খালেদা জিয়ার ভিশন ২০৩০

6388_thumbM_llনিজস্ব প্রতিবেদক:  আলোকিত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে ‘ভিশন ২০৩০’ রূপরেখা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপি আগামীতে সরকার গঠন করতে পারলে এ রূপরেখা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে তিনি বলেছেন, সুনীতি, সুশাসন ও সু-সরকার গঠন নীতিতে দেশ পরিচালনা করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে। সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে বারবার বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা ও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ফের আহ্বান জানিয়েছেন সংলাপের। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে দীর্ঘ ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সকাল পৌনে ১১টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনে নেতারা বক্তব্য রাখেন। দ্বিতীয় অধিবেশনের শুরুতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত দলের চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের নির্বাচনের ফলাফল অনুমোদন করেন কাউন্সিলররা। পরে দলের গঠনতন্ত্রের সংশোধনীও অনুমোদন দেয়া হয়। এ অধিবেশনে সাংগঠনিক প্রতিবেদন ও শোক প্রস্তাব পেশ করা হয়। বক্তব্য রাখেন জেলা নেতারা। বাকি কমিটি গঠনের দায়িত্ব বিএনপি চেয়ারপারসনের ওপর অর্পণ করেন কাউন্সিলররা।
এর আগে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাঠানো ৩০ মিনিটের একটি ভিডিও বক্তব্য প্রদর্শন করা হয়। দীর্ঘ সোয়া ঘণ্টার বক্তব্যের শুরুতেই শেরেবাংলা, মওলানা ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানসহ জাতীয় নেতাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান খালেদা জিয়া। বিএনপি দুর্নীতি করবে না অঙ্গীকার করে খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি দুর্নীতি করবে না, অন্যকেও করতে দেবে না। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল পদ নিশ্চিত করা হবে। প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে উন্নীত করে দেশকে পরিণত করা হবে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে কঠোরতা এবং আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে বিএনপি। উদার গণতান্ত্রিক সমাজ গড়বে। দেশকে পরিণত করবে রেইনবো নেশনে। জনগণের ক্ষমতাকে কেবল নির্বাচনের দিন বা ভোট দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে জনগণের হাতে দেশের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবে। প্রশাসনকে দলীয়করণমুক্ত ও নিয়োগে দলীয় আনুগত্যমুক্ত করা হবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করবে। আইনের মাধ্যমে গঠিত একটি স্বাধীন কমিশন সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে স্থানীয় সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ বণ্টনের ব্যবস্থা করবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের প্রতি সংলাপের আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটি সমাধানে পৌঁছাতে চাই। তাহলে দ্বন্দ্ব সংঘাত থাকবে না, আন্দোলনেরও প্রয়োজন হবে না। জনগণের হাতে দেশের মালিকানা ফেরানোর অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল, সে রাষ্ট্রের মালিকানা আজ তাদের হাতে নেই। আমরা জনগণকে সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস বলে আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি। তাই তাদের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চাই। তিনি বলেন, গুড পলিসি, গুড গভর্ন্যান্স ও গুড গভর্নমেন্ট। সুনীতি, সুশাসন ও সু-সরকার। গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সুশাসনের জন্য নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, আইন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মতো সাংবিধানিক ও আধা-সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি, অনিয়ম ও দলীয়করণমুক্ত করা হবে। বিএনপি দরিদ্রবান্ধব ও সমতাভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বিশ্বাসী। প্রবৃদ্ধির হার বাড়িয়ে এর সুফলের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে দারিদ্র্য ও বৈষম্যের সমস্যাকে মোকাবিলা করতে চায়।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও গণভোট প্রবর্তন করা হবে: দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও গণভোট প্রবর্তন করা হবে জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোর অভিজ্ঞতায় দেশবাসী গভীরভাবে উপলব্ধি করছে, প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে। এ অবস্থার অবসানকল্পে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা হবে। রাষ্ট্রের এককেন্দ্রিক চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখে বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সম্প্রদায়, প্রান্তিক গোষ্ঠী ও পেশার জ্ঞানীগুণী ও মেধাবী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে। আমাদের জাতীয় সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। আমরা সংবিধানে শহীদ জিয়াউর রহমান প্রবর্তিত গণভোটের ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবো।
