সুইচ ব্যাংকে ১২ বিলিয়ন ডলার: মুসাকে ফের দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ

0002নিজস্ব প্রতিবেদক : আলোচিত ব্যবসায়ী ও ড্যাটকো গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. মুসা বিন শমসেরকে (প্রিন্স মুসা) দুর্নী‌তি দমন ক‌মিশনে (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় দুদক কার্যালয়ে আসেন তিনি। এর কিছুক্ষণ পর ১২ বিলিয়ন ডলার আটকে থাকা সুইচ ব্যাংকের হিসাব নম্বর জানতে দ্বিতীয় দফায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন দুদকের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী। এ জিজ্ঞাসাবাদ দুপুর পর্যন্ত চলবে বলে জানা গেছে।

দুদক সূত্র জানায়, অনুসন্ধান চালিয়ে সুইচ ব্যাংকের মুসার ওই অ্যাকাউন্ট নম্বর সংগ্রহ করতে পারেনি দুদক। এমনকি আইনগত বাধার অজুহাতে দুদককে ওই অ্যাকাউন্ট নম্বর সরবরাহ করেননি মুসা। এদিকে অনুসন্ধানে তেমন কোনো তথ্য না পেয়ে মুসার অর্থ-সম্পদ অর্জনের সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন খোদ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান।
১২ বিলিয়ন ডলারের ধূম্রজাল কাটাতে ২০১৫ সা‌লের ৪ ডি‌সেম্বর মুসা‌কে দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের নোটিশ করে কমিশন। সে অনুসারে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি তার জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার কথা ছিল। তবে সে দিন উপস্থিত না হয়ে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিন মাসের সময় বাড়ানোর আবেদন করেন তিনি। মুসার আবেদন বিবেচনায় নিয়ে ১০ কার্যদিবস সময় বৃদ্ধি করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২৮ জানুয়ারি দিন নির্ধারণ করে কমিশন।
সূত্র জানায়, এর আগে প্রথম দফায় মুসা বিন শমসেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও তার কাছ থেকে সুইচ ব্যাংকের হিসাব নম্বর জানা যায়নি। কমিশনে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতেও এ তথ্য নেই। সুইচ ব্যাংকে যোগাযোগ করেও মুসার নামে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
২০১৫ সালের ৭ জুন দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা দেন মুসা বিন শমসের। সম্পদ বিবরণীতে তিনি সুইচ ব্যাংকে তার ১২ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি প্রায় ৯৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা- প্রতি ডলার ৭৮ টাকা হিসেবে) ফ্রিজ অবস্থায় থাকার কথা উল্লেখ করেন। সুইচ ব্যাংকে ৯০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের (বাংলাদেশি প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) অলংকার জমার তথ্য দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া দেশে তার সম্পদের মধ্যে গুলশান ও বনানীতে দুটি বাড়ি, সাভার ও গাজিপুরে এক হাজার ২০০ বিঘা জমির কথাও সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ রয়েছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে মুসার বিরুদ্ধে স্বনামে/বেনামে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেলে ২০১৫ সালের ১৯ মে তার বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করে কমিশন।
সূত্র আরও জানায়, প্রিন্স মুসার বিরুদ্ধে ২০১১ সালে অবৈধ সম্পদের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই সময় বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বস’র প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে এ অনুসন্ধান শুরু করা হয়। তবে অজ্ঞাত কারণে দুদকের ওই অনুসন্ধান আলোর মুখ দেখেনি।
তিন বছর পর ২০১৪ সালের শেষের দিকে ‘বিজনেস এশিয়া’ ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে অাবারও নতুন করে মুসার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক।
২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর দুদকের ওই কর্মকর্তাকে এ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই বছরের ৪ ডিসেম্বর মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ পাঠায় দুদক। ১৮ ডিসেম্বর হীরার জুতা থেকে শুরু করে আপাদমস্তক মূল্যবান অলঙ্কারে সজ্জিত হয়ে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হন প্রিন্স মুসা। সঙ্গে ছিল নারী-পুরুষের ৮০ জনের এক দেহরক্ষী বহর।
দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সুইচ ব্যাংকে জব্দ করা অর্থ ফেরত পেলে পদ্মা সেতু নির্মাণে বিভিন্ন খাতে তা বিনিয়োগ করবেন বলে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান মুসা।
এদিকে মুসা ধন-সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুদকে যে তথ্য দিয়েছেন তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান। ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর দুদক চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মুসা যত গর্জে, তত না। দুদকের কাছে তিনি বিশাল জমি-জমার হিসাব দিয়েছেন। তবে কোনো জায়গাই তার দখলে নেই। আবার বিদেশে আটক ১২ বিলিয়ন ডলারের যে তথ্য দিয়েছেন, সেখান থেকে সে তথ্যও পাচ্ছি না। আবার তিনিও (মুসা) কিছু দিতে পারছেন না। আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে দেখেছি, তেমন কিছু নেই। যতটা না করেছেন, তার চেয়ে বেশি বলেছেন তিনি।’
দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হ‌লে মুসার ধন-সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনেক তথ্যই পরিষ্কার হবে বলে আশা কর‌ছে ক‌মিশন।
দুদকে দাখিল করা সম্পদের হিসাব মিথ্যা প্রমাণিত হলে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email