ভিসা আছে টিকিট নেই, ১০ হাজার ওমরাহযাত্রীর হা-হুতাশ

এ আর মারুফ : ভিসা করেছেন, প্রস্তুতিও সম্পন্ন; কিন্তু টিকিট না পাওয়ায় ওমরাহ হজে সৌদি আরব যেতে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন অন্তত ১০ হাজার যাত্রী। আকাশপথে ওমরাহ যাত্রী ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যগামী যাত্রী ও প্রবাসী চাকরিজীবীরাও পড়েছেন এই টিকিট সংকটে।

ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বলছে, চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে সরাসরি সৌদি আরব যাওয়ার বাহন হচ্ছে রাষ্ট্রীয় বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি আরবের সরকারি বিমান সংস্থা সাউদিয়া এয়ারলাইনস। এর মধ্যে আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমানের সব টিকিট শেষ; সাউদিয়ার টিকিটের অবস্থাও অনুরূপ। ৩০ মের পর টিকিট মিললেও সেগুলো তিন থেকে চার গুণ বেশি দাম পড়ছে। এই অবস্থায় নির্দিষ্ট সময়ে, বিশেষ করে রমজানের মধ্যে ওমরাহ করতে চাওয়া ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস বাংলাদেশের (আটাব) নেতা আবু জাফর বলেন, ‘সৌদি সরকার বাংলাদেশের জন্য ওমরাহ ভিসা সহজ করায় আগের বছরের চেয়ে অন্তত চার গুণ বেশি ওমরাহ ভিসা পেয়েছেন আবেদনকারীরা।

এত বিপুলসংখ্যক যাত্রী কিভাবে সৌদি আরবে যাবেন তার ব্যবস্থা করা হয়নি। এই কারণে যাত্রী বেশি, ফ্লাইট কম।

ফলে টিকিট মিলছে না। এর ফলে সারা দেশে ১০ হাজারের বেশি যাত্রী নির্দিষ্ট সময়ে এবার ওমরাহ হজে যেতে পারবেন না।’
জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে সৌদি আরব যেতে চট্টগ্রাম-জেদ্দা ফ্লাইট রয়েছে শুধু বাংলাদেশ বিমানের, তা-ও সপ্তাহে তিনটি। অবশ্য ঢাকা থেকে সরাসরি সাউদিয়া এয়ারলাইনসে সৌদি আরব যাওয়া যায়। এর বাইরে চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে একাধিক বিমান সংস্থার ফ্লাইটে সৌদি আরব যাওয়া যায় শারজাহ, দুবাই, মাসকাট কিংবা কাতারে যাত্রা বিরতি দিয়ে।

ওয়ার্ল্ড লিংক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের কর্ণধার শহীদুল আলম বলছেন, ‘টিকিট সংকটে অবস্থা এমন হয়েছে যে কিছু গ্রুপ আজকে এই ট্রাভেল এজেন্সি, তো কালকে আরেক ট্রাভেল এজেন্সিতে গিয়ে ধরনা দিচ্ছে; কিন্তু টিকিট নেই। আড়াই মাস আগে ওমরাহর জন্য চট্টগ্রাম-জেদ্দা-চট্টগ্রাম ইকোনমি শ্রেণির টিকিট কিনেছি ৫২ হাজার টাকায়, এখন সেটি বেড়ে ৭২ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ভিসার মেয়াদের মধ্যে সেই টিকিট মিলছে না। আমার বিশ্বাস, অন্তত দশ হাজার ব্যক্তি ওমরাহ করতে পারবেন না শুধু টিকিট না পাওয়ায়।’

এদিকে যাত্রীরা ভিসার মেয়াদের মধ্যেই ওমরাহ হজ সম্পন্ন করার মানসে কানেকটিং ফ্লাইটে দুবাই, আবুধাবি, শারজাহ, কাতার হয়ে সৌদি আরব যাওয়ার টিকিট কিনছেন। এতে এসব রুটের ফ্লাইটে যাত্রীদের বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। এই বাড়তি চাপের কারণে সেই রুটেও টিকিটের দাম এখন চড়া। আর এতে টিকিট সংকটে পড়েছেন মধ্যপ্রাচ্যগামী নিয়মিত যাত্রী ও প্রবাসীরা।

টাকা দিয়েও টিকিট না পাওয়ার পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য জটিল অবস্থা তৈরি হবে। কারণ তারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেশে আসেন এবং ফিরে যান। তিনি বলেন, সোয়া চার শ যাত্রীর বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের নিয়মিত ফ্লাইটে যদি আড়াই শ জন ওমরাহ যাত্রী হন, তাহলে প্রবাসী কিংবা চাকরি নিয়ে যাঁরা মধ্যপ্রাচ্য যাবেন তাঁদের কী অবস্থা হবে, একবার ভেবে দেখেছেন? এ রকম হলে তো কর্মী রপ্তানিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বলছে, ঈদের পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত ওমরাহ করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তখন তো টিকিট মিলছে না। তাই এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ বিমানের বাড়তি ফ্লাইট চালুর দাবি ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ‘আপাতত সেই সুযোগ দেখছি না। কারণ মিয়ানমারে বিমান দুর্ঘটনায় উড়োজাহাজ সংকটের জন্য এরই মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে সাতটি রুটে আগামী সোমবার পর্যন্ত বিমানের ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। অবশ্য গতকাল শুক্রবার একটি আনা হয়েছে, আগামী ১০ জুন আরেকটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ লিজ এনে বিমানের বহরে যুক্ত করা হবে। এরপর বিষয়টি বিবেচনায় আনা হবে।’

Print Friendly, PDF & Email