আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
দেশনিউজ ডেস্ক ।।
বাংলাদেশের পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইস্তফা দিয়ে দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে তিনি ভারতের ঠিক কোন জায়গায় অবস্থান করছেন, অথবা তিনি সেখানে থাকবেন না তৃতীয় কোনো দেশে যাবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। কিন্তু ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সহায়তায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা ভারতের পরীক্ষিত বন্ধু। টানা প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। তাই শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ও দেশত্যাগ ভারতের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশের পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রীর দেশত্যাগ ২০২১ সালের আফগানিস্তান পরিস্থিতি ও ২০২২ সালের শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনীয়। তখন গণ-আন্দোলনের মুখে আফগানিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ও শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশত্যাগ করেছিলেন। তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিভিন্ন কারণে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
শেখ হাসির দেশত্যাগ বাংলাদেশ, ভারত ও বিশ্বের জন্য কী অর্থ বহন করে, তা নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের অনলাইনে তাৎক্ষণিকভাবে সংক্ষিপ্ত মতামত লিখেছেন শুভজিৎ রায়।
এক. বাংলাদেশের পরিস্থিতি
গত মাস থেকে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশে বিক্ষোভ শুরু হয়। ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা গত জানুয়ারিতে টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এর পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ ছিল সবচেয়ে বড়।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু একই সময়ে তিনি বিরোধী দল, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছেন। এসব পদক্ষেপের কারণে তিনি অজনপ্রিয় হয়ে পড়েন। তবে তরুণদের রাস্তায় নেমে আসায় হাসিনার বিদায়ঘণ্টা বেজে যায়।
এখন শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করায় বাংলাদেশের অর্থনীতি চ্যালেঞ্জে পড়বে। কারণ, দেশটির অর্থনীতি এখনো করোনার ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি। অথচ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিল।
দুই. হাসিনার দেশত্যাগ ভারতের জন্য কী বার্তা দেয়
শেখ হাসিনা প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার পর তাঁর দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলে একজন বিশ্বস্ত বন্ধুকে হারাল নয়াদিল্লি। হাসিনা ভারতের বন্ধু ছিলেন। বাংলাদেশ থেকে যেসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ভারতে তৎপরতা চালাত, তাদের দমনে নয়াদিল্লি তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে।
হাসিনার আমলে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হয়েছিল। একই সময়ে বাংলাদেশের অনেক প্রকল্পে সহায়তা দিয়েছিল নয়াদিল্লি।
তিন. নয়াদিল্লি হাসিনার প্রতি স্বাভাবিকভাবে সহায়ক ছিল
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহের সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করার বিষয়ে সতর্ক ছিল নয়াদিল্লি। বাংলাদেশের বিক্ষোভকে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করেছে তারা। অন্যদিকে হাসিনার খোলামেলা অগণতান্ত্রিক আচরণ সত্ত্বেও তাঁকে মৌন সমর্থন দিয়েছে ভারত।
বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ, বিরোধী দল ও গণমাধ্যমের ওপর হাসিনা সরকারের দমন-নিপীড়নকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। দেশগুলো বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান চেয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ সত্ত্বেও হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে গেছে ভারত। এটা নিয়ে ভারত ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে বড় ধরনের মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল।
চার. নয়াদিল্লি এখন হাসিনার অজনপ্রিয়তা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চাইবে
শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিলে নয়াদিল্লিকে তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাঁকে আশ্রয় দেওয়ায় (পশ্চিমাদের মতো) বাংলাদেশের নতুন সরকারের কাছে থেকেও একই ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়বে নয়াদিল্লি।
বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো আওয়ামী লীগের শাসনামল ভারতের সহায়তাপুষ্ট ছিল বলে মনে করত। কিন্তু একই সময়ে বাংলাদেশের বিষয়ে পশ্চিমারা ভারতের চেয়ে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছিল। তাই শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিলে বাংলাদেশের জনগণেরও সমালোচনার মুখে পড়তে পারে ভারত।
পাঁচ. ঢাকায় এখন কে ক্ষমতায় আসবেন, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি
বাংলাদেশে এখন যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরা ভারতের প্রতি কী ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবেন, তা নয়াদিল্লির জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আগে বিএনপি-জামায়াতের আমল বা সেনা শাসনামলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অভিজ্ঞতা ভালো ছিল না। তখন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশ থেকে কার্যক্রম চালিয়েছিল।
নতুন ব্যক্তিরা ক্ষমতা নেওয়ার পর আগের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে কি না, তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগে পড়বে ভারত। বর্তমানে চীন সীমান্তের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) ও পাকিস্তান সীমান্ত উত্তপ্ত। পূর্ব লাদাখে ভারতের সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে গণমুক্তি বাহিনীর (পিএলএ) মুখোমুখি। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সীমান্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠুক, তা ভারতের কোনোভাবেই কাম্য নয়।