আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
দু'জনই তুখোড় ছাত্র নেতা ছিলেন
সাংবাদিকতা থেকে আ’লীগ ও জামায়াতের শীর্ষ পদে কাদের-পরওয়ার
এম আবদুল্লাহ |♦|
দু’জনই এক সময় সাংবাদিকতা পেশায় ছিলে। কর্ম জীবন শুরু সাংবাদিকতা দিয়ে। আবার ছাত্র জীবনে দুজনেই ছিলেন তুখোড় নেতা। ছাত্রদের অধিকার আদায় ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে রাজপথ কাঁপিয়েছেন। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এখন সংসদে ও মন্ত্রীসভায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। আরেকজন অষ্টম সংসদে নির্বাচিত সদস্য হিসেবে সংসদে যেমন উজ্জ্বল ছিলেন তেমনি নিজ এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নে অবদান রেখে নন্দিত হয়েছেন । এ দুজনই দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের দ্বিতীয় শীর্ষ পদে। একজনতো দ্বিতীয় মেয়াদে এ দায়িত্ব পেয়েছেন কদিন আগেই। আর দ্বিতীয় জন বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্ব) আনুষ্ঠানিক শপথের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছেন। সাংবাদিক ও মিডিয়াবান্ধব শুধু নয় কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে দু’জনেরই রয়েছে সুখ্যাতি।
ক্ষমতাসীন আ’লীগের সুসময় দোর্দণ্ড প্রতাপে দায়িত্ব পালনরত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও চরম দুঃসময়ে মামলা, হামলা আর নিপীড়নে জর্জরিত জামায়াতের নয়া সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের জীবন বৃত্তান্তে অনেকটাই সাজুয্য রয়েছে।
দু’জনই প্রথম পেশা হিসেবে নিজ দলের মুখপত্রে সাংবাদিকতা করেছেন। ওবায়দুল কাদের দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা ও লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন । কর্মজীবনের শুরুতে তিনি আওয়ামী লীগের মুখপত্র দৈনিক বাংলার বাণী (বন্ধ হয়ে যাওয়া) পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসাবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। অপরদিকে গোলাম পরওয়ার ছাত্রজীবন শেষ করে সাংবাদিকতা ও অধ্যাপনা পেশার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের খুলনা প্রতিনিধি হিসেবে তিনি বেশ কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় খুলনা প্রেসক্লাব নির্বাচনে সর্বাধিক ভোট পেয়ে তিনি কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
দলের ভেতরে বাইরে ব্যাপক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারকে নিয়োগ দিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে তাকে ২০২০-২০২২ কার্যকালের জন্য ‘সেক্রেটারি জেনারেল’ হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করান দলের আমির। বৃহস্পতিবার জামায়াতের প্রচার বিভাগ থেকে এ তথ্য গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।
দুই নেতার জীবন বৃত্তান্ত ঘেটে দেখা যায় বয়সের ব্যবধান ৮ বছর ৭ দিন। ওবায়দুল কাদেরের জন্ম ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি, নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে। বাবা মোশারফ হোসেন কলকাতা ইসলামি কলেজে পড়াশোনা করেছেন যিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠী ছিলেন। মা ফজিলাতুন্নেসা গৃহিনী। ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী ইসরাতুন্নেসা একজন আইনজীবী। কোনো সন্তান নেই এই দম্পতির।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ১৯৫৯ সালের ৮ জানুয়ারী খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার শিরোমণি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। পারিবারিক জীবনে তার পিতা-মাতা, ৫ ভাই, ৫ বোন, স্ত্রী, ২ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তান রয়েছে। শিরোমণি হাইস্কুল, বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও আযম খান বাণিজ্য বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে যথাক্রমে এস.এস.সি, এইচ.এস.সি, বিকম অর্নাসসহ (হিসাব বিজ্ঞান) এম.কম পাস করেন।
ওবায়দুল কাদের কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান নিয়ে এইচএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা ওবায়দুল কাদের ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে গণঅভুত্থান এবং ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নিজ এলাকা কোম্পানিগঞ্জ ফিরে গিয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে জীবনের বিভিন্ন সময়ে তিনি একাধিকবার কারাবরণ করেছেন। এরমধ্যে ১৯৭৫ এর পর এক নাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুইবার ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ারও ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত। ১৯৭৪ সালে তিনি জাসদ ছাত্রলীগে যোগদান করেন। ১৯৭৭ সালের শেষার্ধে ইসলামী তিনি ইসলামী আদর্শভিত্তিক ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হন। প্রতিষ্ঠালগ্ন