ফ্যাসিবাদী রাজনীতি নিষিদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান বিশিষ্টজনের
হানিফের বক্তব্য ‘বছরের শ্রেষ্ঠ তামাশা’
নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচন কমিশন বিএনপির প্রতি সহানভূতিশীল আর ক্ষসতাসীন দলের প্রতি নির্দয় বলে আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফ যে বক্তব্য দিয়েছেন তাকে ‘বছরের শ্রেষ্ঠ তামাশা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল হক হানিফ বলেছেন যে নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে বেশি সুবিধা দিচ্ছে। তার এই বক্তব্যটিকে বছরের শ্রেষ্ঠ আলোচিত তামাশা ছাড়া মানুষ অন্য কিছু ভাবতে পারছে না।’
‘তার এই বক্তব্যে মনে হয়-ধানক্ষেত বা ধানের গোলার নিরাপত্তাহীনতায় উদ্বিগ্ন হয়ে মুষিক বিলাপ করছে গৃহস্থের কাছে,’ বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘যদি হানিফ সাহেবের কথা সত্য হয় তাহলে ঢাকা থেকে পৌর নির্বাচনী এলাকায় শাসকদলের প্রার্থীর পক্ষে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের পাঠাচ্ছে কারা ? বিএনপি মেয়র প্রার্থীর মিছিলে ককটেল ও বোমা ফাটাচ্ছে কারা ? মারণাস্ত্র দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা ও গুরুতর জখম করছে কারা।’
রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একটি নিস্ক্রিয় ‘ডাকঘরে’ পরিণত হয়েছে। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ অসংখ্য অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন নির্বিকার ও নিশ্চুপ থাকে। এই নতজানু ভূমিকার জন্য ছি ছি করছে মানুষ। কমিশনের এই ভূমিকার কারণেই লক্ষ্মীপুরবাসী তাহের আতঙ্কে ভুগছে। ফেনীর নিজাম হাজারীর লোকেরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র জমা দিতে বাধা দিয়ে।’
রিজভী বলেন, ‘বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে পৃথিবীর দেশে দেশে অতিবৃষ্টি, অতি অনাবৃষ্টি, অতি তুষারপাতের ফলে প্রাকৃতিক পটপরিবর্তন যেমন দৃশ্যমান তেমনি বাংলাদেশে আওয়ামী শাসনের ফলে সৃষ্ট অতি সন্ত্রাস, বেপরোয়া লুটতরাজ আর নজিরবিহীন দখলবাজিতে বাংলাদেশের রাজনীতির ধারাবাহিক দৃশ্যপট পাল্টে গেছে, মৃত গণতন্ত্রের অশরীরী আত্মা দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গুমরে গুমরে কাঁদছে।’
তিনি বলেন, ‘২০১১ সালে দেশব্যাপী পৌর নির্বাচন ও ২০১৩ সালে ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সশব্দ পরাজয়ের গ্লানি মেটাতে গিয়ে পরবর্তীতে সকল নির্বাচনে বন্দুক, গুম, ককটেল ও বোমার ওপর নির্ভর করছে। দেশের মানুষের কাছ থেকে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার জন্য তাদের যে নির্মম পরাজয় হয়েছে সেটি তারা কখনোই বিশ্বাস করতে চায় না। তাই এখন নির্বাচনগুলোয় দখলদারিত্ব বজায় রাখছে।’
রিজভী বলেন, ‘গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলের যে ‘আধুনিক কনসেপ্ট’ সেটিকে বিকৃত করে তারা রাষ্ট্র ও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দলবাজি টিকিয়ে রাখছে সমাজবিরোধী গ্যাংয়ের মতো। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের পর তাদের নিষ্ঠুর আচরণ এতবেশি তীব্রতর হয়ে উঠেছে যে মনে হয় তারা গণতন্ত্রের ছাইভস্মও অবশিষ্ট রাখবেন না। সরকার প্রধান ও তার সহকর্মীদের অহংকার, ঔধত্য, দুর্নীতি ও মানুষকে ক্ষমতার দম্ভে হেয় করার প্রবণতা অতীতের সকল মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে।
রিজভীর অভিযোগ, ‘২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর শাসকদলের বেআইনি গুম-খুনের কর্মসূচি বর্তমানে অপহরণ, ক্রসফায়ার আর বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মহা-উৎসবে পরিণত করা হয়েছে। আর এসব অপকর্ম-অপকীর্তিতে পারদর্শী মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, দলের ক্যাডার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বাছাইকৃত লোকজনদের উৎসবভাতাও দেয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, এখন দেশজুড়ে চলছে এক ভয়াবহ দুর্দিন। সমালোচনাকে সহ্য করার কোনো ঐতিহ্য নেই আওয়ামী লীগের। গণতন্ত্রস্বীকৃত বিরোধী দলের অধিকার ও বিরোধী মতের প্রতি জন্মান্ধ বিরোধিতা আওয়ামী লীগের। তাই যে কোনো বিরোধীতা ও সমালোচনা দমন করতে সরকার এখন ফেরাউনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।