আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
রাজধানীতে প্রতিদিন সংসার ভাঙছে ২৮টি: নারীরা তালাক চাইছে বেশি
নিজস্ব প্রতিবেদক: পারিবারিক বন্ধন এখন খুবই ঠুনকো পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। ঘর-সংসার যেন বালির ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ছে। শুধু রাজধানী ঢাকার গত ৬ মাসের হিসাব বলছে, প্রতিদিন গড়ে ২৮টি তালাকের আবেদন জমা পড়ছে দুই সিটি করপোরেশন অফিসে। অর্থ্যাৎ প্রতি ৫০ মিনিটে একটি সংসার ভাঙছে। সারা দেশের চিত্রও এর চেয়ে কম ভয়াবহ নয়। লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, তালাক বা বিচ্ছেদের এই আবেদন পুরুষের চেয়ে নারীরা করছেন বেশি। এই বেশির মাত্রা ঢাকার কোনো কোনো এলাকায় দ্বিগুণ-তিন গুণ পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এক-দুটো অঞ্চলে ছাড়া বাকি অঞ্চলগুলোর তালাকের সংখ্যা শুনলে চোখ কপালে উঠতে পারে যে কারোরই। সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত তালাকের আবেদন জমা পড়েছে মোট ৪৫৫৭ টি। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সিটি কর্পোরেশনে আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দেওয়া ছাড়াও ঘর ভাঙার ঘটনার সংখ্যা কম নয়। বিভিন্ন মাদরাসার ফতোয়া বিভাগে আগত আবেদন ও জিজ্ঞাসার নথি সমন্বয় করলে এ সংখ্যা দ্বিগুণের চেয়েও বেশি দাঁড়াতে পারে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পাঁচটি অঞ্চলে তালাকের আবেদন এসেছে ২৩১৫ টি। এর মধ্যে অঞ্চল-১ এ তালাকের আবেদনকারীর সংখ্যা ২৮৩ (নারী ১৫৫, পুরুষ ১২৮ জন), অঞ্চল-২ এ ৫০০ (নারী ৩৭২, পুরুষ ১৭৭ জন), অঞ্চল-৩ এ ৫২৩ (নারী ৩৪৩, পুরুষ ১৮০ জন), অঞ্চল-৪ এ ৩৭৭ (নারী ২৭৯, পুরুষ, ৯৪), অঞ্চল-৫ এ ৬৩২ (নারী ৫০৭, পুরুষ ১২৫)।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ঘর ভাঙার আবেদন করেছেন ২২৪২ জন। এর মধ্যে অঞ্চল-১ এ তালাকের আবেদনকারীর সংখ্যা ২৫০ (নারী ১৫২, পুরুষ ৫৮ জন), অঞ্চল-২ এ ৫৮৪ (নারী ৪০০, পুরুষ ১৮৪ জন), অঞ্চল-৩ এ ৪৮৯ (নারী ৩৮৮, পুরুষ ১০১ জন), অঞ্চল-৪ এ ১৫৭ (নারী ১১১, পুরুষ, ৪৪), অঞ্চল-৫ এ ৭৬২ (নারী ৫৭২, পুরুষ ১৯০)।
পরিসংখ্যান মতে, গেল ৬ মাস অর্থাৎ ১৮০ দিনে ৪ হাজার ৫৫৭টি তালাকের আবেদন হলে একদিনে আবেদন হয়েছে ২৬টি তালাকের। অর্থাৎ প্রতি ৫৫ মিনিটে একটি সংসার ভাঙার আবেদন করছেন রাজধানীর মানুষ।
শেষ ৬ বছরের একটি জরিপে দেখা যায়, প্রতি ১ ঘণ্টায় একটি ঘর ভাঙার আবেদন জমা পড়েছে দুই সিটি কর্পোরেশনে। এ হিসেবে শেষ ছয় বছরে তালাকে আবেদনের মোট সংখ্যা অর্ধলাখেরও বেশি!
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে তালাকের প্রবণতা বেড়েছে ৭৫ শতাংশ, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বেড়েছে ১৬ শতাংশ। জরিপ মতে, তালাকের আবেদনের পর ৫ শতাংশেরও কম দম্পতি নিজেদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে থাকেন।
তবে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, প্রতিদিন ঠিক কতটি তালাক হচ্ছে তার সঠিক হিসাব বলা মুশকিল। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, তালাকের আবেদনের পদ্ধতি খুবই সেকেলে ধরনের।
সেকেলে পদ্ধতিতে সঠিক পরিসংখ্যান ওঠে আসবে কীভাবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল-৪ এর নির্বাহী কর্মকর্তা উদয় দেওয়ান বলেন, তালাকের আবেদনের ক্ষেত্রে এখনও সেকেলে পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।
কেউ তালাকের আবেদন করার পর ডাক যোগে তাকে চিঠি পাঠানো হয়। অনেকেই ভুল ঠিকানা দেয়। মোবাইল নম্বর দেয় না। ফলে চিঠি বিলি করা সম্ভব হয় না। এতে করে তালাকের সঠিক সংখ্যা মেলানো মুশকিল হয়ে পড়ে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী কর্মকর্তা সালেহা বিন্তে সিরাজ বলেন, ঘর ভাঙতে মানুষ এত মরিয়া হয়ে ওঠছে, এটা সত্যিই একটি দেশ ও সমাজের জন্য চিন্তার বড় কারণ।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদনে নারীরা এগিয়ে আছে। বিচ্ছেদের প্রধান কারণ দেখানো হয় মনোমালিন্য। আসলে মনোমালিন্য তো একটি ব্যাপক বিষয়। এখন ছোট-খাটো বিষয়ে মন না মিললে তো আপনি ডিভোর্স চাইতে পারেন না।
স্বামীর পরকীয়া, মাদকাসক্তি এসব গুরুতর কারণে যেমন তালাক হয়, আবার স্ত্রীর নানা দোষ দেখিয়েও স্বামীরা তালাক চায়। তবে এটা মনে রাখা উচিত, তালাক কোনোভাবেই সমাধানের পথ নয়। এতে করে সন্তানরা ভুগে বেশি। লাগামহীন তালাককে লাগামের মধ্যে আনা জরুরি।