জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য দ্বার খোলা: প্রধানমন্ত্রী

143497_1দেশনিউজ.নেট : বাংলাদেশে শিল্প উৎপাদন খাতে নতুন সম্ভাবনা এবং বিপুল জনশক্তির কথা জাপানি ব্যবসায়ীদের সামনে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের দরোজা জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য সর্বদা উন্মুক্ত।

তিনি বলেছেন, আমাদের দরজা আপনাদের জন্য খোলা। আমি চাই আমাদের জাপানি বন্ধুরা বাংলাদেশে আসবেন, তরুণ কর্মীবাহিনী এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধাগুলো কাজে লাগাবেন।

রবিবার টোকিওতে জাপানের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক প্রাতঃরাশ বৈঠকে এই আহ্বান জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারাও ম্যান্ডারিন ওরিয়েন্টাল হোটেলের লিন্ডেন কক্ষে এই প্রাতঃরাশ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বাংলাদেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও আইটি পার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে, এর মধ্যে ৩৩টির কাজ এগিয়ে চলেছে। আমরা আশা করছি, আগামী চার বছরে বাংলাদেশের শিল্প উৎপাদন খাতে যুক্ত হবে আরো ১ কোটি মানুষ।

জাপানকে বাংলাদেশের সবচেয়ে ‘পরীক্ষিত বন্ধু’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মনিষ্ঠার কারণে জাপানের বিনিয়োগকারীদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের গভীর আস্থা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে বৈঠকে জাপানের ‘রিভাইটালাইজেশন স্ট্র্যাটেজি’ এবং অবকাঠামো খাতে অংশীদারিত্বের বিষয়ে আলোচনার কথাও শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের সামনে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী, তাদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতা, বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান, উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা এবং শিল্পায়ন পরিকল্পনা জাপানের রিভাইটালাইজেশন পরিকল্পনার সঙ্গে মিলে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ইতোমধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে দুটি পাবলিক-প্রাইভেট অর্থনৈতিক সংলাপ এগিয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আমরা প্রশাসনিক প্রক্রিয়া আরো সহজতর করার জন্য কাজ করছি। এখন এ বিষয়ে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ শুনবো আমি। আমরা আসলে কার্যকর ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ সুবিধা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি।

বিনিয়োগে এগিয়ে এলে ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা প্রণোদনা প্যাকেজ পাবেন। নিশ্চিত করা হবে বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও অন্যান্য সংযোগ-সুবিধা এবং কিছুক্ষেত্রে করও শিথিল করা হবে।

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিরাপত্তা শঙ্কায় না থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আমার সরকারকে সকল জাপানি নাগরিক ও স্থাপনায় সম্ভাব্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, জাপানি সমাজ এখন ‘রোবোটিক বিবর্তনে’ চলে যাচ্ছে বলে দৃশ্যমান হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ঠিক এমনই কিছু খাতে সহযোগিতা করতে পারে, যার মধ্যে ‘ইমাজিনেটিভ সফটওয়্যার’, ‘শেয়ারড/ক্লাউড-বেজড প্রসেসিং’র কথা উল্লেখ করা যায়।

তিনি জাপানি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আমাদের ওষুধ ও জাহাজ নির্মাণখাতেও আগ্রহী হতে পারেন। আমাদের সমুদ্র অর্থনীতি আপনাদের সামনে তুলে ধরছে বিনিয়োগ সুযোগের বিশাল পরিধি। আপনারা নজর দিতে পারেন আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতেও।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, সরকার লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, জুট, মৎস্য আহরণ, টেক্সটাইল ম্যানুফেকচারিং খাত নিয়েও কাজ করছে। একইসঙ্গে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোকে ‘সবুজ’ হতে উৎসাহ যোগাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন, সঠিক বর্জ ব্যবস্থাপনা ও বিদ্যুৎ বণ্টনের মতো নানা ক্ষেত্রে প্রয়োজন মেটানোর জন্য জাপান পা বাড়াতে পারে বলেও উল্লেখ করেন।

জাপানি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, আপনারা হয়তো সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে বিদেশি নাগরিক ও বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছেন। আমি আপনাদের নিশ্চিত করছি, যে কোনো ধরনের সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে।

এখানে আমাদের ব্যবসায়ীরাও আছেন। এবার আপনাদের পরামর্শ-মতামতের পালা বলে বক্তৃতা শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠকে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) ও জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেটরো) মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এই সমঝোতা স্মারককে বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টরের জন্য প্রথম জাপানি স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচনা করছে এফবিসিসিআই। সংগঠনটি বলছে, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের প্রাইভেট সেক্টরে নতুন নতুন বিনিয়োগের পথ খোঁজা যাবে।

বৈঠকে অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ ও নেতা মোহাম্মদ হাবিব উল্ল্যাহ ডনসহ সংগঠনের শীর্ষ নেতা এবং ‘জেটরো’র শীর্ষ নেতা ও জাপানের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

Print Friendly, PDF & Email