আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, গণমাধ্যম আছে চাপে : মার্কিন রিপোর্ট
নিউজ ডেস্কঃ বাংলাদেশের সংবিধানে একটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলেও বাস্তবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কাছেই বেশির ভাগ ক্ষমতা। বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর প্রকাশিত ২০১৮ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে এমন মূল্যায়ন স্থান পেয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগ গত ডিসেম্বর মাসে অকল্পনীয় একপেশে সংসদীয় নির্বাচনের মাধ্যমে পাঁচ বছর মেয়াদে টানা তৃতীয়বার নির্বাচিত হয়েছেন। ওই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হিসেবে বিবেচিত হয়নি। বিরোধী পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, জাল ভোট প্রদানসহ অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ’
নির্বাচনের আগে প্রচারণার সময় হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার ও সহিংসতার কারণে বিরোধী অনেক প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের মিছিল-সমাবেশ ও স্বাধীনভাবে প্রচারণা চালানো কঠিন হয়ে পড়ার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে বলেও যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র আরো বলেছে, আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের তাদের পর্যবেক্ষণ মিশন পরিচালনার মতো প্রয়োজনীয় সময়সীমার মধ্যে বাংলাদেশ ‘অ্যাক্রেডিটেশন’ (অনুমতিপত্র) ও ভিসা দেয়নি। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের ২২টি এনজিওর মধ্যে মাত্র সাতটিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
অতীতের মতো এবারও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ওপর বেসামরিক কর্তৃপক্ষগুলোর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ আছে। প্রতিবেদনের সারমর্ম অংশে বলেছে, ‘বেআইনি বা বিনা বিচারে হত্যা, গুম, নির্যাতন, সরকার বা তার পক্ষে বেআইনি বা পরোয়ানা ছাড়া আটক, কঠোর ও জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ কারাগার পরিস্থিতি, রাজনৈতিক বন্দি, ব্যক্তিগত বিষয়ে বেআইনি হস্তক্ষেপ, সেন্সরশিপ, সাইট ব্লক ও আপত্তিকর বিবৃতি এবং এনজিওগুলোর কর্মকাণ্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ, শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হওয়া ও সংগঠন করার অধিকারের ওপর উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হস্তক্ষেপ, স্বাধীনভাবে চলাফেরার ওপর উল্লেখযোগ্য বিধিনিষেধ, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার ওপর বিধিনিষেধ, অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রকৃত নির্বাচন না হওয়া, দুর্নীতি, মানবপাচার, সমকামীদের (লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার, ইন্টারসেক্স, সংক্ষেপে এলজিবিটিআই) ওপর সহিংসতা, সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা, স্বতন্ত্র শ্রমিক সংগঠনগুলোর ও শ্রমিকদের অধিকারের ওপর বিধিনিষেধ ও ভয়ংকর মাত্রায় শিশুশ্রম বাংলাদেশে মানবাধিকার ইস্যুগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়ের করা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, আরো অনেক বিরোধী রাজনীতিকের নামে মামলা রয়েছে। নির্বাচনের আগে পুলিশ প্রায় চার লাখ ৩৫ হাজার বিএনপি সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে অন্তত ৮৬টি মামলা আছে। মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা এসব মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিবেদনে বলেছে, সরকারের সমালোচনাকারী গণমাধ্যমগুলো নেতিবাচক চাপের শিকার হয়েছে। তারা বিজ্ঞাপন হারিয়েছে। এ কারণে অনেকে স্বেচ্ছায় সেন্সরশিপ করেছে। সরকার টেলিভিশনগুলোর সম্পাদকীয় নীতিতে নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।