ব্লগার রাজীব হত্যার রায় আজ

Rajibনিজস্ব প্রতিবেদকঃ শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা এবং ব্লগার রাজীব হায়দার শোভন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ বৃহস্পতিবার। ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহম্মেদ দুপুরে এই রায় ঘোষণা করবেন।

গত সোমবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ৩-এর বিচারক সাঈদ আহম্মেদ এ দিন ধার্য করেন। এ দিন আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে বিচারক রায়ের দিন নির্ধারণ করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছর ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ছয়জন ব্লগার হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ব্লগার রাজীব হত্যার মামলায় প্রথম রায়। মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ৫৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। যাঁদের মধ্যে রাজীবের বাবা ও তাঁর ছোট ভাই রয়েছেন।

এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) মাহবুবুর রহমানের সহকারী আইনজীবী ফয়সাল ভূঁইয়া অনি জানিয়েছিলেন, আগামী বৃহস্পতিবার আলোচিত এ মামলাটির রায় হতে যাচ্ছে। আসামি সবাইকে আজ আদালতে হাজির করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের  ফাঁসি দেওয়ার আবেদন জানানো হয়।

অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি তাই হত্যার দায় থেকে আসামিরা খালাস পাবেন বলে আশা করছি আমরা।’ শুধু তাই নয়, ঘটনার আগে আসামিরা একে অপরকে চিনতেনও না বলে দাবি করেন।

এর আগে চলতি বছর ১৮ মার্চ আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের প্রধান শায়খুল হাদিস মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীসহ আটজনকে অভিযুক্ত করে চার্জ গঠন করেন আদালত ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন। ওই আদালত থেকে গত ১১ মে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আদেশে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ওই ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ মে ধারা সংশোধন করে পুনরায় চার্জ গঠন করেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ।

মামলার আসামিরা হলেন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের প্রধান শায়খুল হাদিস মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল বিন নাইম ওরফে দ্বীপ (২২), মাকসুদুল হাসান অনিক (২৬), এহসানুর রেজা রুম্মান (২৩), মো. নাঈম সিকদার ওরফে ইরাদ (১৯), নাফির ইমতিয়াজ (২২), সাদমান ইয়াছির মাহমুদ (২০) ও রেদোয়ানুল আজাদ রানা (৩০)। আসামিদের মধ্যে রানা পলাতক। অপর আসামিরা কারাগারে আটক রয়েছেন।

এর আগে গত বছর ১৪ অক্টোবর মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেন মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন। ওই অভিযোগপত্রে জানানো হয়েছে, আটক আসামিরা আদালতে রাজীব হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে শুধু মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানী স্বীকারোক্তিতে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার না করলেও অপর স্বীকারোক্তিকারী আসামিরা রাজীবকে হত্যার জন্য রাহমানী নির্দেশ দিয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন।

তবে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের ‘প্রধান’ মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানী লিখিত ও মৌখিক বক্তব্যে বলেন, তাকে এ মামলায় আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের প্রধান হিসেবে দেখানো হয়েছে। আনসারুল্লাহ বাংলাটিম নামে কোনো দল আছে কি না তা তিনি জানেন না।

এ ছাড়া মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানী বলেন, ‘চরমোনাই পীরের দলে যোগ না দেওয়ায় তাদের সঙ্গে আমার দ্বন্ধ ছিল। তারা শত্রুতা করে আমাকে ধরিয়ে দেন।’

মামলার আরেক আসামি এহসান রেজা রুম্মান বলেন, ‘নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির একটি মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে বলে আমাকে ডিবি পরিচয় দিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। আমি ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়।’

অপর আসামি নাফির ইমতিয়াজ বলেন, ‘নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে পরীক্ষা দিয়ে বাসায় যাওয়ার সময় দুই ব্যক্তি আমাকে সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। তারা আমাকে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আর মামলার অপর আসামিদের আমি চিনি না।’
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হওয়ার কিছুদিন পরই অর্থাৎ ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পল্লবী এলাকায় ব্লগার রাজীবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা ডা. নাজিম উদ্দীন পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ব্লগার রাজীবের পুরো নাম আহমেদ রাজীব হায়দার। তিনি পেশায় স্থপতি ছিলেন। তিনি ‘থাবাবাবা’ নামে ব্লগ লিখতেন।

Print Friendly, PDF & Email