হুমকির মুখে সার্কের অস্তিত্ব

file-7নিউজ ডেস্ক:  বাংলাদেশ ও ভারতসহ মোট চারটি সদস্য দেশ যোগ দিতে অসম্মতি জানানোয় স্থগিত হয়ে গেলো নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় ১৯তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন। এর ফলে আবারও এক গভীর খাদে পড়লো দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা-সার্ক। এর মাধ্যমে সংস্থাটি বিলীনের পথেই এগুচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

আগামী ০৯ ও ১০ নভেম্বর এবারের সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে সার্কের নিয়ম অনুযায়ী, যেকোনো একটি সদস্য দেশ অংশ না নিলে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় না। ফলে এবারের সম্মেলন বাতিল হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটাই শুধু বাকি রয়েছে।

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সেনা সদর দফতরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের টানাপড়েনের জেরে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকেই দায়ী করে আসছে নয়াদিল্লি।

এর আগে, বাংলাদেশও পাকিস্তানে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায়। একই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে অন্য দুই সদস্যদেশ আফগানিস্তান ও ভুটান।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কূটনীতিক বলেন, এবারের সার্ক সম্মেলন বাতিল হওয়া অত্যন্ত হতাশার। ইসলামাবাদের শীর্ষ সম্মেলন থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আশা করা হচ্ছিল। যা দক্ষিণ এশিয়াকে একসূত্রে গাঁথার লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতো। বলা যায়, সার্ক অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে গেলো।

আভ্যন্তরীণ ব্যস্ততার কারণে বাংলাদেশ আসছে সার্ক সম্মেলনে যোগ দিতে পারবে না বলে সার্ক সেক্রেটারিয়েট ও সংস্থার বর্তমান সভাপতিকে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্য, জালনোট বহন ও জঙ্গি সম্পৃক্ততার কারণে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে তিনজন পাকিস্তানি কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে৷

সর্বশেষ জঙ্গি সম্পৃক্ততার দায়ে পাক কূটনীতিক ফারিনা এরশাদকে বহিষ্কার করলে পাল্টা এক বাংলাদেশি কূটনীতিককে বহিষ্কার করে পাকিস্তান। এসব নিয়ে সম্পর্কের জটিলতা এখনও কাটেনি। ফলে বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকও।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের জন্মদিনে হঠাৎ উপস্থিত হয়ে সারপ্রাইজ, কূটনীতির মাধ্যমে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক সহজীকরণের চেষ্টা করলেও- গত কিছুদিন ধরে দু’দেশের মধ্যে আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে কাশ্মীর ইস্যু। যা নিয়ে দেশদু’টিতে রীতিমত যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এমন অবস্থায় পাকিস্তানে গিয়ে সার্ক যোগ না দেওয়ার কথা জানালো ভারত।

বাংলাদেশ ও ভারতের মতো আফগানিস্তান ও ভুটানও ওই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে না বলে ঘোষণা দেওয়ায়, এ পর্যন্ত সার্কের আট সদস্যের চারটি দেশই পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলনে যোগ দিতে অসম্মতি জানালো। সার্কের অন্য সদস্য দেশগুলো হচ্ছে- নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ।

নেপালের সার্ক সেক্রেটারিয়েটের একটি সূত্র জানিয়েছে, সংস্থার অধিকাংশ সদস্য দেশ অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোয় সার্কের বর্তমান চেয়ারম্যান নেপালকে সম্মেলন স্থগিতের সিদ্ধান্তই নিতে হবে। এখন আনুষ্ঠানিক ঘোষণাই শুধু বাকি।

এর আগেও দু’দেশের মধ্যে কার্গিল যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সার্ক শীর্ষ বৈঠক স্থগিত রাখতে হয়েছিল। যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে একসূত্রে গাঁথার লক্ষ্যকে পূরণ হতে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৮৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার এ জোটটি গঠিত হয়।

বিশ্লেষকেদের মতে, শুরু থেকেই মূলত ভারত-পাকিস্তানের বৈরীতার কারণেই কার্যত সক্রিয় হতে পারেনি সার্ক। তবুও সব বৈরীতা কাটিয়ে মন্থর গতিতে হলেও যতোটুকু এগিয়ে চলছিল, এবার সেটিও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো। যা সংস্থাটিকে বিলীন করতে পারে।

তবে দ্বিপাক্ষিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে সার্কের মতো প্লাটফর্মকে প্রভাবিত করা ঠিক হবে না বলে মত দিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছিল। তবে হঠাৎ করেই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। শুরু থেকেই যেমন ভারত-পাকিস্তানের কারণে যেমন সার্ক অচল হয়ে আছে, এবারের সম্মেলন বাতিল হওয়াটাও তার সর্বসাম্প্রতিকতম উদাহরণ।

তার মতে, এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য সার্ক অন্যতম প্লাটফর্ম।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যদি বৈরী থেকেও থাকে, এর শিকার সার্ক হওয়াটা ঠিক হবে না। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে সার্ক অন্যতম প্লাটফর্ম। সম্পর্কে উত্থান-পতন, চড়াই-উতরাই হতেই পারে। তবে সার্ককে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email