• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

বানের গ্রাসে ১৪ জেলা, ভাসতে পারে ২৫ জেলা

নিউজ ডেস্ক: ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বানের পানিতে চলমান বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

একদিনের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে আরও ৪ জেলা। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৪ জেলায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এদিন সকাল ৯টা নাগাদ ১৫ নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে চলে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে আরও ১০ জেলা বন্যা আক্রান্ত হতে পারে। ইতিমধ্যে বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে বানভাসি মানুষের মাঝে হাহাকার দেখা দিয়েছে।

অনেকের বসতঘরে পানি ঢোকায় রান্নাবান্না করতে পারছেন না। কেউ কেউ গবাদিপশু নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছেন। তার ওপর বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কয়েকশ’ বসতঘর ও বহু ফসলি জমি।

কিছু দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করা হলেও অনেকেই ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। বন্যায় ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়ক, ক্ষেতের ফসল। ভেসে গেছে মাছের খামার। বিভিন্ন স্কুলে পাঠদান বন্ধ হয়ে পড়েছে। যুগান্তর রিপোর্ট, ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, নেত্রকোনা, সিলেট, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার জেলা বন্যা আক্রান্ত ছিল। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জামালপুর, বগুড়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। আগামী ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল এবং মানিকগঞ্জে বন্যা বিস্তৃত হতে পারে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে প্লাবিত হতে পারে রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর ও মাদারীপুরও।

বন্যা ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের এই বন্যা অন্তত দু’সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে। এজন্য তারা একে ‘মধ্যমেয়াদি বন্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। সাধারণত ৫ দিনের কম স্থায়ী বন্যাকে স্বল্প আর এর বেশি স্থায়ী হলে মধ্যমেয়াদি বন্যা বলে। তিন সপ্তাহের বেশিদিন ধরে চললে তাকে দীর্ঘমেয়াদি বন্যা বলে। তবে এবার এখন পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি বন্যা হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই বলে উল্লেখ করেন বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাধারণত তিনটি অববাহিকায় একসঙ্গে বন্যা হলে সেটা দীর্ঘমেয়াদি রূপ লাভ করে। এগুলো হচ্ছে- গঙ্গা-পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং মেঘনা অববাহিকা। বর্তমানে শেষের দুই অববাহিকায় বন্যা চলছে। এই বন্যা ২০১৭ সালের মতো ২৫ জেলায় বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা আছে। সেক্ষেত্রে দেশ একটি মধ্যমেয়াদি বন্যার কবলে পড়বে।

দেশের বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে থাকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি)। সংস্থাটির উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান শনিবার বলেন, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম, মেঘালয়, সিকিম, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে কয়েকদিন ধরে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে।

ওই পানি বাংলাদেশে নেমে আসছে। এছাড়া বাংলাদেশের ভেতরেও প্রায় সারা দেশে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে সিলেট ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টির প্রবণতা বেশি। একই অবস্থা চট্টগ্রাম বিভাগেও। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যা চলছে।

আবহাওয়া ও বন্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কেবল সিলেটের লালাখানেই বৃষ্টি হয়েছে ২২৫ মিলিমিটার, কানাইঘাটে ১৫৬ মিলিমিটার ও ঢাকায় ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এভাবে প্রায় সারা দেশে বৃষ্টির প্রবণতা বেশি ছিল। অন্যদিকে ভারতের জলপাইগুড়িতে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয় ১৫৫ মিলিমিটার, এভাবে চেরাপুঞ্জিতে ১৫০, দার্জিলিংয়ে ৬৩ এবং আগরতলায় ৪১ মিলিলিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির এই পানির গতিপ্রবাহ বাংলাদেশের দিকেই। এ কারণে চীনেও ভয়াবহ বন্যা চলছে। নেপাল এবং ভারতের বিহারেও চলছে বন্যা।

এদিকে দেশের ভেতরে এবং উজান থেকে বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে আসায় বাংলাদেশের নদ-নদীতে এমনভাবে পানি নেমে আসছে যে তা অতীত রেকর্ড পর্যন্ত ভঙ্গ করছে। ইতিমধ্যে নীলফামারীতে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে শনিবার সকাল ৯টায় পানির স্তর ছিল ৫৩ দশমিক ৩ মিটার। সন্ধ্যা নাগাদ তা আরও বেড়েছে।

এফএফডব্লিউসি জানায়, অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে দেশের ১৫ নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদীর পানি আবার ২৩ স্টেশনে বিপদসীমার ওপরে আছে। নদীগুলো হচ্ছে- সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, সোমেশ্বরী, কংস, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, ধরলা, তিস্তা, ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে। সবাইকে কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংস্থাটির অধীন স্থাপনা ও নৌযান ক্ষতিগ্রস্ত হলে সদর দফতরকে জানাতে বলা হয়েছে।

এদিকে বন্যা সামনে রেখে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি একাধিক টিম প্রস্তুত করেছে। এসব টিম বন্যার্তদের উদ্ধার তৎপরতার পাশাপাশি ত্রাণ এবং চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। সংস্থাটি বন্যা সংক্রান্ত তথ্য আহ্বান করেছে। এজন্য ৯৩৫৫৯৯৫, ৯৩৩০১৮৮,, ৯৩৩০১৮৯, ৯৩৫০৩৯৯-২২৮ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email