আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
নিত্যপণ্যে বেসামাল ২০১৯
সিন্ডিকেটের মূল্যত্রাসে হিমশিম খেয়েছে সব শ্রেণির ভোক্তা
এবিএন হুদা |♦|
বছর শেষে পেঁয়াজের ঝাঁজে নাকাল হয়েছে ভোক্তা। ভয়াবহ এ সংকটে পেঁয়াজ ইস্যুতে সরকারের ভাবমূর্তিতে টান লেগেছে। গত সেপ্টেম্বরের পর থেকে এ পর্যন্ত রাজধানীতে নিত্যদিনের এ পণ্যটি কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হয়েছে সর্বোচ্চ ২৫০-৩০০ টাকা কেজি। বিভিন্ন অঞ্চলে পণ্যটি কিনতে খরচ হয়েছে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকারও বেশি । পরিস্থিতি এতটাই অস্বাভাবিক ছিল, নিত্যদিনের এ পণ্যটি নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা করা হয়েছে। সঙ্গে সরবরাহ বাড়াতে বিমানে করেও আনা হয় পেঁয়াজ। তবুও যে হারে দাম বেড়েছিল, সে হারে কমেনি। বরং বাড়তি দাম নিয়ে নতুন বছর শুরু হতে যাচ্ছে।
এদিকে শুধু পেঁয়াজ নয়, বছর শেষে চাল নিয়েও চালবাজি করেছে মিলাররা। দেশে চালের কোনো ধরনের ঘাটতি না থাকলেও মিলাররা হু হু করে দাম বাড়িয়েছে। তারা সিন্ডিকেট করে কারসাজির মাধ্যমে মোটা থেকে শুরু করে সরু ও সব ধরনের চালে কেজিতে ৬ থেকে সর্বোচ্চ ১০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এতেই শেষ নয়। বছরের শেষে কারসাজি করে ভোজ্যতেলের দামও লিটারে ৫-১০ টাকা বাড়িয়েছে আমদানিকারকরা। এছাড়া বাজারে আটা-ময়দাসহ আদা-রসুনের দামও বাড়ানো হয়েছে। সব মিলে বছর শেষে নিত্যপণ্য কিনতে সিন্ডিকেটের মূল্যত্রাসে হিমশিম খেয়েছে সব শ্রেণির ভোক্তা।
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, এ বছরের শেষদিকে বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। তবে এ পরিস্থিতি যেন নতুন বছরে না হয়, এজন্য বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে। এছাড়া সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নিত্যপণ্যের সঠিক চাহিদা ও জোগানের চিত্র রাখতে হবে। বাজারে নিত্যপণ্যের কোনো ধরনের সরবরাহের ঘাটতি দেখা দিলে, আগে থেকেই যাতে আমদানি করে সরবরাহ বাড়ানো যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভারত ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজের রফতানি মূল্য বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করার পর এর দাম হু হু করে বেড়ে যায়। এ খবরে সেদিন দেশের খুচরা বাজারে ২৫-৩০ টাকা বাড়িয়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৮০ টাকায়। এই দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলে এর দাম আরও লাফিয়ে বাড়তে থাকে। ওই দিন দাম বেড়ে ওঠে ১২০ টাকা কেজি।
এরপর ৯ নভেম্বর কেজিতে ১০ টাকা কমে দেশি পেঁয়াজের দর হয় ১০০-১১০ টাকা; যা ১২ নভেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। পরে তীব্র সংকটের কথা বলে ১৩ নভেম্বর এক লাফে পেঁয়াজের দর কেজিতে বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০-১৬০ টাকা। ১৪ নভেম্বর দিনের শুরুতে ১৬০-১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়; যা দিন শেষে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজির দাম সর্বোচ্চ ২২০ টাকায় উঠে। পরের দিন ১৫ নভেম্বর শুক্রবার আরও এক দফা বাড়ে পেঁয়াজের দাম। সেদিন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ২৫০ টাকা; যা শনিবার ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তবে ১৮ নভেম্বর পেঁয়াজের দাম কমে হয় ২২০-২৩০ টাকা। পরের দিন পণ্যটির দাম আরও এক দফা কমে ১৮০-১৯০ টাকা হয়। ২৪ নভেম্বর দেশি পেঁয়াজের দাম আবারও বেড়ে হয় ২২০-২৩০ টাকা। ২৫ নভেম্বর দাম বেড়ে হয় সর্বোচ্চ ২৫০-২৬০ টাকা। এছাড়া ১০ ডিসেম্বর সর্বশেষ প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৪০-২৫০ টাকা দরে। তবে বাজারে নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় ও আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে আসতে থাকায় কিছুটা কমেতে শুরু করেছে। ১৩ ডিসেম্বর শুক্রবার প্রতিবেদন তৈরি করার শেষ সময় পর্যন্ত খুচরা বাজারে নতুন দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১১০-১৪০ টাকা। তবে সংরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে- দাম কমলেও গত বছরের এ সময়ে বাজারে দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৫-৩৫ টাকা। সে অনুযায়ী বছরের তুলনায় পেঁয়াজের দাম এখনও ২৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে মিলারদের কারসাজিতে ২১ নভেম্বর থেকে বাড়তে থাকে চালের দাম; যা এখনও বাড়তি দরেই বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এ দিন প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫০ টাকা- যা তিন সপ্তাহ আগে ছিল ৪২-৪৪ টাকা। বিআর-২৮ বিক্রি হয়েছে ৩৮-৪০ টাকায়- তিন সপ্তাহ আগে যা ছিল ৩৪-৩৫ টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকায়, তিন সপ্তাহ আগে তা বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৩২-৩৩ টাকা। এছাড়া আমদানি মূল্য বাড়ার অজুহাতে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় আমদানিকারকরা। সম্প্রতি রাজধানীর বাজারগুলোতে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ৮৫-৯০ টাকায়, যা দাম বাড়ার আগে ছিল ৭৮-৮০ টাকা। পামঅয়েল লিটারে ৫ টাকা বেড়ে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, নতুন বছর থেকে নতুনভাবে বাজার তদারকি শুরু হবে। এজন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। অসাধুরা যাতে কোনোভাবে ভোক্তাকে জিম্মি না করতে পারে- এজন্য সব সময় মনিটরিং টিম মাঠে থাকবে। কোনো অনিয়ম পেলেই কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।