উলঙ্গ করে পতিতার সঙ্গে ছবি তুলেছে, প্লাস দিয়ে তুলে নেয় সব নখ

চোখ ও পায়ুপথে মরিচের গুঁড়ো, পানি চাইলে দেয়া হয় মলমূত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক।

কক্সবাজারের টেকনাফবাসীর কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। ওসি প্রদীপ কোনো গ্রাম বা মহল্লায় আসছে মানেই কাউকে তুলে নিয়ে যাবে কিংবা কারো ঘরে প্রবেশ করে মাদক ও ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে থানায় নিয়ে যাবে। তারপর ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে গরিব মানুষগুলোর কাছ থেকে আদায় করবে লাখ লাখ টাকা। আর টাকা দিতে না পারলে প্রদীপের বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে চলে যেতে হবে দুনিয়া থেকে।

সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার স্ত্রী, বোন, মা ও শিশু সন্তান

এভাবেই টেকনাফকে শাসন করেছিলেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। আর প্রদীপের এসব বর্বর, পৈশাচিক, নিষ্ঠুর ও নির্মমতার বিরুদ্ধে যে কথা বলবে বা লিখবে তাকে দিতে হবে জীবন কিংবা থাকতে হবে কারাগারের চার দেয়ালের ভেতর।

ওসি ও প্রদীপ ও কক্সবাজারের এসপি মাসুদের অন্যায়-অপকর্মের বিরুদ্ধে কলম ধরে এমনই এক নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছিলেন কক্সবাজারের সাহসী সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান। প্রাণে বেঁচে গেলেও মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা। নিষ্ঠুরতার এমন কিছু বাকী ছিল না যা এসপি মাসুদ ও ওসি প্রদীপ তার উপর চালায়নি।
একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার পরিবারের লোকজন ওসি প্রদীপের সেই নির্মমতার বর্ণনা দিয়েছেন।

২০১৯ সালের ২৪ জুন মাদক নির্মূলের নামে মাদকের বিস্তার ঘটাতে ওসি প্রদীপ ও এসপি মাসুদ যে ভুমিকা রেখেছিলেন তা নিয়ে একটি রিপোর্ট করেছিলেন সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা। এই রিপোর্ট প্রকাশের পরই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন মোস্তফার ওপর।
ফরিদুল মোস্তফার বোন বলেন, ওসি প্রদীপ প্রথমে আপসে যাওয়ার জন্য আমার ভাইকে প্রস্তাব দিয়েছে। বলেছে, আমরা যে টাকা পাই তা থেকে তোমাকেও দিবো। কিন্তু আমার ভাই রাজি হয়নি। এতে

তারা জানায়, ওসি প্রদীপের ভয়ে টেকনাফের বাড়ি বিক্রি করে ঢাকায় চলে যায় সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার পরিবার। তারপর ঢাকার মিরপুর থেকে ওসি প্রদীপ তার প্রাইভেট বাহিনী দিয়ে ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মধ্যরাতে তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়।

ফরিদুল মোস্তফার স্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে তার উপর অমানবিক নির্যাতন করেছে। তার চোখে ও পায়খানার রাস্তায় মরিচের গুড়ো দিয়েছে। প্লাস দিয়ে আঙ্গুলের নখগুলো তুলে নিয়েছে। হাতের প্রতিটি আঙুল গুড়িয়ে দিয়েছে। সে যখন একটু পানি খেতে চাইছিল-তখন তাকে পেশাব ও টয়লেটের নোংরা পানি দিয়েছে খাওয়ার জন্য।

তিনি বলেন, ওসি প্রদীপ ফরিদুল মোস্তফাকে উলঙ্গ করে ভিডিও করেছিল বলেও তারা শুনেছেন। এমনকি পতিতা ডেকে এনে তার সঙ্গে ছবি তুলে ভাইরাল করার হুমকি দিয়েছে।

ফরিদুল মোস্তফার বোন বলেন, আমার ভাই ঢাকা চলে যাওয়ার পর আমরা দুই বোন টেকনাফে ছিলাম বাড়িটা ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। তাকে গ্রেফতারের পরদিন রাতে ওসি প্রদীপ এসে বাড়ির ভেতর মদের বোতল, ইয়াব ও অস্ত্র রাখে। বেরিয়ে গিয়ে আবার মানুষকে জিজ্ঞাস করে ফরিদুল মোস্তফার বাড়ি কোনটা? আবার এসে বাড়ির গেটগুলো ভেঙ্গে ফেলে। ঘরে ঢুকেই লাঠি দিয়ে আমাদেরকে মারতে থাকে। তখন মদ ও অস্ত্র উদ্ধারের নাটক করে আশেপাশের লোকজনকে সাক্ষী বানায়।
ওই সময় প্রীদপ আমাদের বলতে থাকে-আমাকে চিন? আমি টেকনাফে-মহেশখালীতে মানুষকে ক্রসফায়ার দিয়েছি।
তারা জানান, ওসি প্রদীপের হাত থেকে বাঁচতে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিপির কাছে চিঠি লিখেছিলেন।


ডিএন/জেএন/জেএএ/২:৫০পিএম/১১৮২০২০১০

Print Friendly, PDF & Email