শিরোনাম :

  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

সরকারের চাপে ভারতে কার্যক্রম স্থগিত করলো অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

নিউজ ডেস্ক: 

ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের চাপ ও প্রতিহিংসার কারণে দেশটিতে কার্যক্রম পরিচালনা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি বলছে, ভারতে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত, কর্মীদের ছাঁটাই এবং সব ধরনের প্রচার ও গবেষণা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য করেছে সরকার। তবে এ অভিযোগের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ভারত। খবর: এনডিটিভি।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলছে, ভারতে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করার বিষয়টি তারা জানতে পারে গত ১০ সেপ্টেম্বর। দেশটির সরকারের এ পদক্ষেপের ফলে সেখানে অ্যামনেস্টির মানবাধিকার সংক্রান্ত সব প্রচার কাজ ও গবেষণা থমকে গেছে। অধিকাংশ কর্মীকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে অ্যামনেস্টি। 

এ সংস্থার ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জুলি ভেরার বলেন, ‘ভারত সরকারের এ ভয়ঙ্কর ও লজ্জাজনক পদক্ষেপের ফলে সেখানে মানবাধিকারবিষয়ক আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আপাতত থমকে গেছে। তবে ভারতে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমাদের অঙ্গীকার এবং সম্পৃক্ততার অবসান তাতে হয়নি। সামনের দিনগুলোতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কীভাবে ভারতের মানবাধিকার আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে পারে, তা আমরা খুঁজে বের করব।’

প্রতিবেদনে লিখেছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ভারতের ‘ফরেইন কন্ট্রিবিউশন অ্যাক্টের’ আওতায় নিবন্ধন নেয়নি- এ যুক্তিতে সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। ভারতে কোনো এনজিওর বিদেশি তহবিল নিতে গেলে ওই আইনে নিবন্ধিত হতে হয়। তবে অ্যামনেস্টি দাবি করেছে, ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক সব নিয়ম মেনেই তারা সেখানে কাজ করে আসছে। তিনি আরও লিখেছেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অলীক অভিযোগের ভিত্তিতে ভারত সরকার মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে যে ‘ডাইনি শিকারে’ নেমেছে, এটা তার সর্বশেষ উদাহরণ।’

অ্যামনেস্টি বলছে, গত ফেব্রুয়ারিতে দিল্লির দাঙ্গায় মানবাধিকার লঙ্ঘনে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল তাদের প্রতিবেদনে। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে দেওয়া নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছিল। তারই পাল্টায় ভারত সরকারের এসব পদেক্ষেপ। সংস্থাটি বলছে, গত দুই বছরে ভারতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে একের পর এক ব্যবস্থা এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করার এ পদক্ষেপ আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। দিল্লির দাঙ্গা এবং জম্মু ও কাশ্মীরে সরকারের ভূমিকায় স্বচ্ছতা দাবি করায় সরকার এবং সরকারি সংস্থাগুলোর ক্রমাগত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’ ভারতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক অবিনাশ কুমার বলেছেন, অবিচারের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হওয়া ছাড়া আর কিছুই তারা করেননি।

বিদেশি তহবিল নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগে অ্যামনেস্টির বিরুদ্ধে তদন্ত করছে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, অ্যামনেস্টি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকারে অর্থ নিয়েছে, যা ভারতীয় আইনে অলাভজনক কোনো প্রতিষ্ঠান নিতে পারে না।

এর আগেও ২০১৭ সালে একবার অ্যামনেস্টির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করেছিল ভারত সরকার। সে সময় আদালতে গিয়ে অ্যামনেস্টি কার্যক্রম চালানোর অনুমতি পেলেও তাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত বছর অ্যামনেস্টির বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো। সেই মামলায় বলা হয়েছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের যুক্তরাজ্য শাখা ভারত সরকারের অনুমতি না নিয়েই এফডিআই আকারে ১০ কোটি পাউন্ড তাদের ভারত শাখায় পাঠিয়েছে। এছাড়া আরও ২৬ কোটি পাউন্ড অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারত শাখায় পাঠানো হয়েছে যুক্তরাজ্য থেকে, সেখানেও ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।