করোনাকাল ও দাড়ি-গোঁফ বৃত্তান্ত

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু ♦

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে নিউইয়র্কে ইতোমধ্যে মৃতদের মধ্যে শতাধিক বাংলাদেশীও আছেন। আমার এক সময়ের সহকর্মী ফটো সাংবাদিক স্বপন হাই, ঘনিষ্টজন কামাল আহমেদ, আজাদ বাকির, আলহাজ্ব গিয়াসউদ্দিন, এবং আরো কয়েকজন পরিচিতজন সহ শতাধিক প্রবাসী (সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে) বাংলাদেশী মৃত্যুবরণ করেছেন। ঘনিষ্ট ও পরিচিতদের মধ্যে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ও নিজ নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন আছে আরো বেশি সংখ্যক। নিউইয়র্কে করোনার বিস্তৃতি আশঙ্কাজনক। বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশ, এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ষ্টেট থেকে অনেক বন্ধু ও আপনজন ফোন করে নিশ্চিত হয়েছেন, এখনো বেঁচে আছি।

তবুও হিন্দি্ কবির কবিতার অংশ থেকে বলতে হয়;

मत पूछ मेरे दोस्त, मेरा हाल कैसा है
तन्हा तन्हा हो गया हूं, इस मायावी संसार में

कोई नहीं है साथ खड़ा, इस ज़िन्दगी के मैदान में
लगी है प्यास मुझे बहुत ज़्यादा, ढूंढ रहा हूं पानी, इस वीरान रेगिस्तान में

“মত পুছ মেরে দোস্ত মেরা হাল ক্যায়সা হ্যায়
তানহা তানহা হো গ্যয়া হুঁ ইস মায়াবী সংসার মে,
কৌঈ নেহি সাথ খাড়া ইস জিন্দেগি কে ময়দান মে
লগী হ্যায় পিয়াস জিয়াদা, ঢু- রহা হুঁ পানি ইস বিরান রেগিস্তান মে।”

(বন্ধু, আমি কেমন আছি তা জানতে চেয়ো না,
এই মায়াবী সংসারে বিষন্নতায় আচ্ছন্ন হয়েছি,
জীবনের এই মাঠে কেউ নেই সাথে নেই,
অনেক তৃষ্ণার্ত আমি, পানি খুঁজছি এই জনহীন মরুতে।)

আমার শশ্রূমণ্ডিত ছবি দেখে এবং কবিতার পঙক্তিগুলো পাঠ করে কেউ মনে করবেন না যে, আমি হাল ছেড়ে দিয়েছি। এখনো টিকে আছি স্বেচ্ছা বন্দীত্ব বরণ করে। দাড়ি গজানোর পর থেকে এতোদিন দাড়ি না কামিয়ে থাকিনি। শখের বশেও কখনো কিছুদিনের জন্য দাড়ি রেখে আবার কামিয়ে ফেলেছি, এমনও ঘটেনি কখনো, যা আমার কবি বন্ধু Mahboob Hasan এবং কবি কাজী জহিরুল ইসলাম জী জহিরুল ইসলাম প্রায়ই করেন। এক আসরের অবসরে শিল্পী Raghib Ahsan ্এর কাছে কবি মাহবুব হাসান জানতে চাইছিলেন দাড়ি কামাতে ছয়টা জিলেট রেজর কতোদিন চলতে পারে। তারা একটি উপসংহারে পৌঁছেন। আমি ফোড়ন কেটে বলি, “মাহবুব ভাই যেভাবে দাড়ি রাখেন ও কামান, তাতে এক যুগ চালিয়ে দিতে পারবেন।” এবার অযতেœ বাড়তে দিয়েছি দাড়ি ও গোঁফ। বাইরে যেতে হয়না বলে দাড়ি কামানোর আবশ্যকতা বোধ করছি না। করোনা ভাইরাসজনিত অবরোধের মেয়াদের ওপর নির্ভর করবে আমার রেজর কতোদিন চলবে।

