আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
দুই মেয়র অনেক কিছু করতে পারেন
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দুই মেয়র আতিকুল ইসলাম ও শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে সাড়ে তিন মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিদায়ী মেয়র ১৩ মে পর্যন্ত দপ্তর চালিয়েছেন, মনোনয়ন না পাওয়ার পর থেকেই তিনি দৃশ্যত মনোযোগ হারিয়েছিলেন। উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিস্থিতিও ছিল তথৈবচ। বর্তমান মেয়রই নিয়মমতো নির্বাচনের আগে পদত্যাগ করায় সেখানে একজন প্যানেল মেয়র দায়িত্বে ছিলেন। আতিকুল ইসলাম তার কাছ থেকেই আবার দায়িত্ব বুঝে নেন।
নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক ও ব্যাপক কারচুপি/অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও বাস্তবতা হচ্ছে আগামী ৫ বছর তারাই নগর প্রধান। নির্বাচনের পর দায়িত্ব গ্রহণের এই ‘নিয়ম’ আমাদের কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। শপথ গ্রহণের পরপরই নতুন মেয়ররা দায়িত্ব গ্রহণ করলে নগরবাসীকে অন্তত দুই মাস অপেক্ষা করতে হতো না। এই বিলম্বে কার কী লাভ হয়েছে, আমরা জানি না। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, গুরুতর একটি সময়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুই সিটি করপোরেশন যেভাবে নাবিকবিহীন জাহাজের মতো চলেছে, তাতে নাগরিকরা নিশ্চিতভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন মেগাসিটির মেয়ররা যেখানে সম্মুখে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেখানে আমাদের ঢাকা নগরী পিছিয়ে ছিল নিছক আনুষ্ঠানিকতার কারণে!
আমরা দুই মেয়রকে অভিনন্দন জানাই। তাদের সামনে এখন অনেক দায়িত্ব। বিপুল জনসংখ্যা ও বিশৃঙ্খলার নগরী ঢাকার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন এমনিতেই সহজ নয়। এর ওপর করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা এখন দেখতে চাইব, বিলম্বে হলেও তারা সক্রিয়তা দিয়ে নগরবাসীর আক্ষেপ দূর করতে উদ্যোগী হয়েছেন। ‘নতুন’ দায়িত্ব গ্রহণ করলেও দুই মেয়রকে জনপ্রতিনিধিত্বে নবীন বলার অবকাশ নেই। দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এর আগে স্থানীয় সরকারে প্রতিনিধিত্ব না করলেও ঢাকারই একটি সংসদীয় আসনে টানা তিন মেয়াদে এমপি হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সুচারু ব্যবস্থাপনায় তার ওপর ভরসা রেখেছেন, ভুলে যাওয়া চলবে না। অন্যদিকে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে গত এক বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। আমরা দেখতে চাইব, দুই মেয়র তাদের অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা নগরবাসীর কল্যাণে কাজে লাগাবেন।
দুই মেয়রের সামনে দায়িত্ব যদিও অনেক; অগ্রাধিকার খুব বেশি হওয়ার কথা নয়। আমরা দেখছি, দায়িত্ব গ্রহণ করে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তার পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসও স্বাভাবিকভাবে এ বিষয়ে জোর দিয়েছেন। দু’জনই প্রায় অভিন্ন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ডেঙ্গু মোকাবিলায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে। আমরা মনে করি, এই দুটি বিষয়ে দুই মেয়র আন্তরিকভাবে এগিয়ে এলেই আপাত অনেক। বিশেষত করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেক প্রতিষ্ঠানই যখন প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখছে না, তখন দুই মেয়র অনেক কিছু করতে পারেন। নগরবাসী যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সেজন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করতে পারে সিটি করপোরেশন। কর্মহীন অনেক মানুষের ঘরে খাবার নেই, তাদের জন্য বাড়িয়ে দিতে পারে ত্রাণের হাত। এমনকি দীর্ঘমেয়াদে নগরের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি কী হবে, তাও ভাবতে হবে। এগুলো সিটি করপোরেশনের কাজ নয়, আমরা জানি। কিন্তু নাগরিকরা যদি স্বাভাবিক জীবন না পায়, তাহলে নগর চলবে কীভাবে?
দুই মেয়রের আরেকটি অগ্রাধিকার ডেঙ্গু মোকাবিলার ক্ষেত্রে দায়িত্ব গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতার মেঘে ইতোমধ্যে বেলা অনেকদূর উঠে গেছে, ভুলে যাওয়া চলবে না। প্রাণঘাতী এই মশকের ভরা মৌসুম বর্ষাকাল আসি আসি করছে। আবার করোনা পরিস্থিতির কারণে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক অনেক পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বই সঠিকভাবে পালন করা যায়নি। এখনই উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে। একদিকে করোনা পরিস্থিতি, অন্যদিকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব- দায়িত্ব নেওয়া দুই মেয়রের পূর্ণ মনোযোগ ও আন্তরিকতা ছাড়া সামাল দেওয়া কঠিন। আমরা দেখতে চাই, দুই মেয়র সেই কঠিনেরেই ভালোবাসার অঙ্গীকার করেছেন। কেবল অঙ্গীকার নয়, তাদের সদিচ্ছা ও সক্রিয়তা কাজের মধ্য দিয়েই প্রমাণ হচ্ছে।