গণতন্ত্র ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে সরকারঃ খালেদা জিয়া

Khaleda-02নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, বর্তমান সরকার সংবিধানে বর্ণিত জনগণের মৌলিক অধিকার সম্পূর্ণভাবে হরণ করেছে। দেশে আজ গণতন্ত্রের বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই, মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নেই।

তিনি বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে এদেশের মানুষ ‘৯০ সালে স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়েছিল-জনগণের সকল আকাঙ্খা, স্বপ্ন আজ এ্ই কর্তৃত্ববাদী সরকার তছনছ করে দিয়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনার সাথে বেইমানি করছে।
৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতন দিবস উপলক্ষে শনিবার এক বাণীতে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।

বেগম জিয়া বলেন, ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ৬ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৯০ সালের এ দিনে দীর্ঘ নয় বছরের সামরিক ও অগণতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে এক সফল আন্দোলনের পর পতন ঘটেছিলো তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের।

স্বৈরশাসক এরশাদ ‘৮২’র ২৪ মার্চ পেশাগত সততা ও শপথ ভেঙ্গে বন্দুকের নলের মুখে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সাংবিধানিক রাজনীতিকে কুঠারাঘাত করেছিলেন।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘যে বহুদলীয় রাজনীতির পুণঃপ্রবর্তন করেছিলেন স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, তার ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ণ করে ক্ষমতালিপ্সু স্বৈরাচারী এরশাদ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে ধ্বংস করে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশকে রুদ্ধ করেছিলেন।
কিন্তু ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে স্বৈরাচারকে পরাজিত করার এ দিনে শৃঙ্খলিত গণতন্ত্র মুক্ত হয়েছিল আমাদের দেশে।’

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আজকের এ দিনে আমি ‘৮২ থেকে’ ৯০ পর্যন্ত রক্তস্নাত স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আত্মদানকারী বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এ অবিস্মরণীয় দিনে আমি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী গণতন্ত্র ও মুক্তিকামী দেশবাসীকে।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছরে বাংলাদেশে গণতন্ত্র বার বার হোঁচট খেয়েছে এবং গণতন্ত্রের অভিযাত্রা ব্যাহত হয়েছে গণবিরোধী শাসনের মুখে। কিন্তু এদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ সকল বাধাকে অতিক্রম করে সকল সময়ে গণতন্ত্রের পথচলাকে নির্বিঘ্নও করেছে।

অসংখ্য শহীদের রক্তস্নাত অর্জিত গণতন্ত্র এখন আবারো সংকটের মুখে। বিনা ভোটের কর্তৃত্ববাদী সরকারের একদলীয় শাসনের চরিত্রগুলো ক্রমেই প্রকাশ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে বর্তমান শাসক গোষ্ঠির ফ্যাসিবাদী আচরণে।’

বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে আবারও সারা জাতিকে একদলীয় নিষ্ঠুর শাসনের শৃঙ্খলে বন্দী করে মানুষের সকল মৌলিক -মানবাধিকারকে বর্তমান শাসকদল তার পুরনো একদলীয় বাকশালী চেতনায় আশির দশকের গণতন্ত্র হত্যাকারী পতিত স্বৈরাচার ও ৭২-৭৫ সময়ের সন্ত্রাসীরা একজোট হয়ে দেশের সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে ধ্বংসের খেলায় মেতেছে।

সকল দলের মিলিত ইচ্ছায় যে নিরপেক্ষ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা এরা সংবিধান থেকে মুছে দিয়েছে। বর্তমান বিনা ভোটের সরকার সংবিধানে বর্ণিত জনগণের মৌলিক অধিকার সম্পূর্ণভাবে হরণ করেছে। দেশে আজ গণতন্ত্রের বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই, মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নেই। যে স্বপ্ন নিয়ে এদেশের মানুষ ‘৯০ সালে স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়েছিল-জনগণের সকল আকাঙ্খা, স্বপ্ন আজ এ্ই কর্তৃত্ববাদী সরকার তছনছ করে দিয়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনার সাথে বেইমানি করছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ ‘৯০’র চেতনায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার নতুন সংগ্রামে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আজকের এ দিনে আমি দেশবাসীকে সেই আহ্বান জানাই।’

Print Friendly, PDF & Email