গুগলের লোকেশন বিশ্লেষণ

বাংলাদেশে ঘরে সময় কাটানো বেড়েছে, কর্মক্ষেত্রে মানুষের উপস্থিতি কমেছে ৬০ শতাংশ

নিউজ ডেস্ক |

নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলার অংশ হিসেবে বিশ্বের প্রায় সব দেশই শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, লকডাউন করা কিংবা কারফিউ জারির মতো নানা কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এসব পদক্ষেপ মানুষ কতটুকু মানছে তা নির্ণয়ের চেষ্টা করেছে সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট ‘গুগল’। তাতে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মানুষ ‘মোটামুটি’ সরকারের নির্দেশনা মেনে চলছে। বাজারঘাট, রেস্তোরাঁ কিংবা বিনোদনকেন্দ্রে যাওয়ার প্রবণতা যেমন কমেছে; তেমনি বেড়েছে ঘরে থাকার অভ্যাসও। তবে সব সূচকেই আরো ভালো করার জায়গা আছে বাংলাদেশের।

‘জীবনযাপনে পরিবর্তন’ (মবিলিটি চেঞ্জেস) শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে স্মার্টফোন কিংবা বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহারকারীদের ‘ডাটা লোকেশন’ ব্যবহার করে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশসহ ১৩০টি দেশ নিয়ে পৃথক প্রতিবেদন তৈরি করেছে গুগল। বাংলাদেশের প্রতিবেদনটি করা হয়েছে ২৯ মার্চ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে। তাতে মোট ছয়টি সূচক রয়েছে—খুচরা কেনাকাটা ও বিনোদনকেন্দ্র (রিটেইল অ্যান্ড রিক্রিয়েশন), মুদি ও ওষুধের দোকান (গ্রোসারি অ্যান্ড ফার্মেসি), পার্ক, গণপরিবহন সংশ্লিষ্ট টার্মিনাল, কর্মক্ষেত্র এবং আবাসিক ভবন। ‘রিটেইল অ্যান্ড রিক্রিয়েশন’ সূচকের মধ্যে রয়েছে চায়ের দোকান, রেস্তোরাঁ, শপিং সেন্টার, থিম পার্ক, জাদুঘর, গ্রন্থাগার কিংবা সিনেমা হলের মতো জায়গা।

বাংলাদেশের এসব জায়গায় মানুষের উপস্থিতি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৬৮ শতাংশ কমে গেছে। মুদির দোকান, কৃষি মার্কেট, ফুড ওয়্যার হাউস এবং ওষুধের দোকানে উপস্থিতি কমেছে ৪৬ শতাংশ। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২৬ শতাংশ উপস্থিতি কমেছে জাতীয় উদ্যান, সমুদ্রসৈকত ও প্রমোদতরীতে। বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে মানুষের উপস্থিতি কমেছে ৬৬ শতাংশ। এ ছাড়া স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কর্মক্ষেত্রে মানুষের উপস্থিতি কমেছে ৬০ শতাংশ।

অন্যদিকে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ঘরে থাকার প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। মানুষ এখন আগের চেয়ে গড়ে ২৪ শতাংশ বেশি সময় ঘরেই ব্যয় করছে। অর্থাৎ মানুষ আগে যদি ঘরে ১৪ ঘণ্টা থাকত, এখন থাকছে গড়ে প্রায় সাড়ে ১৭ ঘণ্টা। তবে সাধারণ মানুষ এর চেয়েও বেশি সময় ঘরে কাটাচ্ছে। কারণ চিকিৎসা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা কিংবা সাংবাদিকতার মতো জরুরি পেশায় অনেক মানুষকে ঘরের বাইরে থাকতে হচ্ছে। এ ছাড়া শাকসবজি, ফলমূল, ওষুধ কিংবা মুদি দোকানের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গেও অনেক মানুষ সম্পৃক্ত। তারাও খুব বেশি সময় ঘরে থাকতে পারেন না। সবার ‘ডাটা লোকেশন’ সমন্বয় করেই ঘরে সময় কাটানোর গড় হিসাব বের করেছে গুগল।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশে চায়ের দোকান, রেস্তোরাঁ, শপিং সেন্টার, থিম পার্ক, জাদুঘর, গ্রন্থাগার কিংবা সিনেমা হলের মতো জায়গায় মানুষের উপস্থিতি কমতে থাকে ১৫ মার্চের পর থেকে। সবচেয়ে কম উপস্থিতি ছিল ২৫ ও ২৬ মার্চ।

বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে মানুষের উপস্থিতি মোটামুটি ১৫ মার্চ পর্যন্ত ওঠানামার মধ্যেই ছিল। এরপর গিয়ে উপস্থিতি ক্রমে কমতে থাকে। আর ঘরে থাকার প্রবণতা বাড়তে থাকে ২০ মার্চের পর থেকে।

গুগলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সব মানুষের ‘ডাটা লোকেশন’ পাওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে গুগলের এই প্রতিবেদনে একেবারে বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে, সেটা বলা যাচ্ছে না।

(কালের কন্ঠের সৌজন্যে)

Print Friendly, PDF & Email