২০১৭ সাল ছিল ব্যাংক খাতে কেলেঙ্কারির বছর- সিপিডি

সিপিডিনিজস্ব প্রতিবেদক: আগের তুলনায় ব্যাংকিং খাতের অবস্থা এখন আরও বেশি নাজুক হয়েছে। এর সঙ্গে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন আরও ঝুঁকি সৃষ্টি করবে বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

গত শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

এ সময় তিনি বলেন, ঋণের ওপর কয়েকটি ব্যাংকে ব্যক্তির প্রাধান্য বিস্তার করছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া ব্যক্তি খাতের নতুন ব্যাংক কার্যকর হতে পারেনি। এসব ব্যাংক থেকে বিদেশে টাকাও পাচার হচ্ছে। সরকার এ বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অনিয়মের কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া বাদে সরকার ব্যাংক আইনে পারিবারিক ক্ষমতা আরও বাড়িয়েছে।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, একটা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৭ সাল শুরু হয়েছিল, সেটা ছিল বিনিয়োগ বাড়ানো। কিন্তু বছর শেষে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ বাড়েনি।

তিনি বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি হলেও সেই তুলনায় দারিদ্র্য কমেনি। সেই অনুযায়ী কর্মসংস্থানও হয়নি। আবার এই সময়ে সম্পদের বৈষম্যও বেড়েছে। ফলে ২০১৭ সালে সার্বিকভাবে সামষ্টিক অর্থনীতি দুর্বল হয়েছে।

দেবপ্রিয় বলেন, ২০১৮ সালের সব কর্মকাণ্ড নির্বাচনমুখী। ২০১৭ সাল ছিল ব্যাংক খাতে কেলেঙ্কারির বছর। এই খাতে সংস্কার হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। চলতি বছর এমন ম্যাজিক্যাল কিছু ঘটবে না যাতে বড় ধরনের সংস্কার হবে। সংস্কার করার মতো রাজনৈতিক পুঁজিও নাই। গত বছরের আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার সঙ্গে চলতি বছরের নির্বাচন বাড়তি ঝুঁকি যোগ করবে। এজন্য রক্ষণশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা কার্যকর করতে হবে। ঋণ কমাতে হবে, টাকার মূল্যমান ঠিক রাখতে হবে, মূল্যস্ফীতি বিশেষ করে চালের দাম কমাতে হবে। নির্বাচনি বছরে বহুমুখী চাপ সামলাতে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা প্রয়োজন।

ব্যাংক খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্যাংকের সামগ্রিক সূচক আরও খারাপ হয়েছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে, শুধু তাই নয়, ঋণের টাকা কয়েক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আশঙ্কার জায়গা প্রশাসনিকভাবে বেশ কিছু ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে।

সিপিডির বিশেষ ফেলো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতা কারণে এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ বা সংস্কার করতে পারেনি। সংস্কারের পরিবর্তে আরও উল্টো দিকে গেছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে পরিবারের হাতে ব্যাংকগুলোকে জিম্মি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগের রাজনৈতিক বিবেচনায় লাইসেন্স দেওয়া ব্যাংকগুলোর অবস্থা খারাপ হলেও নতুন করে আরও ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

তিনি আরওবলেন, দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় দায়ী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংস্কারের উদ্যোগের অভাব ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় ঘটাতে পারেনি অর্থ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দুর্বল ছিল না।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমদানির আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে। বিশেষ করে পোশাক শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে তুলা আমদানি ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। যদিও উৎপাদনে তার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বক্তব্য রাখেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

Print Friendly, PDF & Email