শিরোনাম :

  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

প্রথম আলো সম্পাদকের নামে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা, দোটানায় সাংবাদিক সমাজ!

ডাঃ ওয়াজেদ খান |♦|

বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় এবং প্রভাবশালী জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো। পত্রিকাটির অবহেলার কারণে রাজধানীর একজন স্কুল ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মামলা হয়েছে পত্রিকাটির বিরুদ্ধে। সম্পাদক মতিউর রহমান এবং কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হকের নামে আদালত গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেছেন। দেশে এখন সংবাদমাধ্যমের উপর একধরণের অলিখিত নিষেধাজ্ঞা চলছে। ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে আসছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা। সরকারের আর্শীবাদপুষ্ট নন এমন সাংবাদিকরা আছেন প্রচন্ড চাপে। প্রতিনিয়ত তারা শিকার হচ্ছেন নির্বতনমূলক আচরণের। প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা এবং গ্রেফতারী পরোয়ানা সরকারের মিডিয়া দমন নীতির অংশ কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দোটানায় পড়েছে সাংবাদিক সমাজ। তারা কি প্রথম আলো সম্পাদকের গ্রেফতারী পরোয়ানার প্রতিবাদ জানিয়ে তার পক্ষে দাঁড়াবেন, নাকি নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে পর্যবেক্ষণ করবেন ঘটনার পরম্পরা?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নীরব বিতর্ক। বিগত এক দশকে সরকারী হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার ও সংবাদপত্রের প্রকাশনা। কোন কোন সম্পাদক ও সাংবাদিক হয়েছেন দেশ ছাড়া। অনেকে কারাগারে। এ সময়ে মমার্ন্তিক খুনের শিকার হতে হয়েছে সাগর-রুনির মত সাংবাদিক দম্পতিকে।

অতি সম্প্রতি একটি পত্রিকা অফিস তছনছ করে দিয়েছে সরকার সমর্থক সন্ত্রাসীরা। পত্রিকাটির বয়োবৃদ্ধ সম্পাদককে গ্রেপ্তার এবং রিমান্ড শেষে নিক্ষেপ করা হয়েছে কারাগারে। উল্লেখিত এসব ঘটনায় প্রথম আলো পত্রিকাকে সহমর্মিতা প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। অভিযোগ অনেকের। উল্টো ঝড়-ঝাপটা ডান-বাম দিয়ে বয়ে যাক এধরণের মনোভাব ছিলো তাদের। এবার গতি পাল্টেছে ঝড়ের। নাড়া দিয়েছে পত্রিকাটিকে। আমাদের বুদ্ধিজীবীদের মুখে এখন কোন ভাষা নেই। নেই কোন প্রতিবাদ।

রাষ্ট্রের সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবী শ্রেনীর মনোভাবকে নিয়ে একটি কবিতা আছে জার্মান ধর্মযাজক মার্টিন নিমূলারের। “First They Came For” অর্থাৎ ‘প্রথমে তারা এসেছিলো’। কবিতাটির রচনাকাল ১৯৪৬ সাল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরপর। নাৎসী শাসনামলে হিটলার বাহিনী তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শুদ্ধিকরণ অভিযানের অংশ হিসেবে বিভিন্ন দল, মত ও ধর্মের মানুষকে গ্রেফতার করে গণহারে। এসময় দেশটির বুদ্ধিজীবী শ্রেণী ও ধর্মযাজকদের আচরণ ছিলো নির্বিকার ও কাপুরুষচিত। তারা ব্যস্ত ছিলো নিজেদেরকে রক্ষা করতে। কিন্তু শেষ রক্ষা তাদের হয়নি। পরবর্তীতে আাত্মপ্রতারিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর অপরাধবোধ, অনুতাপ ও দায়িত্ব এড়ানোর বিষয়গুলোই উঠে এসেছে মার্টিন নিমুলারের কবিতায়। কবিতাটি অভিযোজিত হয়েছে ইংরেজি ভাষায়। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের হলোকষ্ট মিউজিয়ামে বাঁধাই করা আছে কবিতার পংক্তিগুলো।
কবিতাটি ছিলো এমন—

প্রথমে তারা এসেছিলো

প্রথমে তারা এসেছিলো সমাজতন্ত্রীদের জন্য
এবং আমি কথা বলিনি-
কারণ আমি সমাজবাদী ছিলাম না।
তারপর তারা আসে ট্রেড ইউনিয়নবাদীদের জন্য
এবং আমি কথা বলিনি-
কারণ আমি ট্রেড ইউনিয়নবাদী ছিলাম না।
এরপর তারা এসেছিলো ইহুদীদের জন্য
কিন্তু আমি কোন কথা বলিনি
কারণ আমি ইহুদী ছিলাম না।
শেষে তারা আসে আমার জন্য
তখন আর আমার পক্ষে কথা বলার মতো
অবশিষ্ট ছিলোনা কেউ।
কিন্তু না। আমরা প্রথম আলোর সম্পাদকের পক্ষে কথা বলতে চাই। দাঁড়াতে চাই তারপাশে। তা তার অতীত অবস্থান যাই হোক না কেন। আমরা প্রতিবাদ করি। নিন্দা জানাই। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণকারীদের। আমরা বাঁধাহীন মত প্রকাশে বিশ্বাসী। লেখক : সম্পাদক, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ, নিউইয়র্ক।