হতেই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে জড়িত হন এবং তিনি বিভিন্ন মেয়াদে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ফুলতলা থানা সভাপতি, খুলনা সদর থানা সভাপতি, বিএল কলেজ সভাপতি, কমার্স কলেজ সভাপতি এবং ১৯৮৪-৮৫ সেশনে খুলনা মহানগরীর সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১৯৯৬ সালের ১২ জুন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং যুব ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন । ২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সংস্কৃতি ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ২০০২ সালে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সাল পর্যন্ত এ পদে ছিলেন তিনি। এ পদে থাকার সময়ই তিনি এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ মার্চ গ্রেফতার হন। ১৭ মাস ২৬ দিন কারাগারে ছিলেন তিনি। পরে দলের সর্বোচ্চ ফোরাম প্রেসিডিয়ামে ঠাঁই পান তিনি। ২০০৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্ত হন। তিনি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর পুনরায় দ্বিতীয়বারের মত নোয়াখালী-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ওবায়দুল কাদের। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিতর্কিিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নোয়াখালী-৫ আসন থেকে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১২ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী হন তিনি। ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে তিনি ২০১৬-২০১৯ মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচনে চতুর্থ দফা সংসদ সদস্য ও একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন। সর্বশেষ ২১তম কাউন্সিলে দ্বিতীয় দফায় দলে দ্বিতীয় শীর্ষ পদে আসীন হয়েছেন।
অন্যদিকে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ আসনে (ফুলতলা ও ডুমুরিয়া) নির্বাচনী এলাকা থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জোট সরকারের ৫ বছরে তিনি ডুমুরিয়া-ফুলতলায় প্রায় সোয়া তিনশত কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছেন বলে জামায়াতের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে । এত উন্নয়ন কার্যক্রম ৩০ বছরে এ এলাকায় কোন এমপি করতে পারেননি বলে উল্লেখ করা হয়েছে । বিশেষ করে ডুমুরিয়া-ফুলতলার সন্ত্রাস দমনে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের দু:সাহসিক ভূমিকা শুধু তার এলাকার জনগণের জীবনেই শান্তি এনে দেয়নি বরং বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে বলে জামায়াতের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে ।
দুই বছর তিনি খুলনা ইসলামিয়া কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ছাত্রজীবন শেষ করেই তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন।
১৯৯৬-২০১১ সাল পর্যন্ত খুলনা মহানগরী জামায়াতের আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করছেন এবং ২০১৭ সালের জানুয়ারী থেকে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ১৯৯৪ সালে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে তিনি মেয়র পদে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন।
১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী দুঃশাসন বিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি খুলনা জেলা ও মহানগরী চারদলীয় জোটের অন্যতম কো-কনভেনর ছিলেন। ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে তিনি ১ লাখ ৬ হাজার ভোট পেয়ে খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
প্রস্তাবিত নতুন শ্রম আইন লেবারকোড’ ১৯৯৪-এর শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ধারাসমূহ বাতিলের দাবিতে জাতীয়ভাবে গঠিত ‘লেবারকোড’ ‘৯৪ প্রতিরোধের জাতীয় সমন্বয় কমিটি’র খুলনা যশোর অঞ্চলের তিনি প্রথম উদ্যোক্ত ও আহ্বায়ক ছিলেন।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের আপোসহীন বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে ২০১০ সালের ৩০ জুন খুলনার একটি মিছিল থেকে গ্রেফতার করে কারাবন্দী করা হয়। তারপর থেকে দফায় দফায় জেলগেট থেকে ও রাজনৈতিক সভা থেকে তাকে গ্রেফতার করে দীর্ঘ দিন তার উপর কারানির্যাতন চালানো হয়। এ সরকারের শাসন আমলে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর তিনি কারা নির্যাতন ভোগ করেন। এ সময়ে তাঁকে প্রায় ৩০ দিন রিমান্ডে নিয়ে তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।
সামাজিক কার্যক্রম ও শিক্ষা প্রসারে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বিভিন্ন সময়ে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জাপান, থাইল্যান্ড, সৌদি আরব, সুইজারল্যান্ড, ব্রিটেন, তুরস্ক প্রভৃতি দেশ সফর করেন।