কুষ্টিয়ায় ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতিসহ ৩জন গ্রেফতার

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকে নেওয়া যুবলীগ নেতা আনিসুর রহমানকে এ মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ।  কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) তানভীর আরাফাত আজ শনিবার দুপুরে তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান।

গ্রেফতার আনিসুর রহমান (৩৫) কুমারখালী উপজেলার আনিসুর কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি। তার সঙ্গে গ্রেফতার অপর দুজন হচ্ছে সবুজ হোসেন (২০) ও হৃদয় আহমেদ (২০)। এ ছাড়া বাচ্চু (৩২) নামে আরেক যুবককে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এসপি তানভীর আরাফাত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আনিসুরের সঙ্গে কয়া মহাবিদ্যালয় (কলেজ) কর্তৃপক্ষের আগে থেকেই দ্বন্দ্ব আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সহযোগীদের নিয়ে তিনি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে সড়কের পাশে স্থাপিত বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করেন।

এ ভাস্কর্যটি ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে ধর্মীয় কোনও সম্পর্ক নেই। ব্যক্তিগত আক্রোশেই এটি ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে এ ঘটনার মাধ্যমে হীন উদ্দেশ্য সাধনের ষড়যন্ত্র ছিল কি না তা তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে দেখা হবে।

বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য

এর আগে শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ৯টার দিকে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান নিশ্চিত করেন, বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিসুর রহমানসহ কয়া মহাবিদ্যালয়ের সভাপতি নিজামুল হক, অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ, নৈশপ্রহরী খলিলুর রহমানকে থানায় নেওয়া হয়। সেখানেই জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে যুবলীগ নেতা ও তার সহযোগীদের নংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় পুলিশ।  

এদিকে ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার বিকেলে কয়া কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা ছিলেন বাঘা যতীন। কয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একাই বাঘের সঙ্গে লড়াই করে বাঘ হত্যা করেছিলেন বলে বাঘা যতীন নামে পরিচিত পেয়েছিলেন। বাঘা যতীন ছিলেন বাংলার প্রধান বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর দলের প্রধান নেতা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে কলকাতায় জার্মান যুবরাজের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে তিনি জার্মানি থেকে অস্ত্র ও রসদের প্রতিশ্রুতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখতে গ্রামের কলেজের সামনে ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর তৎকালীন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ ভাস্কর্যের উদ্বোধন করেছিলেন।

এর আগে, গত ৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ২টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এসময় ভাস্কর্যের মুখ ও হাতের অংশ ভেঙে ফেলে তারা। পরে পুলিশ সিসি ক্যামেরার ছবি দেখে ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত দুই মাদ্রাসাছাত্রকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করে। ঘটনার পরে মাদ্রাসার ওই দুই ছাত্রকে সহযোগিতা করার জন্য মাদ্রাসার দুই শিক্ষককেও গ্রেফতার করা হয়। মাদ্রাসার দুই শিক্ষার্থী ও দুই শিক্ষক বর্তমানে কারাগারে আছেন।

Print Friendly, PDF & Email