অন্যের দাড়ি নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। আমি দাড়ি না রাখার সিদ্ধান্তে অটল। দাড়ি রাখলে, বিশেষ করে বাংলাদেশসহ আমাদের উপমহাদেশে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। লোকজন গোঁফওয়ালার চেয়ে দাড়িওয়ালাকে বেশি সম্মান দেয়। দাড়ির সাথে টুপি থাকলে তো কথাই নেই। দাড়িওয়ালা দোষনীয় কোনো কাজ করলে লোকজন মুখের ওপরই বলে ফেলে, “দাড়ি রেখে এমন কাজ করতে লজ্জাও হয় না!” আর গোঁফওয়ালা অপরাধ না করলেও ধরে নেওয়া হয় অপরাধটি সেই করেছে। দক্ষিণ উত্তর ভারতের রাজস্থান এবং দক্ষিণ ভারতের কেরালা বাদ দিয়ে প্রায় সর্বত্র পুরু দশাসই গোঁফ রাখার প্রবণতা লক্ষ্যণীয়, ইংরেজিকে যাকে বলা হয়, “হ্যাণ্ডেলবার মুশটাচ”। মুক্তিযুদ্ধে কমা-ার-ইন-চিফ জেরারেল ওসমানির গোঁফকে ১৯৭১ সালে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘ হ্যাণ্ডেলবার মুশটাচ’ বর্ণনা করা হয়েছে। অনেক ভারতীয় মুভিতে গোঁফধারী পুলিশও দেখা যায় এবং সেই পুলিশ যখন গুণ্ডা-বদমাশদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না, তখন গুণ্ডাদের হামলার শিকার কাউকে বলতে বলতে শোনা যায়, “হাত মে চুড়িয়া পেহনে রাখ্খা হ্যায়; কম সে কম আপনা মোছ কো তো লেহাজ র্ক!” (হাতে চুড়ি পরে রেখেছো; অন্তত নিজের গোঁফের সম্মান তো করো)।

আমি প্রবাদ ও প্রচলিত কাহিনির অনেকগুলোই পালন করি। সেই কোন্ শৈশবে শুনেছিলাম, গজানোর পর থেকে যারা দাড়ি না কামাবে তারা আখেরাতে লাইলি-মজনুর বিয়ে খেতে পারবে। কথাটা মনে গেঁথে গিয়েছিল। কিন্তু দাড়ি রাখিনি। স্কুল জীবনে কামানোর মতো দাড়ি গজায়নি। তবে কলেজের প্রথম ক্লাসে যাওয়ার আগে সালেমের সেলুনে প্রথমবারের মতো দাড়ি কামিয়ে নেই। ক্লাস ফোর থেকে চুল কাটাই মরতুজার সেলুনে। তার কাছে দাড়ি কামিয়ে নিতে লজ্জা করছিল। তাই অদূরে সালেমে সেলুনে যাই। সালেম স্কুলে আমার এক ক্লাস নিচে পড়তো। দাড়ি কামানোর মানে লাইলি-মজনুর বিয়ে খেতে না পারা। তবুও ক্ষীণ আশা পোষণ করতাম যে আজন্ম দাড়িওয়ালাদের পর যদি আজন্ম গোঁফওয়ালাদের ডাক পড়ে, তাহলে কিন্তু গোঁফের ব্যাপারে সজাগ ছিলাম। একবারের জন্যও গোঁফ চেছে ফেলিনি। বাড়তে দিয়েছিলাম। ঠোঁট ছাপিয়ে মুখের ওপর ঝুলে থাকতো। পানি, দুধ, ডাল চুমুক দিয়ে পান করার সময় অনিবার্যভাবেই গোঁফ ভিজে যেতো। কোনো মুরুব্বির সাথে খেতে বসলে যথাসাধ্য চেষ্টা করতাম গোঁফ একটু তুলে রাখার। সব ক্ষেত্রে যে বিব্রত বোধ করতাম তা নয়, তবে আলী আযম স্যারের সাথে খেতে বসলে বিব্রত হতাম বেশি। তাঁর সাথে দেখা হলে, আর তা যদি দুপুর বা রাতের খাওয়ার সময়ের কাছাকাছি হয়, তাহলে হাতে ধরে একরকম টেনে নিয়ে যেতেন। অন্য সময় দেখা হলে কথা আদায় করে নিতেন কখন তাঁর সাথে একবেলা খেতে হবে। গোঁফ যাতে না ভিজে সেজন্য সতর্ক থাকলেও কাজ হতো না। ভিজেই যেতো। আমার অবস্থা দেখে মিট মিট হাসতো তাঁর দুই ছেলে লাবলু ও দেলু। (২০১৯ এর ডিসেম্বরে শ্রদ্ধাভাজন স্যার ইন্তেকাল করেছেন। আল্লাহ তাঁর বেহেশত নসীব করুন)। আমার গোঁফ গজানোর স্থানটি সরু হওয়ায় গোঁফ পুরু হওয়ার সুযোগ ছিল না বলে সরিষার তেল মেখে নিয়মিত তা দিয়েও গোঁফ খাড়া করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছি।

