শিরোনাম :

  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪

অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ বিমান পেল বিমান বাহিনী

0002নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ বিমান এবং আধুনিক গবেষণা ও উদ্ধার হেলিকপ্টার সংযোজিত হয়েছে।
রবিবার সকালে ঢাকার কুর্মিটোলায় বঙ্গবন্ধু বিমান ঘাঁটিতে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার চালুর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
এ উপলক্ষে এক দর্শনীয় প্যারেডের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী প্যারেড পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এডব্লিউ১৩৯ এর সংযোজন আদেশ অফিসার কমান্ডিং বিএএফ উইং কমান্ডার এম আব্বাস আলী এবং ওয়াইএকে-১৩০ এর সংযোজন আদেশ অফিসার কমান্ডিং বিএএফ উইং কমান্ডার হাসান আশরাফুজ্জামানের কাছে হস্তান্তর করেন।

নতুন সংযোজিত রাশিয়ায় তৈরি ফোর্থ প্লাস প্রজন্মের প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান ওয়াইএকে-১৩০ এর সঙ্গে ইন্টিগ্রেটেড নেভিগেশন সিস্টেম, অ্যাটাক সিস্টেম ও ডিজিটাল ফ্লাই-বাই-ওয়ার ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম সজ্জিত রয়েছে।

অন্যদিকে ইতালির অগাস্টাওয়েস্টল্যান্ড এডব্লিউ১৩৯ হেলিকপ্টারের বৈশিষ্ট্য হল— পূর্ণাঙ্গ ইন্টিগ্রেটেড এভয়নিক্স সিস্টেম ও ৪ এক্সিস ডিজিটাল অটো ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেমসহ উন্নত প্রযুক্তির সন্নিবেশ। নৌ গবেষণা ও উদ্ধার অভিযানের জন্য হেলিকপ্টারটিতে উচ্চপ্রযুক্তির ফরোয়ার্ড লুকিং ইনফ্রারেড সিস্টেম, ডাইরেকশন ফাইন্ডার, নাইট ভিশন গুগলস, সার্চ লাইট, হইস্ট কিট, ফ্লোট কিট ও অগুমেনটেড হোভার মুড সজ্জিত রয়েছে।

কুচকাওয়াজের পর প্রধানমন্ত্রী বিমান ও হেলিকপ্টারের ফ্লাইং ডিসপ্লে প্রত্যক্ষ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টারের সামগ্রিক কার্যক্রম ও নতুন সংযোজিত প্রশিক্ষণ বিমানের স্ট্যাটিক ডিসপ্লেও প্রত্যক্ষ করেন।

প্রধানমন্ত্রী ঘাঁটিতে এসে পৌঁছালে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল আবু আসরার ও বঙ্গবন্ধু বিমান ঘাঁটির কমান্ডার এয়ার কমোডর এম ওবায়দুর রহমান তাকে অভ্যর্থনা জানান।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, প্রতিরক্ষা সচিব, বিদেশী কূটনীতিকগণ এবং উর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণের সবসময় একথা মনে রাখতে হবে যে আমরা বিজয়ী জাতি। আমরা কখনো অন্যের কাছে মাথানত বা পরাজয় স্বীকার করি না। বিশ্বে আমরা মাথা উঁচু করে চলবো। সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমাদের এ লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদার চেতনায় চালিত হলে সম্পদের সীমাবদ্ধতা কোন বাধা হতে পারে না। বাংলাদেশ আস্থার সঙ্গে এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বে মর্যাদার স্থান করে নেবে। এ দেশ তার জাতীয় বাজেটের ৯০ শতাংশ নিজস্ব সম্পদে বাস্তবায়ন করে।

শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন যে, বিমানবাহিনীতে শিগগিরই ৫টি নতুন হেলিকপ্টার এবং ১২টি প্রশিক্ষণ বিমান যুক্ত হবে। ফাইটার প্লেন চালাতে সক্ষম দক্ষ বৈমানিক তৈরি করতে উন্নত প্রশিক্ষণ জেট কেনা হচ্ছে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ওয়াইএকে প্রশিক্ষকগণ প্রশিক্ষণার্থীদের ঝুঁকি কমাবে ও বিমান বাহিনীর বৈমানিকদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিতে সহায়তা করবে এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। এ সঙ্গে এডব্লিউ-১৩৯ হেলিকপ্টার দেশের দীর্ঘ উপকূলে দুর্যোগকালীন আবহাওয়ায় অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতায় সহায়তা করবে।

বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম অত্যাধুনিক মিগ-২৯ সুপারসনিক ফাইটার, সুপরিসর সি-১৩০ কার্গো প্লেন ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার ক্রয় করেছে। পর্যায়ক্রমে এফ-৭ বিজিআই ফাইটার, এমআই-১৭১ এসএইচ হেলিকপ্টার, আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা মিসাইল এসএএম এফএম-৯০ বিমান বাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে।

তিনি বলেন, সব ধরনের এয়ারক্রাফটের সংস্কারের জন্য বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটি হিসেবে বঙ্গবন্ধু বিমান ঘাঁটি ও কক্সবাজার বিমান ঘাঁটি নির্মাণ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশপাশি জাতির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির খাতেও গুরুত্ব দিয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি গতিশীল হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃত। গত সাড়ে ৭ বছরে সকল মানবিক সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। দারিদ্র্যসীমা ২২.৪ শতাংশে নেমে এসেছে এবং ২০২১ সালের মধ্যে তা ১৪ শতাংশে হ্রাসের লক্ষ্য নির্ধারণ কর হয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বিগত বছরগুলোতে ৬ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৬ গুণ বেড়েছে। জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে প্রত্যেক মানুষের জন্য সমৃদ্ধির ব্যবস্থা করা। যাতে তারা স্বাচ্ছন্দে জীবন-যাপন করতে পারে।
দেশের অর্থনীতি যত শক্তিশালী হবে, সরকার বিমান বাহিনীর জন্য তত আরো নতুন নতুন সংযোজনের উদ্যোগ নিতে সক্ষম হবে।