• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

কিশোরগঞ্জে সেতুর রেলিং ভেঙে রড না পেয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

650b5b5ae4f1d3af6d5eb7588112fdb2-57548bdb49173কিশোরগঞ্জ, দেশনিউজ.নেট: কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের কাহে ধান্দুল গ্রামে নির্মাণাধীন একটি  ব্রিজের রেলিংয়ে এবার বাঁশ দিয়ে ঢালাই না হলেও ১২ টি রড দেওয়ার কথা থাকলেও আছে মাত্র চারটি। কোথাও কোথাও দুটি রডও দেওয়া হয়েছে। যেখানে ১২ টি রড দিয়ে পাঁচ ইঞ্চি পরপর রিং দিয়ে খাঁচা তৈরি করার কথা সেখানে ব্যবহৃত হয়নি একটি রিংও।

এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের দাবি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোটা অংকের ঘুষ নেয়ায় শুরু থেকেই এর নির্মাণ কাজে কম রড-সিমেন্ট ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ঝুকিপূর্ণ ব্রিজটি ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করার দাবি এলাকার সাইফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমানসহ অনেকেই।

চলতি অর্থ বছরে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭টি ব্রিজ নির্মাণ কাজ চলছে। এরমধ্যে মেসার্স ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২৯ লক্ষ ৬১ হাজার টাকার মির্জাপরের কাহে ধান্দুল খালের উপর ৩৯ ফুট লম্বা একটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ পায়। যেটার কার্যাদেশ প্রদানের তারিখ ছিল গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর এবং কাজ শেষ করার প্রত্যাশিত তারিখ ছিল চলতি বছরের মার্চ মাসের ৩ তারিখ।

কাজের শুরু থেকেই নির্মাণকাজে কম রড-সিমেন্ট ও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ করে আসছিলেন এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে জনিয়েও কোনও ফল পাননি তাঁরা। উল্টে তাঁদেরকে হুমকি ধমকি দেয়া হয়। ফলে বুধবার দিন শত শত বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিল সহকারে ব্রিজের পাশে এসে এর প্রতিবাদ করলে নির্মাণ শ্রমিকরা জনতার চাপে এটা ভাঙতে বাধ্য হয়। তখনই বেরিয়ে আসে রেলিং থেকে খালি চারটি রড। শুধু তাই নয় এতে নিম্নমানের রড, ইটের সুরকি, সিমেন্ট ও বাজে বালু ব্যবহার করার অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজসে নামমাত্র রড-সিমেন্ট ব্যবহার করে এর কাজ শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ পরিস্থিতিতে গত বুধবার উত্তেজিত এলাকাবাসী ব্রিজের রেলিংটি ভাঙতে বাধ্য হয়। রেলিংটিতে যেখানে বারটি রডে পাঁচ ইঞ্চি অন্তর অন্তর রিং দিয়ে খাঁচা করে তাতে ঢালাই দেয়ার কখা সেখানে মাত্র দুটি কোনও কোনও জায়গায় চারটি রড দিয়েই তারা কাজটি সম্পন্ন করে ।

প্রকৌশলীর অনুপস্থিতিতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে না জানিয়েই নির্মাণ শ্রমিকরা এই ঢালাই কাজিটি সম্পন্ন করেন বলে দাবি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানের।

পাকুন্দিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু বলেন, এলাকাবাসী আমার কাছে এ ব্রিজের নির্মাণের মান খুবই খারাপ বলে অভিযোগ জানিয়েছে। আমি চাই  যেই এটার সাথে জড়িত থাকুক না কেন এর মান অবশ্যই ভালো হতে হবে।

মেসার্স ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী ইমতিয়াজ উদ্দিন অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, আমার এক স্বজন মারা যাওয়ায় আমি ঘটনাস্থলে থাকতে পারিনি। আর এই ফাঁকে নির্মাণ শ্রমিকরা এই কাজটি করে ফেলে। তবে আমি বিষয়টি জানতে পেরে তাঁদেরকে (নির্মাণ শ্রমিকদের) ভেঙে ফেলতে বলছি।

পাকুন্দিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে প্রয়োজনীয় রড ও রিং ব্যবহার না করে উপ-সহকারি প্রকৌশলীর অনুপস্থিতিতে রেলিংয়ের ঢালাই কাজ সম্পন্ন হয়েছে স্বীকার করে বলেন, কাজের মান খুবই নিম্ন মানের হয়েছে বলে আমার চোখে পড়ে। তাই আমি ঠিকাদারকে এ কাজ ভেঙে পুনরায় নতুন করে করার নির্দেশ দিয়েছি।

Print Friendly, PDF & Email