শিরোনাম :

  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

বিএনপি মহাসচিব বরাবর মেজর হাফিজের জবাব

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর দায়িত্ব পালনে অপারগতা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ সম্পর্কিত কারণ দর্শাও নোটিশের জবাব দিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম।

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানায় মহাসচিব বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে তিনি এ জবাব দেন। বিষয়টি নয়া দিগন্তকে নিশ্চিত করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান।

চিঠিতে মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, আমি একজন যুদ্ধাহত, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। বিজয়ের মাসে শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে অসৌজন্যমূলক ভাষায় অসত্য অভিযোগ সম্বলিত কারণ দর্শনের নোটিশ পেয়ে হতবাক হয়েছি। আমি বিগত ২৯ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি সাথে সংশ্লিষ্ট, আমার যোগদানের তারিখ, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাবার তারিখ, আমার নামের বানানসহ অনেক ভুলই রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে দৃশ্যমান।

তিনি বলেন, বিএনপিতে যোগদানের পূর্বেই আমি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। ১৯৯১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থীরূপে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপিতে যোগদান করেছিলাম। আমি বিগদ ২২ বছর ধরে দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছি। দলের ভাইস চেয়ারম্যানকে একজন যুগ্ম মহাসচিব (আদিষ্ট না হয়েও) এমন কঠিন, আক্রমণাত্মক ভাষায় কৈফিয়ত তলব করায় অত্যন্ত অপমানিত বোধ করছি। এখানে প্রটোকল ও সৌজন্যের ব্যাত্যয় ঘটেছে।

তিনি আরো বলেন, ব্যক্তি রুহুল কবির রিজভী একজন ভদ্র, নিষ্ঠাবান ও ত্যাগী নেতা, তার সাথে আমার সু-সম্পর্ক রয়েছে, তার কাছ থেকে এ ধরনের চিঠি আশা করিনি।
দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেই পত্রে বর্ণিত অভিযোগ সম্পর্কে আমার নিম্নরূপ বক্তব্য পেশ করছি

১. আমাকে কখনো বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের দায়িত্ব দেয়া হয়নি।

২. জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটির আহবায়ক পদের অফার অসুস্থতার জন্য গ্রহণ করতে পারিনি। আমার বর্তমান বয়স ৭৬ বছর ২ মাস, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি কিংবা স্থায়ী কমিটিতে আমার চেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির সংখ্যা ৪-এর অধিক হবে না বলেই আমার ধারণা।

৩. দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত সভায় যোগদানের আগেই পুলিশ আমাকে ঢাকা বিমানবন্দরে গ্রেফতার করে, এ কারণেই বরিশালে যেতে পারিনি। আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল বর্তমান সরকার। বিএনপির কোনো সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে এ ধরনের মারাত্মক অভিযোগ দায়ের করার কথা আমার জানা নেই। এ মামলা ছাড়াও এক ডজন মামলায় আমি গত দশ বছর ধরে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে যাচ্ছি।

৪.৫.৬. বর্ণিত দলীয় সভায় আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অতীতে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ মহান মুক্তিযোদ্ধের সাথে জড়িত স্মরণীয় দিবসসমূহে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হতো, গত দেড় বছরে এ ধরনের অনুষ্ঠানেও দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আমাকে ডাকার প্রয়োজন বোধ করেননি। বোঝাই যাচ্ছে বিএনপিতে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে কোনঠাসা করে রাখার জন্য একটি মহল সক্রিয় রয়েছে। বিগত এক বছরে আমি জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ৬টি সভায় অংশগ্রহণ করেছি, আয়োজক জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ২টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ২টি, বিএনপি ঘরানাভুক্ত সংগঠন ১টি। দেশের খ্যাতনামা মুক্তিযোদ্ধারা এই সভাগুলোতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অসৎ উদ্দেশ্যে আমি বিএনপির বিভিন্ন কর্মকান্ডের সমালোচনা করেছি, এটি একেবারেই অসত্য ঢালাও মন্তব্য।

বিগত ১২ ডিসেম্বর প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক বিমান বাহিনী প্রধানসহ অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের এক সভায় আমি শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দেবার জন্য দাবি জানিয়েছি।

এ সময় তার দেয়া বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালে আমার দেয়া নিম্নলিখিত ৪টি বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদপত্রের পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে :

(ক) জনগণ মনে করে, যে নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করা উচিত ছিল সেটি বর্জন করেছে এবং যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিরর্থক সেটিতে অংশ নিয়ে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারকে বৈধ্যতা দিয়েছে।

(খ) ২০১৮ সালের মিড নাইট ভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর মাত্র পাচঁটি আসনে নির্বাচিত বিএনপি দলীয় এমপিদের সংসদের অধিবেশনে যোগ দেয়া উচিত হয়নি।

