দিল্লিতে ভিন্ন সুর

দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বলেছেন, ‘চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা যখনই দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হবেন, তখনই নিতে পারবেন। এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত। তিনি যদি কাল সকালে আবার দায়িত্ব নিতে চান আমার ধারণা, তাতে কোনও সমস্যা হবে না।’

সোমবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় দিল্লির ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হাইকমিশনার এসব কথা বলেন।

এর আগে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, প্রধান বিচারপতি আবার দায়িত্ব নেবেন, সেই সম্ভাবনা ‘সুদূর পরাহত’। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আপিল বেঞ্চের পাঁচজন বিচারপতি যেখানে তার সঙ্গে এক বেঞ্চে বসতে রাজি নন, সেখানে তার দায়িত্বে ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

তবে হাইকমিশনার মোয়াজ্জেম আলী ভিন্ন সুরেই কথা বললেন। তিনি বোঝাতে চাইলেন, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ প্রধান বিচারপতিকে তার পদ থেকে হটিয়ে দিয়েছে— বিষয়টা আসলে এমন নয়।

বাংলাদেশি হাইকমিশনারের কাছে প্রধান বিচারপতি সিনহার বিষয়ে প্রশ্ন করেছিল ওয়াইওন নিউজ। জি নিউজ নেটওয়ার্কের এই টিভি চ্যানেলটি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে বিতর্কের খবর ফলাও করে প্রচার করছে।

জবাবে মোয়াজ্জেম আলী প্রথমে রসিকতা করেন। তিনি বলেন, ‘একজন সিভিল সার্ভেন্ট হিসেবে আমি দুটো জিনিস সব সময় এড়িয়ে চলি। এক, নিজের শ্বশুরবাড়ি নিয়ে কখনও প্রকাশ্যে কথা বলি না। কারণ তাতে আমার বাড়ির দরজা আমার জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে। দুই, আদালত বা বিচারপতিদের নিয়ে কোনও মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকি। কারণ কী বলতে কী বলবো, আর আদালত অবমাননার দায়ে ছয় মাস কোর্টে চরকির মতো ঘুরতে হবে। এটা আমি ভয় পাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি দেশের রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিতভাবে ছুটির আবেদন করেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন অসুস্থতায় ভুগছেন। আগে থেকেই তিনি ক্যান্সারে ভুগছেন, কাজেই তিনি অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে চিকিৎসা করাতে চান। এজন্য লম্বা ছুটি প্রয়োজন। স্বভাবতই রাষ্ট্রপতি তা মঞ্জুরও করেছেন। এখন যদি তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন কিংবা পুরোপুরি সুস্থ না হয়েও কাজে যোগ দিতে চান, তবে তিনি আবার কাজে যোগ দেবেন। এই তো ব্যাপার।’

হাইকমিশনার বলেন, ‘ঘটনাচক্রে প্রধান বিচারপতি আমার নিজের জেলা মৌলভীবাজারেরই মানুষ। আমাদের জেলায় ২৬ হাজার মণিপুরীর বসবাস। তিনি তাদেরই একজন। বিচারপতি সিনহাকে আমি খুব ঘনিষ্ঠভাবে চিনি। প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন তিনি অন্তত দু’বার দিল্লিতেও এসেছেন। এটাও জানি, বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি নিজের অসুস্থতার কথা বলছিলেন। তবে হ্যাঁ, সরকারের সঙ্গে কোনও কোনও বিষয় নিয়ে সম্প্রতি তার সংঘাত হয়েছে, এটা সত্যি। কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না। কাল সকালে প্রধান বিচারপতি যদি ফিরে এসে আবার দায়িত্ব নিতে চান, আমি নিশ্চিত, আদালত তাকে আবার গ্রহণ করে নেবে। তিনি নির্দিষ্ট কয়েকটা দিনের জন্য ছুটির আবেদন করেছেন। ছুটি শেষে ফিরে তিনি যেকোনও সময়ই আবার যোগ দিতে পারেন।’

তবে পর্যবেক্ষকদের ধারণা, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছুটিতে যাওয়ার ঘটনাকে ভারতে কোনও কোনও সংবাদমাধ্যম যেভাবে ‘বাংলাদেশের প্রথম হিন্দু প্রধান বিচারপতির হেনস্তা’ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে, তার জবাব দিতেই রাষ্ট্রদূত এভাবে গোটা ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

হাইকমিশনার আরও বলেন, ‘এই সমস্যার সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কোনও যোগ নেই। ইনশাল্লাহ, প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে সমস্যা আমরা ঠিকই মিটিয়ে ফেলবো। কিন্তু বাংলাদেশে আসা সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমস্যা কিভাবে মেটানো যায়, সেটাই আসলে এখন আমাদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা

Print Friendly, PDF & Email