প্রশাসনে দলীয় হস্তক্ষেপ বন্ধ করার অঙ্গীকার করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, প্রশাসন ও পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা হবে। ব্যক্তিগত বিশ্বাস-অবিশ্বাস বা দলীয় আনুগত্য নয়, মেধা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ, সততা ও সৃজনশীলতা হবে সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনে যোগ্যতার মাপকাঠি। আইনানুগভাবে বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর কর্তব্য পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে দলীয় ও অবাঞ্ছিত সব হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের যোগ্যতা ও পদ্ধতি সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করবে বিএনপি। নিয়োগের জন্য বাছাই বা সুপারিশকৃতদের ব্যক্তিগত তথ্য ও সম্পদবিবরণী জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদার গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা কথা জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা ও সাম্য আজও বাস্তবায়িত হয়নি। সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য বাংলাদেশের সকল ধর্ম-বিশ্বাসের মানুষ, পাহাড় ও সমতলসহ সকল অঞ্চলের মানুষ এবং প্রতিটি নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের চিন্তা-চেতনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে একটি অংশীদারিত্বমূলক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারসম্পন্ন, জনকল্যাণমূলক, সহিষ্ণু, শান্তিকামী ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলা বিএনপির লক্ষ্য।
৫ বছরের মধ্যে সেবাখাতের সমস্যার সমাধান করার কথা জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা ও তদারকি নিবিড় ও শক্তিশালী করা হবে। দলীয় মতাদর্শের ভিত্তিতে নয়, যোগ্য, সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিদের বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহ পরিচালনা বোর্ডে নিয়োগ দেয়া হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিচার, প্রশাসন, পুলিশ, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও খাবার পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, পরিচ্ছন্নতাসেবাসহ সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থাসমূহের সেবার মান ক্রমান্বয়ে উন্নত করা হবে। সুষ্ঠু সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ৫ বছরের মধ্যে সমাধান করা হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ব্যাপারে বিএনপির কঠোর মনোভাবের কথা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে বিএনপি সব সময় সক্রিয়। ভবিষ্যতে সন্ত্রাসবাদ জঙ্গিবাদ দমনে সেই কঠোরতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। সন্ত্রাস দমনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমরা একযোগে কাজ করে যাবো। তিনি বলেন, বিএনপি বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডের মধ্যে কোনোরকম সন্ত্রাসবাদী তৎপরতাকে বরদাস্ত করবে না। বাংলাদেশের মাটি থেকে অপর কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতাও মেনে নেবে না।
বিএনপি অন্য রাষ্ট্রের সমস্যা সৃষ্টি করতে চায় না জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে বিএনপি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অন্য কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং অন্য কোনো রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে চায় না। একইভাবে বিএনপি আশা করে, অন্য কোনো রাষ্ট্রও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে না। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। বিএনপি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সৎপ্রতিবেশীসুলভ সোহার্দ্য, বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়।
