বিএফইউজে’র কাউন্সিলে প্রস্তাব : চলমান জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে সাংবাদিকদেরও অংশ নিতে হবে

pic-bfuj-300x169বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেছেন, নবম ওয়েজবোর্ড গঠনে রাজনৈতিক চালবাজি চলছে। এ ধরনের দলীয় ওয়েজবোর্ড সাংবাদিকরা মানবে না। অতীতে কখনো একতরফা ওয়েজবোর্ড হয়নি।
আজ (শনিবার) জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএফইউজের বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কাউন্সিলে মহাসচিবের রিপোর্ট উপস্থাপন করেন এম আবদুল্লাহ। বক্তব্য রাখেন, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, বর্তমান সহ-সভাপতি মুনশী আবদুল মাননান, সহকারী মহাসচিব মো: মোদাব্বের হোসেন, মোহাম্মদ শাহনওয়াজ, নুর ইসলাম, সাবেক সহসভাপতি নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হুসাইন, সাবেক কোষাধ্যক্ষ আহমেদ মতিউর রহমান, বিএফইউজের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মো: শহিদুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক আবু ইউসুফ, সাংবাদিক নেতা কায়কোবাদ মিলন, বাসসের ইউনিট প্রধান আবুল কালাম মানিক, যশোরের সাংবাদিক নেতা মোস্তফা রুহুল কুদ্দুস, চট্টগ্রামের ইস্কান্দার আলী চৌধুরী, কক্সবাজারের নূরুল ইসলাম প্রমুখ। কাউন্সিলের কোষাধ্যক্ষের রিপোর্ট পেশ করেন ওবায়দুর রহমান শাহীন।
কাউন্সিল অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশের গণমাধ্যমে যে দলন-নিপীড়ন-নিয়ন্ত্রণ ও সাংবাদিক নির্যাতন চলছে রাজনৈতিক পরিবর্তন ছাড়া তা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। চলমান যে জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম চলছে তাতে অন্যান্য পেশার মানুষের সাথে সাংবাদিকদেরও অংশ নিতে হবে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়- সব সাংবাদিক ইউনিয়নের মতামতের ভিত্তিতে অবিলম্বে নবম ওয়েজবোর্ড গঠন; আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, ৩৫টি অনলাইনসহ বন্ধ সব মিডিয়া খুলে দিতে হবে, সাগর-রুনিসহ ২৮ জন সাংবাদিক হত্যার বিচার; বিএফইউজে সভাপতি শওকত মাহমুদ, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, একুশে টিভির চেয়ারম্যান আবদুস সালামসহ সব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার; তথ্য প্রযুক্তি আইন ৫৭ ধারা, সম্প্রচার নীতিমালাসহ সব কালাকানুন বাতিল; জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে বাতিল করা ৪৩ সাংবাদিকের সদস্যপদ পুনর্বহাল এবং সব ধরনের সামাজিক মাধ্যমের ওপর আরোপিত নজরদারি ও নিষেধাজ্ঞা প্রতাহার করতে হবে।
কাউন্সিলে বিভিন্ন অঙ্গ ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রিপোর্ট পেশ করেন যথাক্রমে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের মাহবুবুর রহমান, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের আবদুল আউয়াল, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার আবদুর রাজ্জাক রানা, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের নূর ইসলাম, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সৈয়দ ফজলে রাব্বি ডলার, সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের হাসানুর রশীদ, কুমিল্লা জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের আবদুল গোফরান ভ’ইয়া, কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের শামিমুল হাসান অপু, সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুরের মাহফিজুল ইসরাম রিপন, সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের সাইফুল ইসলাম ও সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুরের দেলোয়ার হোসেন।
সভাপতির বক্তব্যে শওকত মাহমুদ বলেন, সরকারের জুলুমে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। নির্বিঘেœ মত প্রকাশের কোন অধিকার নেই। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মৌলিক অধিকার চরমভাবে লংঘিত হচ্ছে। গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা সাধারণ মানুষকে আতংকিত করে তুলেছে। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা না থাকায় মানুষ সত্য জানতে পারছেনা। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক কারণে সাংবাদিকরা চাকরি পাচ্ছে না।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জনগনের উপর জুলুম নির্যাতন চালাচ্ছে। সাংবাদিকরাও এ জুলুমের শিকার হচ্ছে। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা স্বৈরাচার এরশাদের পতন ঘটাতে যেভাবে ভূমিকা রেখেছিল বর্তমান সরকারের পতনেও সেভাবে ভূমিকা পালন করতে হবে। গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারের আন্দোলনে সাংবাদিকদেরও অংশ নিতে হবে।
এম আবদুল্লাহ বলেন, সরকার প্রচলিত বিধি-বিধান ও রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে ওয়েজবোর্ড মনিটরিং কমিটি গঠন করেছে। যাতে রেজিস্টার্ড সাংবাদিক ইউনিয়নকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সরকার সমর্থকদের সদস্য করা হয়েছে। নবম ওয়েজবোর্ড গঠনের ক্ষেত্রেও সরকার একই নীতি গ্রহণ করেছে। সাংবাদিক ইউনিয়ন বিভক্ত হওয়ার পর থেকে সব ওয়েজবোর্ড গঠনে সরকার ও বিরোধী মতাদর্শের ইউনিয়নের প্রতিনিধি সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হত। কিন্তু এবার সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তা করা হয়নি। তিনি বলেন, কোন দলকানা ওয়েজবোর্ড সাংবাদিক সমাজ মানবে না। কেবলমাত্র তাবেদার শ্রেণীর প্রতিনিধি নিয়ে ওয়েজবোর্ড গঠন করা হলে তা সাংবাদিকদের ন্যায় সঙ্গত প্রাপ্য নিশ্চিত করতে পারবে না।
এম এ আজিজ বলেন, বর্তমানে সাংবাদিকদের একটি অংশ ভালো আছে। আর একটি অংশ খুবই খারাপ অবস্থায়। সাংবাদিকদের ভাগ্য এখন রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে গেছে। এ অবস্থায় অধিকার ফিরে পেতে আন্দোলন-সংগ্রামের কোন বিকল্প নেই।
মুহাম্মদ বাকের হুসাইন বলেন, সাংবাদিকদের অবস্থা এখন খুবই করুন। সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর থেকেও নিম্নমানের জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার ওয়েজবোর্ড নিয়ে সাংবাদিকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে। তাদের অভিব্যক্তি এমন যে, ওয়েজবোর্ড একটা দিচ্ছি মালিক পক্ষ মানলে মানবে না মানলে সমস্যা নেই। তিনি রুটি-রুজির আন্দোলনে সব সাংবাদিককে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।

Print Friendly, PDF & Email