আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
গণতন্ত্র, শ্রমমান ও নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে ঢাকা আসছে মার্কিন প্রতিনিধি দল
নিউজ ডেস্কঃ বছর শুরুর সপ্তাহেই পৃথক দুটি মার্কিন টিম ঢাকা আসছে। গণতন্ত্র চর্চার পরিবেশ, শ্রমমান এবং সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি- এ তিন ইস্যু পর্যবেক্ষণই তাদের সফরের মুখ্য উদ্দেশ্য। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র বিষয়ক সিনেট কমিটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা এবং রিপোর্ট প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বতন্ত্র ওই টিম দুটির ঢাকা সফরকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। তারা এমন এক সময়ে ঢাকায় থাকছেন যখন ৫ই জানুয়ারির এক তরফা নির্বাচনের বছরপূর্তিকে ঘিরে সরকার ও সংসদের বাইরে থাকা বিরোধী জোট রাজপথে পৃথক কর্মসূচি নিয়ে সরব হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দু’বছর আগে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচন বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট বর্জন করে। সেই নির্বাচনের বছরপূর্তিকে ঘিরে গত বছরের শুরু থেকে টানা ৩ মাস দেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থা বিরাজমান ছিল। সেই সময়ে বিরোধী জোট টানা অবরোধের ডাক দিয়েছিল আর সরকারি আয়োজনে অবরুদ্ধ হয়েছিলেন জোটটির শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া। এবারও দুই দলের তরফে একই স্থানে একই সময়ে সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ঢাকা কিংবা ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে মার্কিন প্রতিনিধি দল দুটির সফরের আনুষ্ঠানিক সূচি এখনও ঘোষণা হয়নি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তাতে জানা গেছে, ৫ই জানুয়ারি ঢাকায় পৌঁছাবে প্রথম দলটি। তারা দুদিন ঢাকায় থাকবেন। দ্বিতীয় দলটি ৮ই জানুয়ারি থেকে ১১ই জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকবে। সফরকালে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও গণতন্ত্র চর্চার বিষয়গুলো দেখভালে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক ছাড়াও বিভিন্ন সেক্টরের স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে তাদের মতবিনিময় হবে। নাগরিক সমাজ ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলাদা বৈঠকে বসবেন তারা। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও সিনেট কমিটির সঙ্গে যুক্ত ওই প্রতিনিধিরা এরই মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়েছেন। তাদের আগ্রহের বিষয়টি ঢাকা ইতিবাচকভাবেই বিবেচনা করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মহাপরিচালকের (আমেরিকাস অনুবিভাগ) নেতৃত্বে সরকারি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দুটি টিমের বৈঠকের আয়োজনও প্রায় চূড়ান্ত। প্রথমে আসবে মার্কিন কংগ্রেশনাল স্টাফদের সমন্বয়ে গঠিত দলটি। আগামী মঙ্গলবার রাতে তারা ঢাকায় পৌঁছালেও বুধবার থেকে তাদের সরকারি পর্যায়ে আলোচনা শুরু হবে। সূচনা বৈঠকটি সেগুনবাগিচায়। সেখান থেকে বেরিয়ে রাত অবধি তাদের অন্যান্য কর্মসূচি রয়েছে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, শ্রম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, স্টেক হোল্ডার এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে এ দিনে ধারাবাহিক বৈঠক হবে তাদের। পরদিন বৃহস্পতিবার প্রথম টিমের সদস্যরা ঢাকা ছেড়ে যাবেন। শুক্রবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্টার টেরোরিজম ব্যুরোর দ্বিতীয় টিমটি ঢাকায় পৌঁছাবে। ১১ই জানয়ারি পর্যন্ত তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবে। তারাও আগের টিমের মতো নাগরিক সমাজ ও শ্রম সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চার স্থান (ডেমোক্রেটিক স্পেস) নানা কারণে সঙ্কুচিত হয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈশ্বিক বিভিন্ন প্রতিবেদনে এ নিয়ে বহুবার উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। গণতন্ত্রে স্টেক হোল্ডার বিশেষ করে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সংঘাতের বদলে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টিতে সদ্য বিদায়ী বছরজুড়ে কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত ছিল। সেই বিবেচনায় নতুন বছরের শুরুতেই মার্কিন টিম দুটির আসন্ন ঢাকা সফরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, হাই প্রোফাইল না হলেও ওই দুটি টিমের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছে। তারা বাংলাদেশ সফরে যা পর্যবেক্ষণ করবেন সেটি তাদের দায়িত্ব মোতাবেক মার্কিন স্টেট ডিপার্টমন্ট ও সিনেট কমিটির সংশ্লিষ্ট সদস্যদের বিবেচনায় রিপোর্ট আকারে পেশ করবেন। শ্রমমান প্রশ্নে ঘাটতি থাকার অভিযোগ এনে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে। শ্রমমান উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া ১৬ দফা কর্মপরিকল্পনার বড় অংশ বাংলাদেশ এরই মধ্যে বাস্তবায়ন করেছে। গত বছর মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের সেই অগ্রগতি সরজমিন পর্যবেক্ষণ করেছেন। যে সব কাজ এখনও বাকি রয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়নের তারা তাগিদ দিয়ে গেছেন। সমপ্রতিক সময়ে শ্রমমানের উন্নয়নে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি রয়েছে তা সফরে আসা মার্কিন টিমদ্বয়ের সদস্যদেরও কাছে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন সেগুন বাগিচার কর্মকর্তারা। তা ছাড়া এখানে দুজন বিদেশী হত্যার প্রেক্ষিতে কূটনীতিক ও বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তায় যে বৈশ্বিক উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল তার মোকাবিলায় সরকার যেসব ব্যবস্থা দিয়েছে এবং পরিস্থিতির যেভাবে দ্রুত উন্নতি হয়েছে তা-ও তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকার কর্মকর্তারা।