ডাকসু কি ‘৭৩ এর পথে?

news_2019-03-11_1_21_bpডেস্ক রিপোর্টঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। নেতৃত্ব তৈরির আতুড় ঘর। দেশের দ্বিতীয় সংসদ বলে খ্যাত ডাকসুর রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের পাশাপাশি নেতৃত্ব দিয়েছে বাঙালি জাতির সব অর্জনের। দীর্ঘ ২৮ বছর পর আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন। স্বাধীন দেশে এটি ডাকসুর অষ্টম নির্বাচন। ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ডাকসুতে প্রথম দিকে নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া ছিল মনোনয়ন। এ ধারা চলে ১৯৫২ পর্যন্ত।

১৯৫৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ডাকসুর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে কখনো ধারাবাহিক কখনো নির্বাচন হয়েছে বিরতি দিয়ে। তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ডাকসু ছিল বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের নেতৃত্বে।

ভাষা আন্দোলন থেকে দেশের স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনে ডাকসু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬-এর বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা, ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ডাকসুর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের নানা আন্দোলনেও ডাকসুর নেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৬৬, ’৬৭ ও ’৬৮ সালে ডাকসুর প্রথম মহিলা ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক ড. মাহফুজা খানম। ছফ দফার পক্ষে আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। ১৯৬৩-৬৪ সালে ডাকসুর ভিপির দায়িত্ব পালন করেন রাশেদ খান মেনন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের পাশাপাশি ষাটের দশকের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির আন্দোলনে ছিল তৎকালীন ডাকসু নেতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। ১৯৬৮-৬৯ মেয়াদে ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) ছিলেন তোফায়েল আহমেদ। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। স্কুলছাত্র থাকাকালেই ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে মিছিল করতে গিয়ে কারাবরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন যৌথ গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ডাকসুর সবর্শেষ নিবার্চন অনুষ্ঠিত হয় ২৮ বছর আগে ১৯৯০ সালে। ১৯৯০ সালের ৬ই জুন ডাকসু ও আবাসিক হল সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ১৯৮৯ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি ডাকসু ও হল সংসদের ৬ষ্ঠবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভিপি নির্বাচিত হয় সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এবং জিএস হন মুশতাক হোসেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৯০ সালের নির্বাচন ছিল ৭ম নির্বাচন। ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচনে ২৮ হাজার ৬ শত ৯০ জন ভোটারের মধ্যে ১৮ হাজার ৩৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ডাকসুর ২০টি পদে ৪৮৯ জন এবং ১৪টি পদে ১০৪০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। স্বাধীনতার পরে মাত্র সাতবারের মতো ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর সর্বমোট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৩৬ বার।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর যতগুলো ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তার একটিতেও সরকারপন্থী সংগঠন জয়লাভ করতে পারেনি। ডাকসুতে আগে বা পরে যারা এসেছেন তারা সকলেই বাংলাদেশের রাজনীতির মুখ উজ্জ্বল করেছেন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচন ভণ্ডুল হয়ে গিয়েছিল। ২০১৯ সালেও তেমনটা হবে এটা কেউ আশা করেন না। ১৯৭৯, ১৯৮০ ও ১৯৮২ সালে ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল। প্রথম ২ নির্বাচনে যথাক্রমে জাসদ-ছাত্রলীগের এবং বাসদ-ছাত্রলীগের প্রার্থী হয়ে সহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জিতেছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না ও আখতারুজ্জামান। ১৯২২ সালে ডাকসু সৃষ্টি হওয়ার পর বিগত ৯৬ বছরে ডাকসুর ইতিহাসে পরপর দুটি মেয়াদে লাগাতার ডাকসুর ভিপি এবং জিএস পদে নির্বাচিত হন মাহমুদুর রহমান মান্না এবং আখতারুজ্জামান। যে দুটি মেয়াদে তারা নির্বাচিত হন সে দুটি মেয়াদ ছিল (১) ১৯৭৯-৮০, ১৯৮০-৮১ এবং ১৯৮১-৮২। ১৯৮২ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৯৮৯ পর্যন্ত ভিপি ও জিএস পদে যথাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন আখতারুজ্জামান ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।

Print Friendly, PDF & Email