বিএনপি’র কাউন্সিল ঘিরে দলে ব্যাপক উদ্দীপনা, চিন্তা কিছুটা কমেছে

BNP-SP--16.03.16বিশেষ প্রতিবেদন : শনিবার অনুষ্ঠেয় বিএনপি’র কাউন্সিল ঘিরে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। সবার নজর কাউন্সিলের সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে পারে কিনা সেদিকে। কাউন্সিলের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিএনপির কাউন্সিলে আমন্ত্রিত অতিথিদের স্থান সংকুলান নিয়ে চিন্তা কিছুটা কমেছে দলের নীতিনির্ধারকদের। কাউন্সিলের মূল ভেন্যু রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন। এর পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি অংশ ব্যবহারে বৃহস্পতিবার সরকার অনুমতি দিয়েছে। যদিও মাত্র ৪০ ঘন্টা আগে এ অনুমতি দেয়ায় প্রস্তুতি নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে দলটি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মোট আসন সংখ্যা ৮৩০টির মতো। হলে আসন সংখ্যার চেয়ে বিএনপির কাউন্সিলরই আছে প্রায় চারগুণ। কাউন্সিলের নিয়ম ও প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী রুদ্ধদ্বার পর্বে কেবল কাউন্সিলররাই অংশ নেন। সেখানে দলের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত অনুমোদন ও নতুন পথনির্দেশনা চূড়ান্ত হয়। যেখানে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতারা সাংগঠনিক বিষয়াদি নিয়ে খোলামেলা বক্তব্য দেবেন। বরাদ্দপ্রাপ্ত ভেন্যুতে সকল কাউন্সিলরকে বসানো সম্ভব হবে না।

এদিকে জাতীয় কাউন্সিলে আমন্ত্রিত অতিথি, বিদেশি মেহমান, সাংবাদিক, কাউন্সিলর, ডেলিগেটস ও নেতাকর্মীদের মধ্যে খাবার বণ্টনের জন্য ১৯টি টিম গঠন করেছে বিএনপি। ঢাকা মহানগরসহ দেশের ৬৪টি জেলাকে ১৯টি বৃহত্তর জেলায় ভাগ করে গঠিত এ টিমগুলোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের।

বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান আপ্যায়ন উপ কমিটির আহ্বায়ক আবদুস সালাম।

তিনি জানান, বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার নেতৃত্ব দেবেন বিএনপির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভূঁইয়া, বৃহত্তর ঢাকা জেলার নেতৃত্ব দেবেন ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী আবুল বাসার, তাকে সহযোগিতা করবেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন।

কাউন্সিলের দিন খাবার বণ্টনে বৃহত্তর রংপুর জেলার নেতৃত্ব দেবেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু,  বৃহত্তর সিলেট জেলার নেতৃত্ব দেবেন বিএনপির নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, বৃহত্তর রাজশাহী জেলার নেতৃত্ব দেবেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ, খুলনা জেলার নেতৃত্ব দেবেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব, বৃহত্তর যশোর জেলার নেতৃত্ব দেবেন এস এম জিলানী।

বৃহত্তর বগুড়া জেলার কাউন্সিলর ও ডেলিগেটসদের খাবার বণ্টনে নেতৃত্ব দেবেন বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ভিপি, কুষ্টিয়া জেলার নেতৃত্ব দেবেন জাকির হোসেন, বরিশাল জেলার নেতৃত্বে থাকবেন বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার নেতৃত্ব দেবেন মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, টাঙ্গাইল জেলার নেতৃত্ব দেবেন গৌতম চক্রবর্তী, পাবনা জেলার নেতৃত্ব দেবেন বিএনপির সহ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, দিনাজপুর বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন মুন্সি বজলুল বারী, বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার নেতৃত্ব দেবেন বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার নেতৃত্ব দেবেন ওয়াদুদ ভূঁইয়া, ও বৃহত্তর কুমিল্লাহ জেলার নেতৃত্ব দেবেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য রফিক সিকদার।

আবদুস সালাম জানান, কাউন্সিলের দিন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ মিলনায়তনের বাইরে মোট ৯টি স্পট থেকে খাবার বণ্টন করা হবে। এ ৯টি স্পট থেকে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা খাবার সংগ্রহ করে নিজ নিজ এলাকার নেতা-কর্মীদের বিতরণ করবেন। খাবার দেওয়া হবে উদ্বোধনী পর্বের পর ব্রেক আওয়ারে।

এ ছাড়া মিলনায়তনের ভেতরে আমন্ত্রিত অতিথি, বিদেশি মেহমান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা ও সাংবাদিকদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকবে। এখানে কোনো ডেলিগেটস ও নেতা-কর্মী ঢোকার সুযোগ পাবে না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, হারুন অর রশিদ, আসাদুল হাবিব দুলু,  তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা কাজী আবুল বাসার সাহাবুদ্দিন আহমেদ, বিএনপি নেতা রফিক সিকদার প্রমুখ।

এদিকে কাউন্সিলকে সামনে রেখে সার্বিক বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

কাউন্সিলে সেবা ও নিরাপত্তার বিষয়ে পরিকল্পনা ও পরামর্শের জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও অঙ্গদলের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ১০৫ সদস্যের কমিটি এ নিয়ে পরিকল্পনা করেছে।

