শিরোনাম :

  • মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫

করোনার তথ্য নিয়ে সরকার জনগনের সাথে প্রতারণা করছেঃ মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক |

করোনাভাইরাস সংক্রামণে সরকারি তথ্য-উপাত্ত ‘সঠিক’ নয় দাবি করে ‘সরকার জনগনের সাথে প্রতারণা করছে’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বুধবার দুপুরে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন ‘‘ আজকে সরকারের তরফ থেকে যে আক্রান্ত, অসুস্থ, সুস্থ এবং মৃত্যুর যে ডাটাগুলো দেয়া হচ্ছে-আমার তো মনে হয় বাংলাদেশের কোনো মানুষ তা বিশ্বাস করে না। এটা বিজ্ঞানের কথা। সংক্রামণ যখন বাড়ছে, উপর দিকে যাচ্ছে তখন মৃত্যু ২/৩/৪ এ এসে পৌঁছাছে। অথচ সেদিনই আপনার ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক তিনি বলছেন যে, আমার এখানে ৩১ জন মারা গেছেন, কয়েকজনের ডায়গোনেসিস হয়েছে করোনা পজেটিভ, বাকীদেরটা আমরা এখন পর্যন্ত টেস্ট করিনি।আমাদের কাছে তথ্য হচ্ছে যে, টেস্ট করা হয় না, নির্দেশটা হচ্ছে টেস্ট করতে মাঝে মাঝে।”

‘‘ এটাকে কী সরকার বলবেন আপনারা? যাদের এতোটুকু দায়িত্ববোধ নেই্, যারা চরম দুর্দিনেও জনগনকে সঠিক তথ্য দিচ্ছে না, জনগনের বিভ্রান্ত করছে, জনগনকে প্রতারণা করছে। এটা ক্রিমিনাল অফেন্স ছাড়া কী বলব আমরা?”

মির্জা আলমগীর বলেন, ‘‘ আজকে প্রশ্ন হচ্ছে জীবনের, প্রশ্ন হচ্ছে, নার্থিং ইজ মোর প্রেসাচ দেয়ার লাইফ। আর এরা খুলে দিয়েছেন শপিং মল। কেনো? ঈদের বাজার করতে হবে আর অর্থনীতিকে চালু রাখতে হবে। এতোদিন কী করলেন? এই যে মধ্য আয়ের দেশে চলে গেলেন, অর্থনীতি আপনার রোল মডেল বিশ্বের মধ্যে। কেনো বর্তমান অবস্থাকে ধারণ করার মতো শক্তি এই ইকোনমীর তৈরি হয়নি। কারণ আপনারা পুরোটাই মিথ্যা কথা বলেছেন, মানুষকে প্রতারণা করেছেন, ভুল বুঝিয়েছেন।”

‘‘ আমরা খুব পরিস্কারভাবে বলতে চাই, আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। যখন স্বাভাবিক অবস্থা ছিলো তখনও ব্যর্থ হয়েছেন, আজকে যখন যুদ্ধাবস্থা বলা যেতে পারে চরম দুযোর্গ-মহামারী, সেই সময় রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে। আমরা যখন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি তখন আপনি সেটাকে নাকচ করে দিয়ে বলেছেন যে কোনো দরকার নেই।”

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেন বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আমাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেব অত্যন্ত সুবেশী এবং টিপটপ জেন্টেলম্যান। তিনি সুযোগ পেলেই বিএনপিকে আক্রমন করেন এবং তার সুন্দর সুলোলিত ভাষায় সেই আক্রমনগুলো করেন।”

‘‘ আমি একটা কথা বলতে চাই সেটা হচ্ছে যে, আপনি যে কথাগুলো বলেন, আমি কী সেটা পরে আবার শুনেন কি বলছেন? শুনা উচিত এজন্য যে, তাহলে আমি নিজেই বুঝবেন যে, জনগন আপনার কথা বিশ্বাস করছে না, তাহলে নিজেই বুঝবেন যে, এই কথাগুলো সঠিক নয়।”

‘গার্মেন্টস খুলে দিয়ে ক্ষমাহীন অপরাধ করেছে’

তৈরি পোষাক কারখানাসমূহ খুলে দিয়ে সরকার ক্ষমাহীন অপরাধ করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘‘ আজকে প্রতিটি মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এই যে গার্মেন্টসগুলোকে উনার(সরকার) খুলে দিলেন, গার্মেন্টস খুলে দিয়ে কী করলেন? বাইরের এলাকাগুলো থেকে সব চলে আসলো যারা সংক্রমিত হয়ে চলে গিয়েছিলো আবার সংক্রমিত হয়ে ফেরত আসলো। আজকের পত্রিকায় নিউজ আছে যে, কুমিল্লায় সংক্রমিত হয়ে গেছেন তিন দিন আগে, তাকে তার বাসায় ঢুকতে দেয়নি তার সন্তান-স্ত্রী, তার বোনের বাসা গেছেন, সেখানে সে মারা গেছেন।”

‘‘ এই যে ভয়াবহ পরিণতির দিকে তারা(সরকার)গোটা জাতিকে ঠেলে দিচ্ছেন-এটা আসলে আপনারা ক্ষমাহীন অপরাধ। আমি তো মনে করি যে, দিস ইজ এ ক্রিমিনাল অফেন্স। এই ধরনের ভুল, এটা ভুল নয়, এগুলো হচ্ছে ক্রিমিনাল অফেন্স। এদেশের মালিক হচ্ছে জনগন। জীবনের অধিকার তাদের ফান্ডামেন্টাল রাইট টু লিভ। সেই জায়গায় তারা আঘাত করছেন অর্থাত ইউ হেভ নট রাইট টু লিভ টু ডায়িং। কিচ্ছু যায় আসে না। অবস্থাটা আজকে সেরকম হয়ে গেছে।”

করোনাভাইরাস সংবাদ সংগ্রহের গণমাধ্যমের ভুমিকার প্রশংসা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ দেখুন-গণমাধ্যমের যারা সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিংে সংবাদ পরিবেশ করছেন তাদের কি অবস্থা। বিভিন্ন জায়গায় ছাটাই হয়ে গেছেন এই দুঃসময়ে, অনেক প্রতিষ্ঠানে বেতন-টেতন বন্ধ হয়ে আছে তিন মাস যাবত। সেখানে কিন্তু সরকারের কোনো প্রণোদনা নেই। এই যে সরকার ৯৫ হাজার কোটি টাকার একটা প্রণোদনা ঘোষণা করেছে যেটাকে আমরা বলেছি যে পুরোটাই শুভংকরের ফাঁকি। সেই প্রণোদনাতে সাংবাদিকদের কথা কিছুই বলা নেই।”

‘‘ আমি এই সভা থেকে আহবান জানাবো সংবাদ মাধ্যমের যারা মালিক আছেন তারা দয়া করে সংবাদ কর্মীদেরকে বেতন পরিশোধ করবেন, কাউকে চাকুরিচ্যুত করবেন না এই দুর্দিনে এবং তাদের প্রতি সহানুভুতিশীল হবেন। সরকারের প্রতি পরিস্কার আহবান, অবিলম্বে সকল গ্রেপ্তারকৃত সাংবাদিকদের মুক্তি দিন।”

একই সঙ্গে রাজবন্দিদেরও মুক্তির দাবিও জানান ফখরুল।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যবস্থাপনায় গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা(পিপিই)প্রদান উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। পরে রিপোর্টারদের হাতে পিপিই তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সহসভাপতি রাশেদুল হক বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিন, প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ও আতিকুর রহমান রুমন উপস্থিত ছিলেন।