(গ) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দু-বছর ধরে কারাগারে অন্তঃরীণ, অথচ আমরা বিএনপি নেতারা, ছাত্রদল, যুবদল তার মুক্তির জন্য কোনো কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারিনি।

(ঘ) বিএনপি ও আওয়ামী লীগ এ দুটি প্রধান দলে গণতন্ত্রের চর্চা নেই।

এসব বক্তব্যে দলীয় সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সম্পর্কে কোনো মিথ্যা কিংবা অসৌজন্যমূলক মন্তব্য করিনি বরং আত্মসমালোচনা করেছি।

৭. প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় আমি দলীয় স্বার্থ ও শৃঙ্খলাবিরোধী কোনো বক্তব্য দেইনি। সকল প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন, এখানে আমাদের বক্তব্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রায়ই বিকৃত এবং খণ্ডিতভাবে প্রচার করা হয়। আমি ৩৪ বছর যাবৎ রাজনীতি করছি, কখনও কারো বিরুদ্ধে এমনকি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক শিষ্টাচার-বহির্ভূত বক্তব্য রাখিনি। অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধেও অনেক বক্তব্য রেখেছি, কিন্তু কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করিনি। সরকার ঘনিষ্ঠ আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মালিকানাধীন ইত্তেফাক পত্রিকায় শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, ব্যারিষ্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম এবং আমার বরাত দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কিত একটি বিতর্কিত বক্তব্য প্রকাশ করা হয়। বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন, মেজর হাফিজের বক্তব্যে নেগেটিভ কিছু নেই। ওই পত্রিকার কাটিংটি আবারো পড়ে দেখার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি কখনোই বেগম খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমান সম্পর্কে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য রাখিনি। এধরনের ঢালাও অভিযোগ এনে আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলে মনে করি।

৮. ১৩ বছর আগের জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমি একজন নগন্য রাজনৈতিক কর্মী, নিজেকে মহাসচিব ঘোষণা করেছি এটি একটি হাস্যকর বক্তব্য। প্রকৃত ঘটনা সবাই জানে। ২৯ অক্টোবর ক্ষমতার করিডোরে অবস্থানকারী সেনা কর্মকর্তারা স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যকে জোরপূর্বক সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের বাসায় নিয়ে যায়। গভীর রাতে সেখানে অনুষ্ঠিত সভায় সাইফুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও আমাকে অস্থায়ী মহাসচিব রূপে ঘোষণা করা হয়। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না, পর দিন বিষয়টি আমাকে জানানো হয়।

মেজর হাফিজ উদ্দিন আরো বলেন, সেনা সদস্যরা কয়েক দিন পরেই আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে জেলে ঢোকায় এবং সাইফুর রহমান গোপনে দেশত্যাগ করেন। ওই সময় রাজনৈতিক অঙ্গণে অনেক ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে, নেতাদের উপর অকথ্য অত্যাচার নির্যাতন করা হয়। কারো কারো কাছ থেকে ভবিষ্যতে রাজনীতি করবনা এই মর্মে মুচলেকাও আদায় করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদেরকে সেনা সদস্যরা সম্মান করে। আমি এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য লেঃ জেনারেল মাহবুবুর রহমান তাদেরকে অনুরোধ করেছিলাম বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পুনঃস্থাপিত করার জন্য। কিন্তু তারা আমাদের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়। বিএনপিকে দ্বিখণ্ডিত করার চেষ্টা আমি কখনো করিনি বরং দলকে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করেছি। আমার অনুরোধে বিতর্কিত সেনা কর্মকর্তারা বিএনপির ১০৫ জন এমপিকে ফেরদৌস কোরাইশীর নেতৃত্বাধীন কিংস পার্টিতে যোগদান থেকে বিরত রাখেন। তারা আজও বিএনপিতে আছেন।
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার আইনজীবি নওশাদ জমিরের মাধ্যমে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য আমার কাছে নির্দেশ পাঠান। সাবেক স্পীকার জমির উদ্দিন সরকার তার বাসভবনে আমাকে ও মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে বৈঠকে উপস্থিত হবার জন্য অনুরোধ করেন। আমি তাৎক্ষনিক ভাবে উপস্থিত হই, কিন্তু দেলোয়ার সাহেব আসেননি। পরদিন আমি খোন্দকার দেলোয়ার সাহেবের সাথে বারডেম হাসপাতালে একটি সংক্ষিপ্ত বৈঠকে মিলিত হই, রুহুল কবির রিজভী আমাকে সেখানে প্রবেশ করতে দেখেছেন। পরবর্তী সপ্তাহে এমপি হোষ্টেলে বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব মোঃ শাহজাহানের বাসায় খোন্দকার দেলোয়ারের সাথে দেড় ঘন্টা ব্যাপী এক বৈঠকের পর আমাদের ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়। মহাসচিব আমাকে সেনা কর্তৃপক্ষের সাথে দেন দরবার করে বিএনপিকে ক্ষমতায় নেবার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলেন। পরবর্তীকালে আমি বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়া ও খোন্দকার দেলোয়ারের নেতৃত্বে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে বলে বক্তব্য রাখি।

