শিরোনাম :

  • শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫

খোকন কি মরণোত্তর জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য পদ ফিরে পাবেন?

এম আবদুল্লাহ ♦

এটা সম্ভবত আমাদের জাতিগত সমস্যা। আমরা জীবিত মানুষের গুণের কদর করিনা। স্বীকৃতি দিতে ভয়ানকভাবে কৃপন। স্বীকৃতি, মূল্যায়ন দূরে থাক, ন্যায্য প্রাপ্য দেইনা, পেলেও কেড়ে নেই অসভ্যের মত। জীবদ্দশায় যাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করি, মরলে তার জন্য কুম্ভিরাশ্রু ঝরাই। মাতম করি। শোকের সাগরে ভাসি, ভাসাই।

করোনার ছোবলে প্রথম কোন সাংবাদিকের মৃত্যু ঘিরে অশ্রুর বন্যা দেখে আমাদের এই চরিত্রটি নতুন করে সামনে এসেছে। হুমায়ুন কবির খোকনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে মঙ্গলবার রাতে। সর্বশেষ তিনি কাজ করছিলেন নতুন প্রজন্মের কাগজ সময়ের আলোতে। সময়ের আলো কর্তৃপক্ষের দায়িত্বঞ্জানহীন আচরণ তাঁকে মৃত্যু মুখে ঠেলে দিয়েছে কিনা সে প্রশ্ন উঠেছে জোরেশোরে। এর আগে খোকন দৈনিক আমাদের সময়, আমাদের অর্থনীতি, বাংলা বাজার পত্রিকা, মাতৃভূমিসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কাজ করেছেন সুনাম ও কৃতিত্বের সাথে। তবে পেশাদার হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড দৈনিক মানবজমিন থেকে। দৃশ্যতঃ সে সুযোগ করে দিয়েছিলেন পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। কিন্তু নেপথ্যে ছিলেন অন্যজন। মানবজমিনে মূলধারার সাংবাদিকতায় যুক্ত হতে তাঁকে যে লোকটি সুযোগ করে দিয়েছেন তার রাজনৈতিক মতাদর্শই খোকনের জন্য কাল হয়ে উঠেছিল। খোকন পরিচিত পান তাঁর লোক হিসেবে। বহু সাংবাদিকের কর্মসংস্থান করে নন্দিত সেই সাংবাদিক নেতার নামটি পরে লিখছি। ‘তাঁর লোক’ হওয়ার কারণে একজন সাচ্চা পেশাদার সাংবাদিক হয়েও খোকনকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য পদ হারাতে হয়েছে জাতীয়তাবাদী ট্যাগ নিয়ে। ক্লাবের নির্বাচিত কমিটি গঠনতান্ত্রিক বিধিবিধান প্রতিপালন করে তাঁকে ন্যায্যভাবে সদস্যপদ দিয়েছিল। কিন্তু খোকন জাতীয়তাবাদী ধারার সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য এবং ওই ধারার সাংবাদিক নেতার ঘনিষ্ঠ এই অপরাধে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তাঁরসহ ৪০ জনের সদস্য পদ এক কালো নোটিশে বাতিল করে দেয় ক্লাবের তৎকালীন দখলদার অবৈধ কমিটি। ক্লাব সদস্য পদ হারিয়ে খোকন ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু পেশায় দেউলিয়া হয়ে যাননি। যোগ্যতা, নিষ্ঠা, বিনয়, সহকর্মীদের সঙ্গে অমায়িক ব্যবহার, সুখে দুঃখে পাশে দাঁড়ানোর অদম্য প্রচেষ্টাসহ সব ইতিবাচক গুণ ছিল তার মধ্যে।

মজার ব্যাপার হলো, খোকনের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর পর যারা ফেসবুকে তাঁকে ঘনিষ্ঠ, আপাদমস্তক পেশাদার, পরোপকারী ইত্যাদি অভিধা দিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন, অশ্রু বিসর্জনে খোকনের আদর্শিক মিত্রদের ছাড়িয়ে যাচ্ছেন তাদের অনেকেই প্রেস ক্লাবের সদস্য পদ বাতিলের সময় কমিটিতে ছিলেন, অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। এমনকি অন্যায়ভাবে বাতিল হওয়া সদস্য পদ পূনর্বহালের জন্য আমরা গত কয়েকটি বছর যাদের কাছে ধর্ণা দিতে দিতে ক্লান্ত ও বিফল হয়েছি, খোকনের জন্য তাদের অশ্রুপাতেও কমতি দেখেছি না। খোকনের মত আরও অনেক পেশাদার ও গুণী সাংবাদিক জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য পরিচয় ছাড়াই আামাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বা যাবেন, তাতে তাদের তেমন কিইবা ক্ষতি? কিন্তু নোংরা ও হীন মানসিকতার কারণে আমরা যারা খোকনদের সম্মান কেড়ে নেই, লাঞ্ছিত ও অপমানিত করি, তাদের বিবেক কি দংশন করে? শওকত মাহমুদদের হাত ধরে পেশায় আসা বা তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার অপরাধ (!) মরার পরে নিমিষেই গুণে পরিবর্তিত হয়ে যায়? না-কি সবই মেকি? ছলনা? তা না হলে খোকন কি মরণোত্তর জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য পদ ফিরে পাবেন? দিন না খোকনসহ অন্যায়ভাবে বাতিল করা পেশাদার সাংবাদিকদের সদস্য পদ। অন্তত নিজেদের পাপ ও শাপ মোছনের জন্য।

  • এম আবদুল্লাহ
    মহাসচিব, বিএফইউজে, সম্পাদক, দেশনিউজ.নেট, ৩০.০৪.২০২০, সকাল ১০টা
  • মুহাম্মদ আবদুল্লাহ ফেসবুক টাইমলাইন থেকে