ইতোমধ্যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

147426_1ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা সব সময় অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে। তুরস্কের জনগণ সেনা অভ্যুত্থান মোকাবেলা করে প্রমাণ করেছে জনগণই ক্ষমতার উৎস।

রবিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন আসেম সম্মেলনে তখনই ফ্রান্সে হামলার ঘটনার খবর আসে। আমি তখনও নিন্দা জানিয়েছি, এখনও নিন্দা জানাচ্ছি। এরপরই তুরস্কের সেনা অভ্যুত্থানের খবর আসে।

তিনি বলেন, আসেম সম্মেলনে আমি আমার বক্তব্যে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা তুলে ধরি। পাশাপাশি জঙ্গিবাদের মদদদাতা, অর্থদাতা, অস্ত্রদাতাদের খুঁজে বের করতে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসেম সম্মেলনে যোগ দেয়ার পাশাপাশি আমি বাংলাদেশের গুলশানে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে জাপানের প্রধানমন্ত্রী, ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতিকে সরকারের চলমান তদন্ত সম্পর্কে জানাই।

যার যার অবস্থান থেকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থানের আহ্বান

যারা যার অবস্থানে থেকে সবাইকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, আতঙ্ক সৃষ্টি করাই ছিল গুলশানে হামলার উদ্দেশ্য। তবে মানুষের জীবন চলমান, জীবন থেমে থাকে না।

যারা ধর্মের নামে তরুণদের জঙ্গিবাদে জড়াতে উসকানি দিচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সব সময় সন্ত্রাবিরোধী, জঙ্গিবাদবিরোধী। বাংলাদেশের মানুষকে সব সময় এর বিরুদ্ধে সচেতন থাকতে হবে। যারা যার অবস্থানে থেকে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’

ঢাকার গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সাম্প্রতিক দুটি জঙ্গি হামলার ঘটনার প্রেক্ষাপটে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, যাদের কোনো অভাব নেই, ভালো খায়, ভালো পড়ে, তারাই এখন জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘যেখানে তাদের জন্য কোনো কিছুই অপূরণীয় থাকে না, সেখানে কেন তারা এটা করছে, এর যৌক্তিকতা কী?’

হাসিনা বলেন, ‘তারা এখন বেহেস্তের হুর পরী পাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, এর কী যৌকিক্ততা? কারা তাদের পেছন থেকে উসকাচ্ছে?’

এই তরুণদের কারা অস্ত্র দিচ্ছে, কারা অর্থ যোগাচ্ছে, তাদের তথ্য সম্মিলিতভাবে খুঁজে বের করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মানুষ খূন করলে বেহেস্তের দড়জা খোলে না।’

আরো হামলা হতে পারে- সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে এক সাংবাদিক জানতে চান, এ বিষয়ে সরকারের কাছে কোনো তথ্য আছে কি না।

উত্তরে প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদকে একটি বৈশ্বিক হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, ‘একবার যখন ঘটেছে, এরা তো বসে থাকবে না, ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে।’

ইতোমধ্যে জাতীয় ঐক্য হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে একজন সাংবাদিক জানতে চান, গুলশান হামলার পর জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন অনেকে। এই ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন আছে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন কি না?

উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য ইতোমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। যারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, তাদের কথা আলাদা। এদের বাইরে যাদের মধ্যে ঐক্য দরকার, তাদের মধ্যে ঐক্য হয়েছে।’

আরেক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলছে, তাদের সঙ্গে আলোচনায় না বসলে উগ্রবাদ বন্ধ হবে না।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের (রাজনৈতিক দল) এই কথার অর্থ মনে হয়, তাদের সঙ্গে বসলে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস বন্ধ হবে, নইলে তারা তা চালিয়েই যাবে।’

মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটরে অনুষ্ঠিত একাদশ এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলনে (আসেম) যোগদান শেষে প্রধানমন্ত্রী আজ রবিবার সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুন উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email