• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

‘বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সোনার বাংলা স্বপ্নে যে বিষয়গুলো বিশেষভাবে লালন করেছিলেন, তার মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার অবস্থান অন্যতম ছিল বলে জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

শুক্রবার ‘মুজিববর্ষে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণে’ শীর্ষক এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধু একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তার সোনার বাংলা আর দুর্নীতিমুক্ত বাংলা একসূত্রে গাঁথা বলে মন্তব্য করেন তিনি।

‘দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, জালিয়াতি, কালোবাজারি ও অর্থপাচার এই ধরণের অপরাধগুলো সম্পর্কে জাতির পিতা সবসময় অত্যন্ত সোচ্চার ছিলেন’ উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘১৯৭৫ সালে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ১৯৭১-এ আমি আহ্বান জানিয়েছিলাম প্রত্যেক ঘরে ঘরে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। আজ ১৯৭৫-এ আমি আহ্বান জানাই প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের উৎখাত করার জন্য, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে দেশের প্রতিটি মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতির পিতা।’

‘তিনি বলেছিলেন, সামাজিক আন্দোলন করতে পারে বুদ্ধিজীবী, শ্রমজীবী, পেশাজীবীসহ দেশের প্রতিটি মানুষ। আর পারে দেশের তরুণ সমাজ, ছাত্রসমাজ,’ যোগ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

তিনি বলেন, ‘তারুণ্যের বলে বলীয়ান এই মহান নেতা তরুণ সমাজকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করার জন্য বলেছিলেন।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আজ আমরা মুজিববর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে যদি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চাই, তাহলে এ দেশের প্রতিটি মানুষকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তার পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, সরকারের।’

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র কাঠামোতে, সরকার কাঠামোতে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থায়, বিচারিক কাঠামোতে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে প্রতিটি পর্যায়ে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তার সহায়ক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন, যার নেতৃত্বে থাকবে তরুণ সমাজ।’

‘বাংলাদেশের যত ইতিবাচক অর্জন রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের পর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন প্রতিটি পর্যায়ে তরুণ সমাজ নেতৃত্ব দিয়েছে’ উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আজকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে তারা প্রস্তুত। কিন্তু এ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে আমাদেরকে, আমাদের সরকারকে, আমাদের রাষ্ট্রকে।’

তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে মত, তথ্য প্রকাশ করলে মামলা-হামলা করা যাবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা কথা বলবে, তারা সরকারের সহায়ক শক্তি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাক-স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা অর্জিত হবে, একথা আমরা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারি না। বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনে কখনো সেটি কল্পনাও করতে পারেননি।’

দেশের তরুণ সমাজ ও সাধারণ মানুষ যেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে আমাদের সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা সরকারের দায়িত্ব, রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এটি যদি সম্ভব হয়, তাহলে আমরা সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে পারব।

Print Friendly, PDF & Email