শিরোনাম :

  • শনিবার, ৩১ মে, ২০২৫

বিতর্কিত নির্বাচনের দ্বিতীয় বার্ষিকী, পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা

0নিজস্ব প্রতিবেদকঃ  ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় বার্ষিকী মঙ্গলবার । বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের ইতিহাসে এ নির্বাচনটি বিভিন্ন দিক থেকে অত্যন্ত সমালোচিত। ভোটারবিহীন একতরফা এ নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ যেমন ছিল না তেমনি আন্তর্জাতিক মহলেও পায়নি স্বীকৃতি।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীতে সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ইতিমধ্যেই দল দুটিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ঢাকা মহানগর পুলিশ। সোমবার  ডিএমপি কিছু শর্ত সাপেক্ষে বিএনপিকে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং আওয়ামী লীগকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমণ্ডিতে রাসেল স্কয়ারে দুটি স্থানে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। তবে সমাবেশ বেলা ২ টায় শুরু ও বিকেল ৫ টায় শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি।
বিরোধী জোট দিনটি পালন করবে গণতন্ত্র হত্যার দিবস হিসেবে। আর সরকারি দল পালন করবে গণতন্ত্র রক্ষার দিবস। পাল্টাপাল্টি সমাবেশ এ সমাবেশকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনের পাসাপাশি সাধারণ মানুষের মনে সৃষ্টি হয়েছে চরম উত্তেজনা।

এর আগে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ দু’দলই সোহরাওয়ার্দী উদ্দ্যানে সমাবেশ করতে পুলিশের কাছে আবেদন করেছিল। শেষে সাংঘর্ষিক অবস্থা এড়াতে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ নিজ নিজ দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ডিএমপির কাছে পুনঃআবেদন করে। পরে এ আবেদন গ্রহণ করে ডিএমপি।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের এই দিনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও অন্যান্য সমমনা দলগুলোকে বাইরে রেখে নির্বাচনে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন শেষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামী লীগ যা গণমাধ্যমে ‘কলঙ্কিত নির্বাচন’ নামে শিরোনাম হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন মহাজোট।
নির্বাচনের আগেই ১৫৩টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়; যা দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
এর আগে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিবাদে টানা হরতাল অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি জোট। এতে দেশব্যাপী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। পরে জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতায় সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে নির্বাচন ইস্যুতে সংলাপ হলেও কোনো ধরনের সমঝোতা হয়নি। তবে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় এ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতার কথা তুলে ধরে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে অংশগ্রহণমূলক আরেকটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে, এমন আশ্বাস দেন স্বয়ং শেখ হাসিনা।

মাঠ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে আওয়ামী লীগঃ
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ওই সমাবেশকে ঘিরে রীতিমত শোডাউনেরও প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। যদিও শর্তের ভেড়াজালে অনুমতি দেয়া হয়েছে দুই দলকে সমাবেশ করার। যেখানে বলা আছে, কোনো ধরনের শোডাউন করা যাবে না।

৫ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে একই সময়ে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির ডাকা সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে ফের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সংসদের বাইরে থাকা দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আখ্যা দিয়ে এ দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়।

অপরদিকে, ওই নির্বাচনকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। উভয় দল সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে।

নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় এনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার জন্য দুই দলেরই আবেদনই বাতিল করে দেয় ডিএমপি। তবে শর্ত সাপেক্ষে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নিজ নিজ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে পারবে বলে সোমবার চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছে ডিএমপি। এর আগে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকেও উভয় দলকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়।

এদিকে, দুই দল সমাবেশ করার অনুমতি পেলেও মাঠ আওয়ামী লীগের দখলে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুপুর আড়াইটা থেকে আওয়ামী লীগের সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে অবস্থান নেবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারি রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে নেতকর্মীরাদের সতর্কতার সঙ্গে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। থানা এবং ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দ সকাল থেকেই ওই সব পয়েন্টে নেতৃত্ব দেবেন।

জানা গেছে, দুপুরের পরপরই বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেত হবেন নেতাকর্মীরা। ঢাকার আশেপাশের জেলা থেকেও সমাবেশে যোগদান হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।

