসুন পর্বে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া এটাই কিন্তু প্রথম সুপার সাইক্লোন।”
“এর আগে ২০০৭ সালের জুনে আরব সাগরে সুপার সাইক্লোন ‘গোনু’ তৈরি হয়েছিল – যেটা পরে ওমানের দিকে সরে যায়।”
“আম্পান এর মধ্যেই ঘন্টায় দেড়শো কিলোমিটারেরও বেশি গতিবেগসম্পন্ন ঝোড়ো বাতাস সঙ্গে ‘প্যাক’ করে নিয়েছে।”
“মাত্র চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে এটা একটা ঘূর্ণিঝড় থেকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে, সেটাও একটা রেকর্ড।”
উপকূলের কাছাকাছি এলে এই ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা সামান্য কমবে, তবে তার পরেও এর বিধ্বংসী ক্ষমতাকে খাটো করে দেখার কোনও সুযোগ নেই – জানাচ্ছেন মি পালাওয়াট।
তিনি বলছিলেন, “স্থলভূমি থেকে শুকনো বাতাস এসে সিস্টেমটাকে কিছুটা দুর্বল করে দেয় – এই আম্পানের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটবে।”
“কিন্তু তার পরেও এটা একটা প্রচন্ড সাঙ্ঘাতিক ঘূর্ণিঝড় – যার তান্ডব আর ক্ষয়ক্ষতি সাধনের ক্ষমতা মারাত্মক। ফলে পুরো উপকূলীয় এলাকা জুড়েই মানুষকে সাবধান থাকতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেমন সোমবার বিকেলে সুপার সাইক্লোনের মোকাবেলায় উচ্চ পর্যায়ের জরুরি বৈঠকে বসেছেন, পশ্চিমবঙ্গেও রাজ্য সরকার উপকূলীয় এলাকার সাইক্লোন সেন্টারগুলোতে বিপর্যয় মোকাবেলা দল পাঠাতে শুরু করেছে।
তবে পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে এই দলগুলো ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান চালাবে ‘সামাজিক দূরত্বে’র শর্ত মেনেই।
সূত্রঃ বিবিসি