শিরোনাম :

  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪

বিরোধী কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যাপক দমন-পীড়ন চালাচ্ছেঃ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

নিউজ ডেস্ক ।।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম গিলমোরের সাথে একটি মিডিয়া ব্রিফিংয়ের সময় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি পূনর্ব্যক্ত করেন। অথচ কর্তৃপক্ষ একইসঙ্গে বিরোধী দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। ২ আগস্ট নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এতে বলা হয়, গত ২৯ জুলাইর বড় বিক্ষোভের পূর্বে  কর্তৃপক্ষ প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি’র আট শতাধিক নেতা ও কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোরের বাংলাদেশ সফরের সময়ও কর্তৃপক্ষের এমন আচরণ অব্যাহত ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করা যে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে তারা ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করবে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক ডেপুটি ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, রাজনৈতিক বিরোধীদের উপর এমন নৃশংস দমন-পীড়নকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উচিৎ একটি উদ্বেগজনক ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা। বাংলাদেশে নির্বাচন গণতান্ত্রিক হবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অঙ্গীকার করছে। অথচ তারা স্বৈরাচারী এবং নিন্দনীয়ভাবে বিরোধীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে, যা স্পষ্টভাবে সেই অঙ্গীকার লঙ্ঘন করেছে।

বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন যে, বিক্ষোভে তাদের অন্তত শতাধিক সমর্থক আহত হয়েছেন। পুলিশ এবং বিরোধী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র লোকদের লাথি দিচ্ছে ও পেটাচ্ছে। যদিও পুলিশের মতে, বিরোধী বিক্ষোভকারীদের হামলায় পুলিশের অন্তত ৩২ জন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।

পুলিশ বলেছে যে, তারা ২৯ জুলাই সমাবেশের জন্য বিএনপিকে অনুমতি দেয়নি। ২৯ জুলাই বিএনপির সমাবেশের আগের সপ্তাহগুলোতে কর্তৃপক্ষ ১৫০০ জনেরও বেশি বিরোধী নেতা-কর্মী এবং ১৫,০০০ অজ্ঞাতনামা লোকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। এভাবে বিপুল সংখ্যক অজ্ঞাত লোকের বিরুদ্ধে হেনস্থামূলক মামলা দায়ের করা বাংলাদেশে বেশ সাধারণ একটি ঘটনা।

বিএনপির অভিযোগ, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ১২ জুন পর্যন্ত তাদের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে ৪০ লাখের বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিরোধী নেতাদের দাবি, জুলাইয়ের পরিকল্পিত সমাবেশের আগেই তাদের বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তার শুরু হয়। মিডিয়া জানিয়েছে যে, কর্তৃপক্ষ শহরে প্রবেশ করা সাধারণ মানুষের ফোন চেক করেছে এবং সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজে ভাঙচুরের অভিযোগে গত ১৮ জুলাই বিএনপির ১০৯ নেতাকর্মী ও অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তবে শফিকুল ইসলাম সুমন ও আবদুল জব্বার হাওলাদার নামে দুই আসামি ওই ঘটনার কয়েক মাস আগেই মারা যান। মামলা দায়েরকারী কলেজের স্টাফ সদস্য মিডিয়াকে বলেছেন যে, তিনি কেবল ভাঙচুরের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন, তবে তিনি কারও নাম উল্লেখ করেনি। নাম সব পুলিশই দিয়েছে।

ইইউ’র বিশেষ প্রতিনিধি গিলমোর ঢাকা সফরকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যখনই আমরা কোনো নির্বাচনের দিকে তাকাই, সেক্ষেত্রে আমরা শুধু ভোটের দিন কী হয় তাই দেখি না। নির্বাচনের পূর্ববর্তী পরিবেশ, রাজনৈতিক দলগুলোর পরিস্থিতি, রাজনৈতিক বিতর্ক, মিডিয়া এবং নির্বাচন আয়োজনের জন্য কী কী ব্যবস্থা রয়েছে তাও আমরা দেখছি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম গিলমোরের সাথে একটি মিডিয়া ব্রিফিংয়ের সময় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি পূনর্ব্যক্ত করেন। অথচ কর্তৃপক্ষ একইসঙ্গে বিরোধী দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। সংগঠনটি আরও বলে, ইইউ সহ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়া উচিত যে ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে সরকার যদি গুরুতর ‘নিপীড়ন’ মোকাবেলায় দৃঢ় এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয় তাহলে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাণিজ্য সুবিধা এবং অন্যান্য সহযোগিতার উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পরবে।