এক দশকের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো একটি সীমিত সম্পদের ঘনবসতিপূর্ণ দেশে শিক্ষাকে কর্মমুখী ও ব্যাবহারিক জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে। এজন্য সকল পর্যায়ের শিক্ষার গুণগত মান ও বিজ্ঞান শিক্ষায় অনগ্রসরতা দূর করার নীতিতে বিশ্বাসী বিএনপি। ‘শুধু ধনীদের জন্য শিক্ষা নয়’, দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। এক দশকের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করা হবে। গুরুত্ব দেয়া হবে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণার ওপর। গড়ে তোলা হবে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়। মাদরাসা শিক্ষাকে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হবে। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও আইটি এবং ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে, যাতে মাদরাসা শিক্ষিতরা উৎপাদনশীল কাজ, চাকরি, অন্যান্য পেশা ও উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে পিছিয়ে না পড়ে। প্রতিবন্ধীদের উপযুক্ত শিক্ষা অর্জনের সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।
বিদ্যুৎ-জ্বালানি, যোগাযোগ ও আবাসন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, কাঙিক্ষত ডবল ডিজিট প্রবৃদ্ধির জন্য বিএনপি যথোপযুক্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। সকল প্রকার জ্বালানি ও সুবিধার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে রেল ও নৌপথকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হবে। সংস্কার ও উন্নয়নের মাধ্যমে সারাদেশে সমন্বিত বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। খালেদা জিয়া বলেন, জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপ হ্রাস করে নগরায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হবে। নৈরাজ্যপূর্ণ নগরায়নকে সুশৃঙ্খল এবং ডবল ডিজিট প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সমন্বিত করতে একটি জাতীয় মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। আবাসন খাতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দেশব্যাপী সব নাগরিকের বাসস্থানের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত ও সমন্বিত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিক, বস্তিবাসী ও দরিদ্র গ্রামীণ জনগণের জন্য স্বল্পমূল্যে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ উৎসাহিত করা হবে। এছাড়া শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো হবে। দুর্নীতি-লুটপাট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, সন্ত্রাস-দুর্নীতি-লুটপাট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শেয়ারবাজার লুঠ হয়েছে। ব্যাংকগুলো লুণ্ঠিত হচ্ছে। এখন বিদেশি হ্যাকাররা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ লুণ্ঠনের প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়েছে। এই অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের আমলে ব্যাংক, এটিএম বুথ, এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকেও জনগণের অর্থ নিরাপদ নয়। সম্মানিত নাগরিকেরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হচ্ছেন। প্রতিবাদ-বিক্ষোভ তো দূরের কথা, অন্যায়-অনাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলারও সুযোগ নেই।
সরকার মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, দুর্নীতি, অনাচার ও অপশাসনে লিপ্ত ক্ষমতাসীন সরকার নানা অপকৌশলে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করছে। সাংবাদিক, কলামিস্ট, সম্পাদক কেউই আজ নিরাপদ নন। মামলা-হামলা এমন কি হত্যারও শিকার হচ্ছেন তারা।
অকার্যকর রাষ্ট্রের দিকে এগোচ্ছে দেশ মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, দেশে খুন-খারাবি-রক্তপাত চলছে প্রতিনিয়ত। বিদেশি নাগরিক ও বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকদের হত্যা করা হচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হচ্ছে না। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের থাবা বিস্তৃত হবার আশঙ্কা করছে বিদেশি বন্ধুরা। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা সবকিছু অস্বীকার করে কিংবা নির্বিকার থেকে দায় সারছে। এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে জাতির প্রাণশক্তি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। দেশ এক অকার্যকর রাষ্ট্রের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অন্ধকার থেকে আমাদেরকে আলোর দিকে মুখ ফেরাতে হবে। তার জন্য গণতন্ত্র আনতে হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
দেশের জনগণকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশের অসহায় ও হতাশ জনগণ আমাদের এই কাউন্সিলের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা দিক-নির্দেশনা ও আলোর দিশা চায়। আমাদের শক্তির উৎস তারাই। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা এই কাউন্সিল শেষে দিক-নির্দেশনা নিয়ে সারা দেশে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বেন, তাদের ঐক্যবদ্ধ করবেন। তার জন্য নিজেরা আগে ঐক্যবদ্ধ হবেন এবং সংগঠনকেও সুসংবদ্ধ করবেন। তাহলেই আমরা অজেয় শক্তিতে পরিণত হবো। দেশবাসীর প্রতি আমার আহ্বান: আপনারা জেগে উঠুন, ঐক্যবদ্ধ হোন। আপনাদের যে অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে তা ছিনিয়ে নিন। অন্ধকারের পর্দা দুলে উঠেছে। অচিরেই আলো আসবে।
