আছেন অভিজাত পরিবারের আরও অনেকে
রাজাকারের তালিকায় বঙ্গবন্ধুর আত্মীয় আবদুল হাই সেরনিয়াবাত
বরিশাল প্রতিনিধি |
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় বরিশালের আরও একাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও মৃত বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম রয়েছে। তালিকার বরিশাল অংশে ৫৮ নম্বর সিরিয়ালে নাম রয়েছে আবদুল হাই সেরনিয়াবাতের। আবদুল হাই সেরনিয়াবাত বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি সাবেক কৃষিমন্ত্রী প্রয়াত আবদুর রব সেরনিয়াবাতের একমাত্র বড় ভাই। আবুদল হাই সেরনিয়াবাতের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কাল রাতে ঢাকার মিন্টো রোডে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাসভবনে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন।
এ প্রসঙ্গে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এ. এম. জি কবির ভুলু বলেন, আবদুল হাই সেরনিয়াবাত কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কাজে জড়িত ছিলেন না। এটা খুবই দুঃখজনক। মুক্তিযুদ্ধের সময় কালীবাড়ি রোডের দুজন ব্যক্তির বাড়িতে পাক সেনাদের যাতায়াত ছিল। কিন্তু আবদুল হাই সেরনিয়াবাত কোনোভাবেই দেশবিরোধী কাজে লিপ্ত ছিলেন না।
আগরপুর সড়কের বাসিন্দা ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা মিহির লাল দত্ত। ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর একটি দল মিহির লাল দত্তের বাড়িতে গিয়ে অতর্কিতে গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলে শহীদ হন মিহির লাল দত্তের বাবা জিতেন্দ্র লাল দত্ত ও ভাই সুধির দত্ত পান্থ। গুলিবিদ্ধ হন মিহির লাল দত্ত নিজেও। তার ছেলে শুভব্রত দত্ত অভিযোগ করেন, রাজাকারের তালিকার বরিশাল সদর অংশের ৯৪ নম্বরে আছে মুক্তিযোদ্ধা মিহির দত্তের নাম, ৯৫ নম্বরে আছে শহীদ জিতেন্দ্র লাল দত্তের নাম।
বরিশাল নগরীর কাশিপুর এলাকার সম্ভ্রান্ত মুখার্জি পরিবারের কর্ণধার ছিলেন জগদিশ চন্দ্র মুখার্জি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ছিলেন যশোর কারাগারে বন্দি। অথচ তার নামও রাজাকারের তালিকায় উঠেছে বলে অভিযোগ করেন স্বজন মানিক মুখার্জি।
জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত বিমল কৃষ্ণ পালের নাম এসেছে রাজাকারের তালিকার ২৬ নম্বরে। এ অভিযোগ করেছেন তার ছেলে গৌতম পাল। উজিরপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ মোল্লার নামও রয়েছে রাজাকারের তালিকায়।
মহান বিজয় দিবসের আগের দিন রোববার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা, সংশ্নিষ্টদের পরিবার, স্বজন ও সাধারণ মানুষ।
উল্লেখ্য, বরিশালের আইনজীবী তপন চক্রবর্তী একজন তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পান। একাত্তরে তার বাবা সুধীর চক্রবর্তীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। অথচ তপন চক্রবর্তী ও তার মা শহীদজায়া উষা চক্রবর্তীর নামও এসেছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায়।
এছাড়া বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও স্বাধীনতা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি মজিবুল হক, বগুড়ায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে পরিচিত আইনজীবী মহসিন আলী, আব্দুস সালাম, তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর রউফ, পুলিশ কর্মকর্তা এস এস আবু তালেব, জয়পুরহাট মহকুমার (সাব-ডিভিশন) সাবেক গভর্নর কছিম উদ্দীন আহম্মেদ, সাবেক জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) মজিবর রহমান আক্কেলপুরি, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ফরেজ উদ্দীন মাস্টার, প্রয়াত মজিবর রহমান মাস্টার, প্রয়াত তাহের উদ্দীন মাস্টার, প্রয়াত ডা. মহসিন আলী মল্লিক, প্রয়াত হবিবর রহমান, প্রয়াত নজিবর রহমান সরদার, মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলামসহ আরও অনেকের নাম এসেছে স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায়, যারা জাতীয় বা স্থানীয়ভাবে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে পরিচিত। অনেকে আবার নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পাচ্ছেন। রাজশাহীতে রাজাকারের তালিকায় থাকা গোলাম আরিফ টিপুর নাম নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপু।