ফ্যাসিবাদী রাজনীতি নিষিদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান বিশিষ্টজনের
‘সাংবাদিকদের ঐক্য না থাকলে অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যাবে না’
দিনাজপুর প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে শীর্ষ নেতারা বলেছেন, সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে। গণতন্ত্র ও ন্যায়ের পক্ষে থাকতে হবে। গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য না থাকলে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকাল ১১টায় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুর আয়োজিত সাংবাদিক সমাবেশে বিএফইউজে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। সাংবাদিকদের বিদ্যমান সুবিধা বাতিল করে মালিকদের স্বার্থ রক্ষাকারী নবম ওয়েজবোর্ড সংশোধন, সাংবাদিক হত্যা নির্যাতন বন্ধ ও বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়ার দাবীতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুরের সভাপতি জিএম হিরু’র সভাপতিত্বে সাংবাদিক সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গা। প্ররধা বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে মহাসচিব এম আবদুল্লাহ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ¦ রেজিনা ইসলাম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ¦ এ্যাডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন দুলাল, আলহাজ¦ মাহবুব আহম্মেদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মকশেদ আলী মঙ্গলিয়া, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও দিনাজপুর পৌরসভার কাউন্সিলর একেএম মাসুদুল ইসলাম মাসুদ, জেলা মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদক ও দিনাজপুর পৌরসভার কাউন্সিলর শাহিন সুলতানা বিউটি, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবুজার সেতু। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুরের সাধারণ সম্পাদক মাহফিজুল ইসলাম রিপন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক ইউনিয়নের দপ্তর মোঃ আতিউর রহমান আতিক।
এছাড়াও দিনাজপুরে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মোকাররম হোসেন, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শাহিন খান, জেলা মহিলাদলের সভাপতি নাজমা মসির, জেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমান, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ সুমন, যুবদল, ছাত্রদল, মহিলাদল, শ্রমিকদলসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মী সাংবাদিকদের দাবির প্রতি সংহতি জানাতে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএফইউজে’র সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন গাজী বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যিনি এ দেশে মানুষের জন্য স্বামীহারা, পুত্রহারা হয়েছেন, তিনি জেলে দুখে দুখে মরবেন তা হতে পারে না। তাঁর মুক্তির জন্য আন্দোলন করতে হবে। তিনি বলেন, দিনে বিএনপি আর রাতে আওয়ামী লীগ এই চরিত্র নিয়ে আন্দোলন করতে পারবেন না। ১৬ কোটি মানুষের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এভাবে দুখে দুখে মরতে পারেন না। বাংলাদেশ থাকবে অথচ বেগম জিয়া জেলে থাকবেন তা হতে পারে না। গণতন্ত্র ও বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন করতে হবে। রুহুল আমিন গাজী বলেন, আমরা শুধু সাংবাদিকদের দাবী নিয়ে এখানে আসিনি। আমরা এসেছি এদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম করতে, মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। আমরা গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার পূণঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাই। কারণ গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা থাকবে না। সাংবাদিকরা সাংবাদিতকা করতে পারবেন না।
তিনি আরো বলেন, শহীদ জিয়া প্রেস ইনস্টিটিটিউট (পিআইবি) প্রতিষ্ঠা করেছেন। জাতীয় প্রেসক্লাব তিনিই প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের পশ্চিম পাশের বিল্ডিংটি বেগম জিয়া করে দিয়েছেন। মীরপুরে সাংবাদিকদের জন্য জমিটিও বেগম খালেদা জিয়া দিয়েছেন। শহীদ জিয়াই এক দলীয় শাসন থেকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। রাতের ভোটের সরকার গণতন্ত্র দেবে না। গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ত্বের স্বার্থে বেগম জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। সব শেষে বিএফইউজে’র সভাপতি রুহুল আমিন গাজী গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সকল সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএফইউজে’র মহাসচিব এম আবদুল্লাহ বলেন, সাংবাদিকদের জন্য বেতন কাঠামোই ওয়েজবোর্ড। আর এই ওয়েজবোর্ড শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলেই কার্যকর হয়েছে। অন্যান্য ওয়েজবোর্ডে সাংবাদিকদের সুবিধা বাড়ানো হলেও নবম ওয়েজবোর্ডে কামানো হয়েছে। আগের ওয়েজবোর্ডে একজন সাংবাদিক ৪০ বছর চাকরী করে ছেড়ে দেয়া বা চাকরিচ্যুত হওয়ার পর যেখানে ৮০ মাসের বেতন পেতেন বর্তমান নবম ওয়েজবোর্ডে মাত্র ৪০ মাসের বেতন পাবেন। ফলে নবম ওয়েজবোর্ডে ধারাটি সংশোধন করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে ৩৭ জন সাংবাদিক খুন হয়েছে ও অনেক সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যারা আজ আমাদের সাথে আসছেন না, তারাও সরকারের এই জুলুম নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাবেন না।
এম আবদুল্লাহ বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের সময়ের ৬ জন, এসএ টিভি’র ৬জন, এটিএন বাংলার ৫৫ জনসহ বিভিন্ন মিডিয়া থেকে অনেক সাংবাদিককে চাররিচ্যুত করা হয়েছে। সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ না হলে কেউই রক্ষা পাবেন না।
এম আবদুল্লাহ বলেন, সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ হলে জাতীয়তাবাদের সুদিন বেশী দূরে নয়।
এর আগে সমাবেশে সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুর এর কোষাধ্যক্ষ কোরবান আলী সোহেল, সহ-সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, সদস্য তাজুল ইসলাম, মতিয়ার রহমান, ও এম এম মোরশেদ উল আলম, বেলাল হোসেন রাজু, কাওছার আলী, সিকান্দার আলী কাবুলসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।