দিনব্যাপী কাউন্সিলে উৎসবের আমেজ: সকাল ৭টায় থেকেই ভেন্যু ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে থাকেন দলের কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা। সকাল ৮টার দিকে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকা লোকেলোকারণ্য হয়ে পড়ে। আমন্ত্রিত অতিথিদের কাউন্সিলের পরিচয়পত্র দেখে প্রবেশ করান স্বেচ্ছাসেবকরা। এতে প্রচণ্ড ভিড় লেগে যায় মূল গেটে। ভিড়ের মধ্যে পড়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। লালবাগের এক মহিলা কমিশনার ভিড়ের চাপে অসুস্থ হয়ে গেটে পড়ে যান। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করেন। অনেক কাউন্সিলর ও ডেলিগেট ভিড় ঠেলে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে না পেরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রমনা পার্কে আশ্রয় নেন। নেতাকর্মীদের চাপে একপর্যায়ে দলের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। হুড়মুড় করে অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়েন দলের অসংখ্য কর্মী-সমর্থক, হকার। তবে উদ্বোধনের নির্ধারিত সময়ের আগেই মঞ্চে উপস্থিত হন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে আসা ৪ বিদেশি অতিথিসহ ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা। আগের রাতে হালকা বৃষ্টি হওয়ায় গেটে হালকা পানি জমে যায়। সকাল ১০টায় আনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছার কথা থাকলেও বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে মৎস্যভবন এলাকায় আধা ঘণ্টা আটকা পড়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহর। ভিড় ঠেলে পৌনে ১১টায় খালেদা জিয়ার গাড়ি অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করে। এসময় কাউন্সিলর ডেলিগেটসহ নেতাকর্মীরা মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানান। মঞ্চে ওঠার পথে মহিলা দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা দুই পাশে দাঁড়িয়ে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান। এরপর জাসাসের শিল্পীদের পরিবেশিত জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন খালেদা জিয়া। এসময় দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। পাশাপাশি কাউন্সিল প্রাঙ্গণে ৬৪টি জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা আলাদা দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর রঙিন বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন খালেদা জিয়া। কাউন্সিলের থিম সং পরিবেশন করেন জাসাসের সাধারণ সম্পাদক মনির খান ও কণ্ঠশিল্পী রিজিয়া পারভীন। এরপর কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের মূলপর্ব শুরু হয়। প্রথমেই ২০০৯ সালের ৮ই ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ১৯শে মার্চ পর্যন্ত যেসব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশিষ্ট ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর কাউন্সিলে অংশ নেয়া বিদেশি অতিথিদের পরিচয় করিয়ে দেন মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দলের সভাপতি শামা ওবায়েদ। এসময় তিনি বলেন, অনেক দেশের রাজনৈতিক দলের নেতারা সময় স্বল্পতার কারণে আসতে না পেরে ই-মেইলে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন। অনেকে ভিডিওবার্তা পাঠিয়েছেন। এসময় কাউন্সিলের সফলতা কামনা করে ভারতের জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা বিজয় জলির পাঠানো একটি ভিডিওবার্তা প্রদর্শন করা হয়। এরপর আমন্ত্রিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন থেকে আগত চার বিদেশি অতিথি বক্তব্য রাখেন। তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য বিএনপির অবদানের কথা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে কাউন্সিলের সাফল্য কামনা করেন। এরপর দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাঠানো ৩০ মিনিটের একটি ভিডিও বক্তব্য প্রদর্শন করা হয়। তারেক রহমানের বক্তব্য যখন শুরু হয় তখন অনুষ্ঠানস্থলে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। ছেলের বক্তব্য শুনতে মঞ্চে থাকা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা চেয়ার ঘুরিয়ে বসেন। বিএনপির পুনর্নির্বাচিত সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের আধা ঘণ্টার বক্তব্য শেষে মুহুর্মুহু করতালিতে ফেটে পড়ে কাউন্সিল অনুষ্ঠান।
