• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

‘চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে গেলে তিনশ’ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি সম্ভব’

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীতে গরুর মাংসের দাম ঠিক করে দিলেও নৈরাজ্য থামেনি। তিন মাস ধরেই চলে আসছিল এ নৈরাজ্য। এ সময়ের মধ্যে কয়েক দফা বাড়িয়ে বিক্রেতারা ৪৫০ টাকা কেজি দরের মাংস ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি করছিল। রোজার আগে সিটি করপোরেশন ২৫ টাকা কমিয়ে দাম ঠিক করে দিয়েছিল ৫২৫ টাকা। কিন্তু কোনো এলাকায় প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৫৫০-৫৮০ টাকা কেজি দরে। অবশ্য কিছু কিছু দোকান নির্ধারিত দামে বিক্রি করেছে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, কোরবানির ঈদ ছাড়া অন্যান্য সময়ে মাংসের যে চাহিদা তার বেশির ভাগই পূরণ হচ্ছে ভারতীয় গরুর মাধ্যমে। তবে ভারতে জাতীয় নির্বাচন চলছে বলে সীমান্তে বেশ কড়াকড়ি চলছে, যে কারণে খুব একটা গরু আসছে না। ফলে এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে, যে কারণে গত তিন মাসে দামটা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এ ছাড়া ভারতীয় গরুর জন্য সীমান্তের দুই পাশের চক্রকে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। এর ওপর রাস্তায়, গরুর হাটের চাঁদাবাজির কারণে মাংসের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে তারা। এসব জায়গায় চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে গেলে তিন শ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করা সম্ভব।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চারটি দল বিভিন্ন মাংসের বাজারে অভিযান চালিয়েছে। এ সময় কিছু কিছু স্থানে নির্ধারিত দাম না মানার কারণে ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করা হয়।

রাজধানীর কলাবাগান, শুক্রাবাদ, ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর, খিলগাঁও, রামপুরা, সেগুনবাগিচাসহ বিভিন্ন এলাকায় গরুর মাংস ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। মোহাম্মদপুর টাউনহল মার্কেট, হাতিরপুল, কাঁঠালবাগানসহ কিছু জায়গায় এবং সুপারশপগুলোতে বিক্রি হয়েছে ৫২৫ টাকা দরেই।

রামপুরা বাজার ও বাজারের কাছাকাছি প্রায় ১০টি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটিতেই গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৫৫০ টাকা কেজি দরে। ধানমণ্ডির বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়েছে ৫৫০-৫৮০ টাকা কেজি দরে। খিলগাঁওয়ের কয়েকটি দোকানেও একই দামে গরুর মাংস বিক্রি করা হয়েছে।

রামপুরার একটি মাংসের দোকান ইনসাফ মাংস বিতান। এই দোকানের বিক্রেতা ৫৫০ টাকা করে মাংস বিক্রি করছিলেন। একটি সাদা কাগজে এ দাম লিখে দোকানটিতে টানানো হয়েছে। ৫২৫ টাকা সরকার নির্ধারিত দাম হলেও কেন বাড়তি দামে বিক্রি করছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনাকে ব্যাখ্যা দিতে পারব না। মন চাইলে নেন, না চাইলে না নেন। তবে এইটুকু জেনে রাখেন, ৫৫০ টাকা বেইচাও লাভ হয় না।’

খিলগাঁওয়ের কালভার্ট বাজারের একটি দোকান রাজ্জাকের মাংসের দোকানে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ভাই, পোষানো যায় না। কী করুম। রোজায় সব কিছুর দামই একটু বাড়ে। আমরা কী দোষ করছি।’

ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডলের নেতৃত্বে খিলগাঁওয়ে অভিযান চালানো হয়। মূল্যতালিকা না টানানো এবং অতিরিক্ত দামে মাংস বিক্রি করায় আজগরের মাংসের দোকান, বুবুর মাংসের দোকান, রামপুরা এলাকার জামালেরর মাংসের দোকান ও চুন্নু মিয়ার মাংসের দোকানকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা জরিমানা করা হয়।

এ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিদিনই মাংসের দোকানে আমাদের অভিযান চলবে। যারাই আইন মানবে না তারাই শাস্তির আওতায় আসবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন মাসে গরুর মাংসের দাম ৪৫০ থেকে বেড়ে ৫৫০ টাকায় উঠেছে। অর্থাৎ অস্বাভাবিকভাবে ১০০ টাকা বা তারও বেশি পরিমাণে বেড়েছে। ৫৫০ টাকা থেকে ২৫ টাকা কমিয়ে রোজায় ৫২৫ টাকা কেজিতে দর ঠিক করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন। অর্থাৎ বাড়তি দামের চেয়ে ২৫ টাকা কমালেও ৭৫ টাকা বেশিই থাকল, কিন্তু তাতেও লাভ হয় না বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করছে।

মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকটি চক্র চাঁদাবাজি করছে, যা এখন অসহনীয় পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। চাঁদা দিতে গিয়ে নিজেদের লাভ ঠিক রাখতে ব্যবসায়ীরা পকেট কাটছে ভোক্তাদের।

ব্যবসায়ীদের দাবি, কোরবানির ঈদ ছাড়া অন্যান্য সময়ে মাংসের যে চাহিদা তার বেশির ভাগই পূরণ হচ্ছে ভারতীয় গরুর মাধ্যমে। তবে ভারতে জাতীয় নির্বাচন চলছে বলে সীমান্তে বেশ কড়াকড়ি চলছে, যে কারণে খুব একটা গরু আসছে না। ফলে এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে, যে কারণে গত তিন মাসে দামটা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এ ছাড়া ভারতীয় গরুর জন্য সীমান্তের দুই পাশের চক্রকে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। এর ওপর রাস্তায়, গরুর হাটের চাঁদাবাজির কারণে মাংসের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে তারা। এসব জায়গায় চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে গেলে তিন শ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করা সম্ভব।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল ইসলাম বলেন, ‘চাঁদাবাজি বন্ধে আমরা সরকারের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি দুই বছরের বেশি সময় ধরে। আমরা ধর্মঘটও করেছি। কিন্তু সরকার আমাদের সঙ্গে মিটিং করার সময়টা দেয় নাই। আমরা কার কাছে যাব? এখনো আমরা সরকারের সঙ্গে বসে এর সমাধান করতে চাই।’

গরুর হাটে চাঁদাবাজির সমস্যা সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হাটের ইজারা দেওয়া আছে, তারাই এটার ব্যবস্থাপনায় রয়েছে। তবে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ আমরা আগেও পেয়েছি। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের (রসিদ) অভাবে এগুলো প্রমাণ করা যায় না। তবে কেউ যদি উপযুক্ত প্রমাণসহ আমাদের কাছে অভিযোগ করে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।’

Print Friendly, PDF & Email