শিরোনাম :

  • সোমবার, ৭ জুলাই, ২০২৫

‘গণমাধ্যম ইতিহাসের সবচেয়ে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে’

খুলনা প্রতিনিধি |
দেশের গণমাধ্যম ইতিহাসের সবচেয়ে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। গণহারে চাকরিচ্যুতি, বেতন-ভাতার অনিশ্চয়তা, নিত্যনতুন কালাকানুন জারি করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরন, নির্বিচারে কন্ঠরোধ, মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার হয়রানি এক দূর্বিষহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এমন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি বাংলাদেশে আর দেখা যায়নি। শনিবার (২ নভেম্বর) খুলনায় এক সাংবাদিক সমাবেশে বিএফইউজের শীর্ষ নেতৃৃৃবৃন্দ এ কথা বলে।

সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে সারা দেশে সাংগঠনিক সফর শুরুর কথা জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, অচিরেই ঢাকায় সাংবাদিক মহাসমাবেশের মাধ্যমে নবম ওয়েজ বোর্ড সংশোধনসহ অন্যান্য দাবি আদায়ে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সাংবাদিক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী। নগরীর হোটেল রয়্যাল ইন্টারন্যাশনালের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে মহাসচিব এম আবদুল্লাহ।

গণমাধ্যমে বিরাজমান অস্থিরতা নিরসন, গণহারে চাকরিচ্যুতি বন্ধ, প্রতারনা ও প্রবঞ্চনার নবম ওয়েজবোর্ড সংশোধন, সাংবাদিক হত্যা নির্যাতনের বিচার, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও বন্ধ মিডিয়া খুলে দেওয়ার দাবিতে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার সভাপতি মো. আনিসুজ্জামান। ইউনিয়নের সহ-সভাপতি এহতেশামুল হক শাওনের পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাসান হিমালয়।
কর্মসূচির সাথে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান, বিজেপি সভাপতি এডভোকেট লতিফুর রহমান লাবু, বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট আব্দুল মালেক, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. সেখ আখতার উজ জামান, ড্যাবের মহানগর সাধারণ সম্পাদক ডা. শওকত আলী লস্কর।
সাংবাদিক নেতৃবন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন খুলনা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি ও মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার রাশিদুল ইসলাম, দৈনিক নয়াদিগন্তের ব্যুরো প্রধান ও ইউনিয়নের সিনিয়র সদস্য এরশাদ আলী, ইউনিয়নের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক আজীজী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আলাউদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক রানা, সদস্য কে এম জিয়াউস সাদাত, সামছুল আলম খোকন, হারুন অর রশীদ, খলিলুর রহমান সুমন প্রমুখ।

বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলো না। স্বাধীনতার পর তারাই ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন দেশের সব পত্রিকা বন্ধ করে মাত্র চারটি দৈনিক পত্রিকা রেখেছিল। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেও দেশের সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তারা আমার দেশ বন্ধ করেছে। দিগন্ত টেলিভিশন, চ্যানেল ওয়ান, ইসলামী টিভিসহ অসংখ্য মিডিয়া বন্ধ করেছে। মাহমুদুর রহমান-শওকত মাহমুদসহ অসংখ্য সাংবাদিককে মিথ্যা মামলায় দিনের পর দিন কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে। প্রতিনিয়ত সারাদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। অথচ একটি ঘটনারও বিচার হচ্ছে না। এক শ্রেণির সাংবাদিকের অতিমাত্রার দালালীর কারণে সাংবাদিক সমাজ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
নবম ওয়েজ বোর্ডকে সাংবাকিদের স্বার্থ পরিপন্থী আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, নতুন ওয়েজ বোর্ডে সাংবাদিকদের

বছরে দুটি গ্রাচ্যুয়িটির স্থলে একটি করা হয়েছে। আগে সাংবাদিক কর্মচারীদের আয়কর মালিক পক্ষ দিতো। এখন তা সাংবাদিকদের পরিশোধ করতে হবে। সবচেয়ে বড় যে প্রতারণা তা হলো বলা হয়েছে, এই ওয়েজবোর্ড পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। অর্থাৎ মালিকপক্ষ তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী বেতন দেয়ার ক্ষমতা পেয়েছে। এসব ধারায় সংশোধন না এলে সাংবাকিদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
খুলনার সাংবাদিক সমাবেশ কর্মসূচি বানচাল করতে একটি গোষ্ঠী অপতৎপরতা চালিয়েছিল। তাদেরকে হুশিয়ার করে তিনি বলেন, একাত্তর সালে অস্ত্র হাতে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে আমার দেশ স্বাধীন করেছি। আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে লাভ হবেনা। বরং সাংবাকিদের স্বার্থের বিপক্ষে দাড়ানোর অপরাধে আপনারাই অস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন।
সমাবেশের প্রধান বক্তা বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাংবাদিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। ছাঁটাইকৃত সাংবাদিকরা বিএনপি কিম্বা জামায়াত সমর্থক নয়। কারণ সরকারবিরোধী মিডিয়া এখন নেই বললেই চলে। বেশিরভাগ চাকরিচ্যুত ও নির্যাতিত সাাংবাদিক সরকারেরই সমর্থক। অথচ সরকারি দলের তাবেদারি করার কারণে স্বাভাবিকভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানানোর শক্তিও তারা আজ হারিয়ে ফেলেছেন। আমার দেশ বন্ধ এবং মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করার প্রতিবাদে রাজপথের আন্দোলনে তাদেরকে আহবান জানিয়ে বলেছিলাম, আজ এই অন্যায়ের প্রতিবাদ না করলে একদিন একই পরিস্থিতিতে কিন্ত আপনাদেরও পড়তে হবে। আজ আমাদের সেই কথা সত্যিতে পরিণত হয়েছে। সরকারের তাবেদারি করে, মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে, সত্যকে ঢেকে রেখে যারা সরকারের তাবেদারি করেছেন, সেই সব মিডিয়া আজ মাসের পর মাস, বছরের পর বছর তার সাংবাদিক কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছেনা। এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, জুলাই মাসে ১৮ জন, আগষ্ট মাসে ১৯ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ২৪ জন এবং অক্টোবর মাসে সারা দেশে ২৬ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এভাবে সাংংবাদিক নিপীড়নের মচ্ছব চললেও কোন প্রতিকার মিলছে না।