শিরোনাম :

  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

সৌদি-ইরান সম্পর্কে নাটকীয় মোড়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ◾

ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের তিক্ত বিরোধ মেটাতে চান বলে ঘোষণা দিয়েছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)। সৌদি আরবের রাষ্ট্র পরিচালিত টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের সঙ্গে বিবাদের মীমাংসা করতে চায় রিয়াদ। এমবিএস বলেন, তিনি ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক কঠিন করে রাখতে চান না। দেশটির সঙ্গে ইতিবাচক ও সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চান। এ খবর দিয়েছে দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

সৌদি ক্রাউন প্রিন্স টিভির সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা আমাদের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক মিত্রদের সঙ্গে মিলে সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে কাজ করছি। দিনশেষে ইরান আমাদের একটি প্রতিবেশী দেশ। আমরা ইরানের সঙ্গে কেবল ভালো ও স্বতন্ত্র সম্পর্কই চাই।
এর আগে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সৌদি ও ইরানি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এ মাসে সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে আলোচনা করতে বাগদাদে গোপন বৈঠক করেছেন। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েকদিন পরই সৌদি ক্রাউন প্রিন্স ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করার ব্যাপারে ঘোষণা দিলেন।

উল্লেখ্য, পাঁচ বছর আগে সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল দেশ দু’ টি। ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের বিরোধ দীর্ঘদীনের। এমবিএস নামে পরিচিত সৌদি ক্রাউন প্রিন্স ব্যক্তিগতভাবেও ইরানের কঠোর সমালোচনা করে আসছেন। ইরান মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত সৃষ্টি ও সৌদি আরবকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনীকে তিনি অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গেও তুলনা করেছিলেন।
ওই সময় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে তার পূর্বসুরির করা আন্তর্জাতিক পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে, তাতে জোরালো সমর্থন জানিয়েছিলেন প্রিন্স মোহাম্মদ। চুক্তি থেকে সরে গিয়ে ট্রাম্প ইরানের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ইসলামি প্রজাতন্ত্রটির উপর ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপে সমর্থন জুগিয়েছিল সৌদি আরব। পরবর্তীতে, এমবিএসের বিরুদ্ধে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ উঠলেও, তার পাশে ছিলেন ট্রাম্প।

কিন্তু গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় আসেন জো বাইডেন। তিনি সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নতুন করে মূল্যায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। খাশোগি হত্যাসহ সৌদি আরবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া, ইরানের সঙ্গে পুনরায় সেই আন্তর্জাতিক পারমাণবিক চুক্তিতে যোগদান করে দেশটির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন। ইতিমধ্যেই অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে আলোচনাও শুরু হয়েছে ইরান ও পশ্চিমা বিশ্বের।

ওদিকে ইয়েমেনে ছয় বছর ধরে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। দেশটিতে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসছে সৌদি আরব। এদিকে, বাইডেন প্রশাসনের অবস্থানের সঙ্গে সৌদি আরবের খুব একটা দ্বিমত নেই বলে জানিয়েছেন এমবিএস। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ৯০ শতাংশ বিষেই বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে একমত সৌদি আরব।
এমবিএস জানান, কোনো দুই দেশ সকল বিষয়ে একমত হয় না। এমনকি পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ দেশগুলোর মধ্যেও শতভাগ মতৈক্য দেখা যায় না। সাধারণত কিছু পার্থক্য থাকেই। তার ভাষ্য, কিছুটা মতানৈক্য আপনি প্রত্যেক বাড়িতেই পাবেন, যেখানে ভাইয়েরা সবসময় সব বিষয়ে একমত হয় না।

বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর থেকে আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে রিয়াদ। তিন বছর ধরে কাতারের বিরুদ্ধে আরোপিত অবরোধ সরিয়ে নিয়েছে। বেশ কয়েকজন মানবাধিকার কর্মীকে মুক্ত করে দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আংশিকভাবে হলেও রিয়াদের এসব পদক্ষেপ ওয়াশিংটনের সঙ্গে এমবিএসের সম্পর্ক ভালো করার উদ্দেশ্যেই নেয়া হয়েছে।
২০১৯ সালে এক ড্রোন হামলার পর রিয়াদের অপরিশোধিত তেল উৎপাদন সাময়িকভাবে অর্ধেকে নেমে আসে। ওই হামলার দায় স্বীকার করেছিল ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব হামলাটির জন্য ইরানকেই দায়ী করে। গুঞ্জন রয়েছে, ওই হামলার পর থেকেই ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমনে আগ্রহী হয়ে ওঠে সৌদি আরব।