ফ্যাসিবাদী রাজনীতি নিষিদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান বিশিষ্টজনের
সব অনিয়ম-প্রতারণার সঙ্গে আ.লীগের লোকজন জড়িত: রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
নির্বাচন কমিশন (ইসি) তার স্বাধীন সত্ত্বা বিলোপ করে সরকারের চাকরে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ইসি নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
আজ সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রয়াত সভাপতি শফিউল বারী বাবু ও বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল খানের রুহের মাগফিরাত কামনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তো একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট বডি, স্বাধীন সত্ত্বা। এখানে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল এক একটি শেয়ার হোল্ডার। আপনি শেখ হাসিনার কথায় দিনের ভোট রাতে করেছেন। ভোটকেন্দ্রে মানুষকে বিতাড়িত করে গরু-ছাগলকে পাঠিয়েছেন। এটার প্রতীক হলো নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনকে ধ্বংস করার প্রতীক হলো নির্বাচন কমিশন।’
তিনি বলেন, ‘এ দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য যে প্রতিষ্ঠান সেই পদ্ধতিগুলো আপনি পরিবর্তন করছেন শেখ হাসিনার কথায়। এখানে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতামত নিচ্ছেন না কারণ আপনারা তো সরকারি চাকরি করেন। আপনার তো নিজেরাই নিজেদের স্বাধীন সত্ত্বা বিলোপ করে চাকর হয়েছেন সরকারের।’
রিজভী বলেন, ‘এখন নির্বাচন কমিশনের কোনো কাজ নাই। নির্বাচন ক্ষেত্র গোরস্থানে পাঠিয়েছে, দিনের ভোট রাতে করেছে। এখন তিনি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) বিরাট কাজ দিয়েছেন। উনি ইউনিয়ন পরিষদকে পল্লী পরিশোধ করবেন, উনি উপজেলা চেয়ারম্যানকে উপজেলার পিতা করবেন- সেই কাজে হাত দিয়েছেন। যে ঐতিহ্য সংস্কৃতি সেটাকে ভাঙছেন।’
করোনা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে করোনায় আক্রান্ত সংখ্যা ২ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। গোটা বাংলাদেশে আমরা একটি মরণ যজ্ঞের মধ্যে আছি। আমি কয়েকদিন আগে কয়েকটি জেলা সফর করলাম। সেখানে অসুস্থতায় মারা যাওয়া কয়েকটি পরিবারের সাথে দেখা করতে গিয়েছি। তারা বলেছে এসব রোগীর হার্টের রোগ ও অন্যান্য রোগ ছিল বটে তবে তারা করোনায় মারা গিয়েছে। যে কয়টি বাসায় গিয়েছি করোনায় আক্রান্ত ছাড়া কেউ মারা যায়নি।’
গোটা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সরকার ভেঙে দিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব বলেন, ‘মফস্বলের হাসপাতালগুলোতে কোনো চিকিৎসা নাই। সেখানে হাসপাতালগুলোতে যাওয়া মানে মৃত্যুর সার্টিফিকেট নিশ্চিত পকেটে নিয়ে যাওয়া। এর বাইরে অন্যকিছু নেই।’
রিজভী বলেন, ‘এই সরকার শুধুমাত্র ক্রসফায়ার গুম-খুনের মধ্য দিয়ে শুধুমাত্র একটা অমানবিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু করেনি, এই সরকার সারা দেশের মানুষকে মৃত্যু কূপে ফেলে দেওয়ার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা করেছে। আজকে মেঘা প্রজেক্ট করেন, আজকে ফ্লাইওভার করেন টাকা চলে যায় কানাডায়, টাকা চলে যায় মালয়েশিয়ায়। শুনি বেগম পল্লী, শুনি সেকেন্ড হোম আর বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে ধুঁকে ধুঁকে মরে সাধারণ মানুষরা। আজ এই করোনার আক্রমণের সময় রাস্তায় ও হাসপাতালের বারান্দায় মানুষ মারা যাচ্ছে। সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভকে বলে দিচ্ছে পজিটিভ আর পজিটিভকে বলে দিচ্ছে নেগেটিভ। এই যে প্রতারণার জাল- জালিয়াতি, প্রত্যেকটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক আছে। আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেটের লোক, আওয়ামী লীগের টকশো বাজ, সব সরকারের লোক। তারপরও তারা নির্দ্বিধায় গলা উঁচু করে কথা বলে।’
তিনি বলেন, ‘সকল অমানবিকতার জন্মদাতা হচ্ছে এই সরকার। আর এই সরকার দিব্যি জনগণকে বাদ দিয়ে, গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে, জবাবদিহিতাকে কবরের মধ্যে ঠেলে দিয়ে জোর করে বন্দুক হাতে নিয়ে ক্ষমতায় বসে আছে। ক্ষমতায় বসে মানুষ করোনায় মরুক, ক্যানসারে মরুক যা খুশি তা হোক আমার চিকিৎসা ব্যবস্থার দরকার নাই। শুধুমাত্র মেগা প্রজেক্ট বানিয়ে আমাদের নেতাকর্মীরা নির্দ্বিধায় বাইরে গিয়ে বাড়ি ঘর বানিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করবে- এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের নীতি।’
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের সঞ্চালনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক শহিদুল ইসলাম বাবুল, সদস্য আকরামুল হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল প্রমুখ।
এতে অংশ নেন ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনুকুল ইসলাম শ্রাবণ, মাজেদুল ইসলাম রুমণ,সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান, আশরাফুল আলম ফকির লিংকন, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন, ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, যুগ্ম আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন নাছির, ছাত্রদল মহানগর পুর্ব সভাপতি খন্দকার এনামুল হক, মহানগর উত্তর সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন রুবেল প্রমুখ।
ডিএন/পিএন/জেএএ/৫:৫পিএম/১০৮২০২০২২