বেলা পৌনে ১টার দিকে বক্তব্য শুরু করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রায় সোয়া ঘণ্টার বক্তব্য শেষে প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘোষণা করেন তিনি। বেলা তিনটায় প্রায় তিন হাজার কাউন্সিলরকে নিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় অধিবেশন। অনুষ্ঠানের প্রথমপর্ব পরিচালনা করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
বক্তব্য দিলেন যারা: বিএনপির কাউন্সিলের সাফল্য কামনা করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিকল্পধারার সভাপতি প্রফেসর একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, বিএনপির প্রথম কাউন্সিলে দলের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হিসেবে আমাকে দেড় ঘণ্টা বক্তব্য রাখতে হয়েছিল। বিএনপির এই কাউন্সিলের আন্দোলন জোরদার হবে। দেশের গণতন্ত্র মুক্তি পাবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপির আগামী দিনের আন্দোলনের কর্মকৌশল হবে সংগঠন, আন্দোলন ও নির্বাচন। এ কারণে দলের মধ্যে সরকারের অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সজাগ হোন। কেননা এরাই গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করে। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে সরকারের দমন-পীড়ন ও পুলিশ এবং সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের গুলিতে বিএনপির ৫০২ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে ২২৩ জন নেতাকর্মী অপহৃত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন চার হাজার। জেল খেটেছেন প্রায় ৭৫ হাজার। প্রায় ২৪ হাজার মামলা হয়েছে এবং এতে চার লাখ ৩০ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় ৫০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেন, গোটা দেশ আজ বিপদে। এখন হারানো গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য মতপার্থক্য ও ঘৃণা বিদ্বেষ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করতে হবে। আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য উপস্থিত নেতাকর্মীদের হাত তুলে শপথ গ্রহণ করান তিনি। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে আসা চারজন বিদেশি অতিথি বক্তব্য রাখেন।
কাউন্সিল অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ, সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, প্রফেসর মাহবুবউল্লাহ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান, মাহফুজউল্লাহ, ২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে কল্যাণপার্টির মেজর জে. (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, জামায়াতের আবদুল হালিম, বিজেপির ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, জাতীয় পার্টি (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, এম মোরশেদ খান, রাবেয়া চৌধুরী, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, হারুন-আল রশীদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মাহমুদুল হাসান, ওসমান ফারুক, আবদুল মান্নান, মীর নাসিরউদ্দিন, এজে মোহাম্মদ আলী, মুশফিকুর রহমান, আবদুল হালিম, রুহুল আলম চৌধুরী, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আমীনুল হক, আবদুল কাইয়ুম, জয়নাল আবেদীন, এজেডএম জাহিদ হোসেন, জহুরুল ইসলাম, আহমেদ আজম খান, মিজানুর রহমান মিনু, মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কবির রিজভী, আসাদুল হাবিব দুলু, ফজলুল হক মিলন, মশিউর রহমান, মজিবুর রহমান সারোয়ার, গোলাম আকবর খন্দকার, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মো. ফয়সল, নোয়াখালীর নুরুল আলম শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্থায়ী কমিটির সদস্য চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীও অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বিদেশি কূটনীতিকদের মধ্যে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, ভারত, রাশিয়া, কুয়েতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
বর্ণিল সাজে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট: বিএনপির কাউন্সিলকে ঘিরে বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকা। ‘দুর্নীতি দুঃশাসন হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’ স্লোগান সংবলিত ঢাউস আকৃতির ব্যানার টানানো হয় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে। দলের বিভিন্ন সারির নেতারা তাদের ছবিসংবলিত ফেস্টুন টানানো হয় সামনের রাস্তায়। কাউন্সিলের শুভেচ্ছা জানিয়ে সাবেক ছাত্রনেতা সানাউল হক নীরুর বেশ কিছু পোস্টার দেখা যায়। নারায়ণগঞ্জ থেকে জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমূর আলমের নেতৃত্বে একটি মিছিল ঘোড়ার গাড়ির শোভাযাত্রা নিয়ে কাউন্সিলে অংশ নেন। এদিকে মধ্যরাতে হঠাৎ বৃষ্টিতে অনুষ্ঠান সাজানোর বেশ কিছু উপকরণ ভিজে গিয়েছিল। বিশাল মঞ্চের সামনে রাখা লাল কার্পেটটি ভিজে যাওয়ায় তা পাল্টানো হয়। বৈরি আবহাওয়ার ঝাপলা সামলে সকালেই কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সেরে ফেলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের পশ্চিমদিকের এল আকৃতির বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়। রঙিন সামিয়ানা দিয়ে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলা হয়। মঞ্চে খালেদা জিয়ার পাশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পূর্বপাশে আমন্ত্রিত দেশি-বিদেশি অতিথিদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আলাদা টি-শার্ট ও টুপি পরে আসেন। এছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের দেয়াল ঘেঁষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের নেতাকর্মীদের বসার ব্যবস্থা করা হয়।
ব্যাপক সমাগম, ভেঙে পড়ে নিজস্ব নিরাপত্তা
পুরানা পল্টন, দৈনিক বাংলা, মৎস্যভবন থেকে একে একে খণ্ড খণ্ড মিছিল এগিয়ে যাচ্ছিল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের দিকে। শাহবাগ থেকে একই গন্তব্যে ছুটে যাচ্ছিল মিছিল। সকাল থেকেই মিছিলে মিছিলে জনস্রোতে পরিণত হয় এই দুটি সড়ক। সকালেই শাহবাগ থেকে মৎস্যভবন পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট সংলগ্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। পোস্টার, ব্যানার, মিছিল ও স্লোগানে ছেয়ে যায় পুরো এলাকা। সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কাউন্সিলে উপস্থিত হলে জনস্রোত ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। জমায়েত মূল সড়ক থেকে ছড়িয়ে পড়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রমনা পার্কে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবিরহাট, রমনার কালিমন্দির পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের অনেকের গলায় ঝুলানো ছিল ডেলিগেট লেখা কার্ড। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট সংলগ্ন উদ্যানের গেটে ছিল মানুষের বিপুল উপস্থিতি। ঠেলা-ধাক্কার শিকার হয়ে তারা প্রবেশ করছিলেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বক্তব্য শেষে দুপুরের খাবার খেয়েছেন নেতাকর্মীরা। এদিকে কাউন্সিলে আসা ডেলিগেট ও কাউন্সিলরদের নিরাপত্তায় নিজস্ব ব্যবস্থা থাকলেও বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর চাপে তা ভেঙে পড়ে। নিরাপত্তার জন্য আর্চওয়ে ও সার্চ যন্ত্র থাকলেও তা ব্যবহার হয়নি মানুষের চাপের কারণে। প্রথম অধিবেশনে খালেদা জিয়ার বক্তব্য শেষে তাদের অনেকে উদ্যান থেকে বের হয়ে যান। এ সময় খণ্ড খণ্ড মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা। তখন ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয় দৈনিক বাংলা, পল্টন, কাকরাইল, শাহবাগ ও ফার্মগেট এলাকায়। বিএনপির কাউন্সিলকে কন্দ্রে করে যানজটের প্রভাব পড়ে রাজধানীজুড়েই। কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোড়ে মোড়ে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। কাউন্সিলের আশপাশে মোতায়েন ছিল কয়েক শ পুলিশ সদস্য। বিশেষ করে মৎস্যভবন, দোয়েল চত্বর, টিএসসি ও শাহবাড় মোড়ে ছিল পুলিশের বিপুল উপস্থিতি। একইভাবে সকাল থেকে ওই এলাকায় ছিল র‌্যাবের টহল। শাহবাগে ও মৎস্যভবনে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল পুলিশের সাঁজোয়া যান। এছাড়াও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করেছেন গোয়েন্দারা। পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনার আবদুল বাতেন জানান, কাউন্সিলের নিরাপত্তার স্বার্থে সব ধরনের ব্যবস্থা ছিল। কয়েক শ পোশাকধারী পুলিশ দিনভর মোতায়েন ছিল কাউন্সিলের আশপাশে। কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা ছুটে এসেছিলেন। সকালে মৎস্যভবন থেকে মিছিল নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে প্রবেশ করেন সিলেট জেলা বিএনপি নেতাকর্মীরা। সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ জানান, বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ছুটে এসেছেন। কিন্তু তাদের অনেকেই সেখানে অবস্থান করতে পারছেন না স্থান সংকুলান না হওয়ায়। কাউন্সিলের ভেন্যু ছোট হওয়ায় তারা হতাশ হয়েছেন। তবে কাউন্সিলের কারণে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি। বিএনপি নেতাকর্মীদের মতো উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মধ্যেও। শাহবাগ থেকে তেজগাঁও কলেজের বিপুল সংখ্যক ছাত্রদল নেতাকর্মীর মিছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করে। এ সময় ছাত্রদলকর্মী আবির হায়াত বলেন, পুলিশি তল্লাশি, নির্যাতন চালিয়ে আমাদের থামানো যাবে না।

Print Friendly, PDF & Email