আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
ডিএমডি-জিএমসহ বেসিক ব্যাংকের ৫জন অপসারিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে আলোচিত বেসিক ব্যাংকের তিন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও দুই মহাব্যবস্থাপককে (জিএম) অপসারণ করা হয়েছে। বুধবার তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয় বলে ব্যাংকের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
অপসারিতরা হলেন, ব্যাংকটির ডিএমডি ফজলুস সোবহান, মো. রুহুল আলম ও মো. সেলিম এবং মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. মাহবুবুল আলম ও শামিম হাসান।
এদের মধ্যে ডিএমডি ফজলুস সোবহান অপসারণের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এসব কর্মকর্তাকে অপসারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
এর আগে গত ২৩ নভেম্বর এসব কর্মকর্তাকে অপসারণের সিদ্ধান্ত জানিয়ে কোনো ব্যাখ্যা থাকলে তা সাত দিনের মধ্যে দিতে বলা হয়।
প্রথম চারজনকে একটি মামলা পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত দুই জন আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকের ২৬ লাখ টাকা ক্ষতির দায়ে এবং শেষজনকে ঋণ অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ততার দায়ে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
উচ্চপদস্থ এত কর্মকর্তাকে একসঙ্গে অপসারণের ঘটনা ব্যাংক খাতে এই প্রথম। বেসিকের ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্ততার দায়ে তাদের মধ্যে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মো. রুহুল আলম ছাড়া অন্য সবার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা রয়েছে।
গত ২৩ নভেম্বর এসব কর্মকর্তাকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, মামলা পরিচালনায় অতিরিক্ত দুই জন আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকের ২৬ লাখ টাকা ক্ষতি করা হয়েছে।
আর্থিক ক্ষতির কারণে আপনাদের অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ। এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য থাকলে সাত দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়। গতকালের পর্ষদ সভায় তাদের প্রত্যেকের বক্তব্য নিয়ে আলোচনার পর অপসারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনে ৫০০০ কোটি টাকার বেশি ঋণে অনিয়মের তথ্য উদ্ঘাটনের পর গত বছরের মে মাসে তখনকার এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
একই সময়ে ভেঙে দেওয়া হয় পরিচালনা পর্ষদ। পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার আগেই পদত্যাগ করেন মূল অভিযুক্ত তখনকার চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু। নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নিয়ে এর আগে একজন মহাব্যবস্থাপকসহ ১৩ কর্মকর্তাকে অপসারণ করে। এবার ডিএমডি পর্যায়ের তিন কর্মকর্তাকে অপসারণ করা হলো।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, বেশ কয়েকজন মহাব্যবস্থাপকের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে মো. রুহুল আলম ও মো. সেলিমকে ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতি দেয় সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদ।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা মো. রুহুল আলম নিরাপত্তা বিভাগের ডিজিএম হিসেবে যোগদানের মাত্র এক বছর আট মাসে দুটি পদোন্নতি নিয়ে ডিএমডি হন।
আর মো. সেলিমকে কয়েকজনের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করেন সর্বজ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক জয়নুল আবেদীন চৌধুরী ও শামিম হাসান।
মামলা পরিচালনার জন্য ব্যাংকের নিয়মিত আইনজীবীর বাইরে অতিরিক্ত দুই জন আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে তাদের পরিশোধ করা হয় প্রায় ৪০ লাখ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিদর্শনে এ তথ্য উদ্ঘাটনের এ বিষয়ে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বেসিক ব্যাংকের নিজস্ব পরিদর্শনে অতিরিক্ত দুই জন আইনজীবীকে ২৬ লাখ টাকা পরিশোধের সঙ্গে দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করে উচ্চপদস্থ এসব কর্মকর্তাকে অপসারণ করা হলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনে বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা, শান্তিনগরসহ কয়েকটি শাখা থেকে ৫,০০০ কোটি টাকার বেশি ঋণে অনিয়মের তথ্য উঠে আসে।
মূলত ২০১০ থেকে ১৪ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত এসব অনিয়ম হয়। এসব অনিয়মের প্রভাবে ব্যাংকটির খেলাপি বেড়ে ২০১৪ সাল শেষে হয়েছে ৬,৩৮৪ কোটি টাকা।
সেপ্টেম্বরে তা আরো বেড়ে ৮,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আর সেপ্টেম্বরে এসে ২,৯৯১ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি নিয়ে চলছে এ ব্যাংক।