এ বিষয়ে শৃঙ্খলা ও সেবা উপ-কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ জানান, ‘কাউন্সিল সফলে এক শ’ ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) ও ডজন তিনেক আর্চওয়ে বসানো হয়েছে। প্রায় এক হাজার শৃঙ্খলাকর্মী সার্বক্ষণিকভাবে পুরো এলাকা মনিটর করবে। বিএনপির কাউন্সিলর প্রায় ২৬০০ জন। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আসন আছে প্রায় ৮০০। কাউন্সিলের এলাকাটি যেহেতু ছোট তাই বেশি সাবধান হতে হবে।’

কাউন্সিল ব্যবস্থাপনা ও প্রচার উপ-কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জানান, বিএনপির কাউন্সিলে যে পরিমাণ কাউন্সিলর ও ডেলিগেটের উপস্থিতি ঘটবে তার জন্য বড় ভেন্যুর প্রয়োজন। কিন্তু আমরা যে ভেন্যুর অনুমতি পেয়েছি তা আসলে প্রয়োজনের তুলনায় এক-দশমাংশ বলা যায়।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বুধবার বিকেলে আমন্ত্রণপত্র দিয়ে আসেন বলেও জানান তিনি।

এ ছাড়া ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে আমন্ত্রণ জানায় বিএনপি। রাজধানীর গুলশানে ভারতীয় হাইকমিশনে গিয়ে বিএনপির আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এ আমন্ত্রণ জানান।

বিএনপি নেতারা জানান, বিদেশি ডেলিগেট ও দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী, দলের ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তো থাকছেই।

তবে কাউন্সিলের আনুষ্ঠানিকতার জন্য অডিটরিয়ামের বাইরে স্টেজ (মঞ্চ) করা হবে। এ ছাড়া বিদেশি অতিথি, সাংবাদিক, মেডিক্যাল টিমসহ আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা মূল অডিটরিয়ামের বাইরে করা হচ্ছে। রুদ্ধদ্বার বৈঠকের জন্য অডিটরিয়াম নির্ধারিত রাখা হয়েছে।

কাউন্সিলের প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ জানিয়ে আবদুল্লাহ আল নোমান জানান, বিগত ৮ বছরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেওয়া ভাষণের সংকলন, বর্তমান সরকারের আমলে বিএনপি নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের গুম-খুন-নির্যাতন এবং সংখ্যালঘুদের ওপর আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন ও তাদের সম্পদ লুণ্ঠন নিয়ে কয়েকটি প্রকাশনা থাকবে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জীবন ও কর্ম, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জীবন ও কর্ম, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জীবন ও কর্ম, বিএনপির রাজনৈতিক ইতিহাস, রাষ্ট্র পরিচালনায় বিএনপির অবদান, বিএনপির আদর্শ-রাজনীতি ও নেতৃত্ব নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের মূল্যায়ন নিয়ে এসব বই প্রকাশ করা হবে।

এ ছাড়া রাজনৈতিক গবেষক ও বিশ্লেষকদের সুবিধার্থে খালেদা জিয়ার ভাষণের সংকলনটি করা হবে। বিএনপির ইতিবাচক রাজনীতি ও আওয়ামী লীগের নেতিবাচক রাজনীতি এবং মহাজোট সরকারের নানা অপকর্ম, দুর্নীতি নিয়ে অঙ্কিত একটি কার্টুনের সংকলন থাকবে বলেও জানান তিনি।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের পূর্ব পাশে কাউন্সিলরদের আপ্যায়নের জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আপ্যায়ন উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম জানান, কাউন্সিলে অংশগ্রহণকারীদের আপ্যায়নের জন্য তার নেতৃত্বাধীন উপ-কমিটি ইতিমধ্যে ১৯টি টিম গঠন করেছে। সেসব টিমের সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকসহ তাদের প্রতিনিধিদের সমন্বয় করা হচ্ছে। কাউন্সিলে খাবারের বিষয়টি এই টিমগুলো জেলা কমিটির প্রতিনিধির সঙ্গে মিলে দেখভাল করবেন।

তিনি জানান, খাবার পরিবেশনের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি অংশ ব্যবহারের অনুমতির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

‘দুর্নীতি দুঃশাসন হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’ শীর্ষক থিম সং নিয়ে বিএনপির কাউন্সিল আগামী ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিএনপির সাংস্কৃতিক-বিষয়ক সম্পাদক ও উপ-কমিটির আহ্বায়ক গাজী মাযহারুল আনোয়ারের লেখা গানটির সুর করেছেন আহমেদ কিসলু। কণ্ঠ দিয়েছেন কণ্ঠশিল্পী মনির খান ও রিজিয়া পারভীন। এ ছাড়া আন্দোলন ও গণমুখী গান, চিত্রনাট্য, নাচের সমন্বয়ে পুরো পর্বটি হবে রাজনৈতিক বক্তব্যধর্মী। জাতীয় ও দলীয় সংগীতসহ পুরো পর্বের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন অর্ধশতাধিক খ্যাতিমান শিল্পী।

Print Friendly, PDF & Email