রাজধানী ছাড়াও সারাদেশে শক্ত অবস্থান নিয়ে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালন করবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বিরোধীপক্ষ বিএনপির কর্মসূচি মোকবেলা করতেই আওয়ামী লীগ রাজপথ দখলে রাখতে চায়। দিবসটি উপলক্ষে বড় ধরনের শোডাউনও দেখাতে চায় দলটি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ৫ জানুয়ারির কর্মসূচি সম্পর্কে বলেন,‘এটি আমাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি। গতবারও দিবসটি আমরা ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ হিসেবে পালন করেছি।

তিনি বলেন, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা এবং গণতন্ত্র রক্ষায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের কোনো বিকল্প ছিল না। সঙ্গত কারণে দিবসটি বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্রের স্বার্থে এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে অবস্থান করবে।

শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ নিবে উজ্জীবিত বিএনপিঃ
দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। সদ্য সমাপ্ত পৌর নির্বাচনে বিএনপি ইতোমধ্যেই নিজেদের রাজনৈতিক জয় বলে দাবি করেছে। এই সমাবেশের মধ্যে তারা আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে। সরকারের দুই বছর পূর্তিতে মঙ্গলবার গণতন্ত্র হত্যা দিবস উল্লেখ করে সমাবেশের আয়োজন করেছে তারা।

এদিকে প্রকাশ্যে সমাবেশের অনুমতি পাওয়ায় উজ্জীবিত হয়ে উঠছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এজন্য নিজেদের শক্তি জানান দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন তারা।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নয়াপল্টনের সমাবেশ সর্বাত্মক সফল করতে স্বল্প সময়েই নানা পরিকল্পনা করছেন দলটির হাইকমান্ড।  সমাবেশের মাধমে ঝিমিয়ে পড়া দলটির নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।

এদিকে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমাবেশে সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বেলা ১১টার মধ্যেই নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে থাকার জন্য দলের নেতাকর্মীদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তারা।
এছাড়া ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকেও দলটির নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনের সমাবেশে অংশ নেবেন। দলীয় সূত্রে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মহানগর বিএনপির এক নেতা জানান, সরকার যেহেতু সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে তাই ভয় শংকা ছাড়াই সমাবেশের দলের নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবেন। অাত্মগোপনে থাকা অনেক নেতাদেরকে এ সমাবেশে দেখা যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

এদিকে সোমবার রাত সাড়ে ৭টায় নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলের দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ জানান, ডিএমপির অনুমতি সাপেক্ষে অবশেষে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে দলটি। মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে এ সমাবেশ শুরু হবে। এতে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

রিজভী আহমেদ জানান, সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আমাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতির কথা জানানো হয়েছে। এরপর আমরা ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমাদেরকে মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছেন। নয়াপল্টনের সমাবেশ নির্বিঘ্ন করতে আমাদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে দাবি করে তিনি আরো জানান, বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠেয় এ সমাবেশ দুপুর ২টায় শুরু হয়ে মাগরিবের নামাজের আগে শেষ হবে। এর ব্যাপ্তি হবে বামে নাইটিঙ্গেল মোড় আর ডানে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত।

সমাবেশের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সুশৃঙ্খলভাবে সমাবেশে যোগ দেবেন। সমাবেশ সফলের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ সম্পন্ন হবে।

দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘আপনার অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে সমাবেশে আসবেন, যাতে রাস্তায় বা অন্য কোথাও যানজটের সৃষ্টি না হয়। একইসঙ্গে আপনারা কোনো রকম উস্কানির মুখেও কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না।’
বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি ঢাকা মহানগরের শান্তিকামী জনগণকেও সমাবেশে যোগদানের আহ্বান জানান দলের যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।

ডিএমপির পক্ষ থেকে কী শর্তে অনুমতি দেয়া হয়েছে, জানতে চাইলে রিজভী আহমেদ বলেন, ডিএমপির শর্ত অনুসরণ করেই আমরা সমাবেশ করব। অতীতেও শর্ত মেনেই আমরা সমাবেশ করেছি। একটি সমাবেশ যেমন হয়, আগামীকালের (মঙ্গলবার) সমাবেশও তেমনই হবে।