• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনঃ উদ্বেগ নিয়েই শুরু একুশের বইমেলা

01নিজস্ব প্রতিবেদক: মাসব্যাপী ‘অমর একুশে গন্থমেলা’র শুভো উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার বিকেলে অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৬ উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর তিনি মেলা পরিদর্শন করেন। এরপর সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় বইমেলার দুয়ার।

এবার অনেক বড় পরিসরেই শুরু হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বেড়েছে বইমেলার পরিধি। বাংলা একাডেমির উল্টো দিকের উদ্যানের সীমানা প্রাচীরের একটি অংশ ভেঙে তৈরি করা হয়েছে ৪৮ ফুটের অতিরিক্ত নতুন প্রবেশ পথ। যার সঙ্গে বাংলা একাডেমি অংশের সরাসরি সংযোগ রয়েছে।
শীতের বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতেই বইপ্রেমীদের আগমনে সরব হয়ে উঠেছে গ্রন্থমেলা।

মেলার প্রথম দিনেই গ্রন্থানুরাগীর ব্যাপক সমাগম না হলেও চোখে পড়ার মতো পাঠকের দেখা ঠিকই মিলেছে। মেলার দুই ভেন্যু বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মনের আনন্দে ঘুরছেন এসব পাঠক।
তাই বলা যায়, লেখক-প্রকাশক ও আয়োজক সবার মানসিক সংযোগ ঘটিয়ে যাত্রা শুরু করলো মাসব্যাপী একুশের বইমেলা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্ত হয়ে, মুক্ত মনে বইমেলায় ঘুরে বেড়ানোর প্রত্যাশায় রয়েছি। এই বাংলা একাডেমিতে অনেক সময় কেটেছে আমার। এটি আমার প্রিয় জায়গা।

বাংলা একাডেমিতে অনেক সময় কেটেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিচারণ করেন যে, তার প্রয়াত বন্ধু বেবী মওদুদকে নিয়ে এখানকার লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করতেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এখানে আসতে আমার খুব ভালো লাগে। তবে অনেক নিয়মে বন্দি থাকতে হয় এখন। সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। আবার কবে বইমেলায় আগের মতো ঘুরে বেড়াতে পারবো! মুক্ত হয়ে বইমেলায় ঘুরে বেড়ানোর প্রত্যাশায় থাকলাম।

তিনি আরো বলেন, সারা বছরই এখন অনেক আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বসে থাকি বইমেলা কখন আসবে। ফেব্রুয়ারি আমাদের প্রেরণা দেয়। প্রতিবাদের ভাষা শেখায় এই মাস। বিজয়ের পথ দেখায় এই মাস।
বিকেল ৩টার পরই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন এমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্কৃতি সচিব বেগম আক্তারী মমতাজ। স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘এটা শুধু গ্রন্থমেলা নয়, এটা বাঙালি জাতির মানসগঠনে ভূমিকা রাখে। বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় এ গ্রন্থমেলার অবদান অপরিসীম। বইমেলা প্রাঙ্গণ লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী উপলক্ষে এবারের গ্রন্থমেলার মূল থিম ‘বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী’।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘বইমেলার পরিসর বাড়ছে। যেভাবে বইমেলার পরিসর বাড়ছে তাতে বাংলা একাডেমির একার পক্ষে এ মেলার নিয়ন্ত্রণ ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।’

সভাপতির বক্তব্যের পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন। এ সময় নেপথ্যে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি ভেসে আসে। ১০ ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন কবি-সাহিত্যিকরা।

পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- কবিতায় আলতাফ হোসেন, কথাসাহিত্যে শাহীন আকতার, প্রবন্ধে যৌথভাবে আবুল মোমেন ও ড. আতিউর রহমান, গবেষণায় মনিরুজ্জামান, অনুবাদে আব্দুস সেলিম, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে তাজুল মোহম্মদ, আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা ও ভ্রমণকাহিনী ক্যাটাগরিতে ফারুক চৌধুরী, নাটকে মাসুম রেজা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশে শরীফ খান ও শিশুসাহিত্যে সুজন বড়ুয়া।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ কবি ও জীবনানন্দ অনুবাদক জো উইন্টার, চেক প্রজাতন্ত্রের লেখক-গবেষক রিবেক মার্টিন, আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সমিতির (আইপিএ)-এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রিচার্ড ডেনিস পল শার্কিন এবং জোসেফ ফেলিক্স বুরঘিনো।

অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করবেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও নজরুলসংগীত পরিবেশন করবেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পৌত্রী অনিন্দিতা কাজী।

Print Friendly, PDF & Email