৯. বেগম জিয়া কারামুক্ত হবার পর আমি তার সাথে দেখা করি। জেলখানা থেকে পাঠানো তার সকল নির্দেশ পালন করেছি জানালে তিনি আমার প্রতি সদয় আচরণ করেন।আমার কার্যক্রম পর্যালোচনা করেই তিনি আমাকে ২০০৮, ২০১০ এর উপনির্বাচন, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি এজন্য কৃতজ্ঞ। আব্দুল মান্নান ভুইয়ার দলীয় সংস্কার প্রস্তাবকে বিএনপির ১০৫ জন এমপি সমর্থন দিয়েছেন। প্রবল ক্ষমতার্দপী সেনা কর্মকর্তারা ভীতি প্রদর্শন ও অত্যাচার করে তাদেরকে সংস্কার প্রস্তাবে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেছে। এদের মধ্যে মাত্র ৫ জনকে ২০০৮ এর সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

১০. আমি কখনই আমার নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির কোন কর্মীকে নাজেহাল করিনি, দলীয় কার্যক্রমেও নিষ্ক্রিয় করে রাখিনি। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর কতিপয় বিএনপি কর্মী আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের সঙ্গে আতাত করে বিএনপি কর্মীদের উপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে। বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটি লালমোহন ও তজুমুদ্দিন থানায় দু’জন নেতাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য বহিস্কার করে। এদের একজন রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষর জাল করে চিঠি ইস্যু করার কারণে বহিস্কৃত হয়। এরা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিল, বিএনপি ক্ষমতাসীন হবার পর আমাদের দলে যোগ দিয়েছিলেন, দল ক্ষমতাচ্যুত হবার পর আওয়ামী লীগে ফিরে যায়।

১১. আমার নির্বাচনী এলাকায় আমি কোনো গ্রুপিং সৃষ্টি করিনি, গোপন গ্রুপিং থাকলেও সকল নেতা-কর্মী আমার প্রতি অনুগত রয়েছে। দলের মূল কমিটি এবং অঙ্গসংগঠনের কমিটিসমূহ গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে কাউন্সিলরদের ভোটে গঠন করা হয়েছে।

ভোলা জেলা বিএনপি কমিটিও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিতিতে ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছে। আমার এলাকার আওয়ামী এমপি একজন বড় মাপের সন্ত্রাসী, নিজেই গুলি করে একজন যুবলীগ কর্মী হত্যায় অভিযুক্ত। তার অত্যাচারে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের প্রধান নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়া। অনেকেই আওয়ামী ক্যাডারদের আক্রমণে আহত হয়েছে। আমি এদের সকলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি এবং আইনজীবি নিয়োগ করে অব্যাহতভাবে আইনি সহায়তা প্রদান করে আসছি। কর্মীর মূল্যায়ন না করলে আমি কিভাবে পর পর ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি? পাকিস্তানী আমলে এ আসন থেকে আমার পিতা ডাঃ আজহার উদ্দিন আহমদও বিরোধী দলের প্রার্থী রূপে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আমরা নেতাকর্মীদের উপর অত্যাচার করার জন্য নয়, জনগণের কল্যাণ সাধনের জন্য রাজনীতি করি। একটি উপজেলাকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করেছি এবং এলাকায় শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছি বিএনপি শাসনামলে। গ্রামীণ বাজার লালমোহনকে ১ম শ্রেণীর পৌরসভ্রায় রূপান্তরিত করেছি। আমি সরকারি সাহায্য ব্যতিরেকে পাঁচটি কলেজ স্থাপন করেছি, যার চারটি আমার পিতা মাতার নামে ও ১টি আমার উপজেলার নামে। আমি অনুরোধ জানাচ্ছি আমার নির্বাচনী এলাকায় কোন নেতা-কর্মী যদি আমার নামে অভিযোগ করে, তাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। বিগত ১২ বছরে এদের নামে কোনো রাজনৈতিক মামলা হয়েছে কি না পরীক্ষা করে দেখা হোক। কেন্দ্র থেকে পাঠানো একটি টিম এলাকায় গিয়ে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করলেই সত্য প্রকাশিত হবে।
পরিশেষে আমার মূল বক্তব্য, আমি বিএনপির সর্বোচ্চ নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে কোনো অসম্মানসূচক, অসৌজন্যমূলক বক্তব্য রাখিনি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সততা ও দেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক। আমি মুক্তিযুদ্ধে তার অধীনস্থ সেনা কর্মকর্তারূপে জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছি, সম্মুখ সমরে আহত হয়েছি। ১৪ ডিসেম্বর তারিখে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সারা দিন =ব্যাপী মরণপণ যুদ্ধের পর তার নেতৃত্বে সিলেট শহর দখল করেছিলাম। ২০২০ সালের এ দিনেই আমার দল আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। আমাকে পাঠাবার আগেই চিঠির বিষযবস্তু ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় জানিয়ে দেয়া হয়েছে।এতে আমার অসংখ্য কর্মী মর্মাহত হয়েছে। এটি তো দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়, গণবিজ্ঞপ্তি প্রদানের কোনো প্রয়োজন ছিল না। আমাদের দল বর্তমানে কঠিন সময় অতিক্রম করছে। বিগত চার বছর দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় কমিটির কোন সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। বক্তব্য রাখার কোনো সুযোগই পাইনি।

আজ নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বিএনপির একজন নগন্য কর্মী হিসেবে কয়েকটি সুপারিশ পেশ করতে চাই :


(ক) ২০২১ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই দলের জাতীয় কাউন্সিল আহবান করা হোক।

(খ) দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি বাণিজ্য এবং মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে এসেছে। দলের স্থায়ী কমিটির একজন সিনিয়র সদস্যের নেতৃত্বে একটি কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করে কাউন্সিল সভার রিপোর্ট পেশ করা হোক। ভবিষ্যতে সকল নির্বাচনে দল থেকে একজনকে প্রার্থী এবং একজনকে বিকল্প প্রার্থী রূপে মনোনয়ন দেয়া হোক। এতে মনোনয়ন বাণিজ্যের সুযোগ কমে যাবে।

(গ) দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এবং অঙ্গ সংগঠনের কমিটিসমূহ কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে গঠন করা হোক। সম্প্রতি আমার নির্বাচনী এলাকায় ছাত্র দলের কমিটি কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকায় বসে গঠন করেছেন, আহবায়ককেই আমি চিনি না। ছাত্রলীগের কর্মীরাও এ কমিটিতে স্থান পেয়েছে। আমার সুপারিশকে বিবেচনা করা হয়নি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে চিঠি দিয়ে কোনো উত্তর পাইনি। ২৯ বছর সার্ভিস দেয়ার পর চিঠির একটি উত্তর আশা করতেই পারি!

(ঘ) দলের কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উথ্বাপিত হলে তদন্তের পর তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। তাহলেই সৎ, নির্লোভ, মহান নেতা শহীদ জিয়াউর রহমানের আত্মা শান্তি পাবে।


পরিশেষে বিনীত নিবেদন, আমি দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা নই, তবুও আমার উপর অর্পিত সকল দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করছি। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতার জন্য গত ছয় বছরে চারবার পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছি। আমাকে বাসা থেকে নয়, রাজপথ থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২০১৪ সালে বিএনপির ঢাকা ঘেরাও কার্যক্রমে সন্ধ্যার পর গুরুত্বপূর্ণ নেতাদেরকে না পাওয়ায় আমাকেই নেত্রীর নির্দেশে প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করতে হয়েছে। সেখানেই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলাম। দুই মাস নারায়নগঞ্জ কারাগারে বন্দী ছিলাম। দেশনেত্রীকে যেদিন কারাগারে নেয়া হয় আদালত চত্বরে আইনজীবি ব্যতিত কেবলমাত্র তিনজন স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং আমি উপস্থিত ছিলাম, টেলিভিশন চ্যানেলে সরকারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মুখর হয়েছিলাম। অথচ আজ আমার বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বেগম জিয়া জনপ্রিয়তার শিখরে অবস্থানকারী সংগ্রামী নেত্রী, তাকে অসম্মান করার প্রশ্নই আসে না। জিয়া পরিবারের কোন সদস্যের প্রতি কখনোই কটুক্তি করিনি, ভবিষ্যতেও করবো না। রাজনীতি ছেড়ে দিলেও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শ হৃদয়ে লালন করবো। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকব। আমি দেশের বৃহৎ, জনপ্রিয় দলের র্ব্ষীয়ান সদস্য, কোনো মূক ও বধির স্কুলের ছাত্র নই। আমি বিএনপির অসংখ্য নির্যাতিত নেতাকর্মীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি এবং দেশনেত্রীর সুস্থতা ও কারামুক্তি কামনা করছি।

আমার বিনীত অনুরোধ আমার বক্তব্য স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সামনে উপস্থাপন করা হোক। বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমাকে যদি দোষী সাবস্ত্য করা হয় আমি যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত আছি। আমি দলীয় নেতৃত্বের প্রতি সর্বদাই শ্রদ্ধা পোষণ করি।