গোঁফ নিয়ে আমার কলেজে আমার অনেক সহপাঠি, যারা মাদ্রাসায় পড়াশোনার করার পর কলেজে ভর্তি হয়েছিল, তাদের প্রত্যেকে আমাকে নসিহত করতো গোঁফ ছেটে রাখার জন্য। তারা আমাকে একটি হাদিস শোনাতো, “ভালোভাবে গোঁফ ছাঁটো এবং দাড়ি বাড়তে দাও।” ওয়াজ করতে করতে তারা হাল ছেড়ে দিয়েছিল। আমার পরিচিত অনেক আলেমও নসিহত করতেন। তাতেও কাজ হয়নি। আমি বদ বা ধৃষ্ট ছিলাম না, একটু একগুয়ে টাইপের ছিলাম। কলেজে থাকতেই সত্তুর সালের দিকে একটি ঘটনা ঘটে। এক লোক এলাকার মাদ্রাসার কোনো কাজের জন্য চাঁদা চায়। লোকটির দাড়ি গোঁফ ছিল না। আমি তাকে পাঁচ টাকা দেই। সত্তর সালে পাঁচ টাকা অনেক টাকা। লোকটি দোয়া করে আমার জন্য, ভালো কথা। এরপর গোঁফ ছাঁটার ওয়াজ শুরু করে। আমি ধৈর্য্যরে সাথে তার ওয়াজ শুনি। এরপর প্রচ- ধমক দিয়ে বলি, “টাকা বের করুন।” লোকটি হতভম্ব হয়ে যায়। দু:খ প্রকাশ করে। কিন্তু আমার টাকা ফেরত দিতে বাধ্য করে তাকে উল্টো উপদেশ খয়রাত করি, “জায়গা বুঝে ওয়াজ করবেন।” অবশ্য পরে আমি নিজেই গোঁফকে একটি মার্জিত অবস্থার মধ্যে নিয়ে আসি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ দিকে।

দাড়ি না রাখা নিয়ে আমাকে কোনো কথা শুনতে হয়নি। তবে অনেক জায়গায় বিব্রত হয়েছি দাঁড়ি না থাকায়। নব্বই বা একানব্বই সালে আমি পাকিস্তানে বেড়াতে যাই। করাচি, লাহোর দেখার পর ইসলামাবাদে যাই। ওখানে ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতো ফজলু (বর্তমানে দাহরানের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক)। আমার সফর বৃত্তান্ত তার জানা ছিল না। লাহোর অবস্থানকালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল্লাহ ফারুক ভাট্টি (১৯৬৫ সালের যুদ্ধে যুদ্ধে শহীদ নিশানে হায়দার খেথাবপ্রাপ্ত মেজর রাজা আজিজ ভাট্টি পরিবারের সদস্য) আমাকে লাহোর ঘুরিয়ে দেখানোর পর্যায়ে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যায়। কয়েকজন বাংলাদেশী ছাত্রের সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দেয়। দু’জনকে পেলাম আমার এলাকার এবং আমার এক সহপাঠির ভাই। আমি ইসলামাবাদে যাবো জানার পর তারা ফজলু’র কথা বলে। ফজলুকে জানি ওর এইচএসসি পড়ার সময় থেকে। আমার পনের বছরের জুনিয়র। ইসলামাবাদে আমার থাকার জায়গা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু আমি ফজলু’র সাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেই এবং ফোনে কথা বলি। রাওয়ালপিন্ডির চাকলালা এয়ারপোর্ট থেকে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলি। দু’দিন পর ফজলু আমাকে রিসিভ করে। ওকে দেখে অবাক হই, ওর মুখজুড়ে কালো কুচকুচে দাড়ি। কারণ জানতে চাইলে সে বলে, ‘ক্যাম্পাসে গিয়ে বলবো।’ রাওয়ালপি-ি থেকে ইসলামাবাদের দূরত্ব দশ মাইলের মতো। ওর হোষ্টেলে নিয়ে যায়। যার সাথে দেখা হয়, তার মুখ ভর্তি দাড়ি। দাড়ি বিহীন একটা ছাত্রও দেখিনি। ফজলু বলে, ‘এবার বুঝে দেখুন, কেন দাড়ি রাখতে হয়েছে। দাড়ি না রাখলে পাকিস্তানিরা সাধারণভাবে ‘জাহেল’ ভাবে; আর দাড়ি রাখলে তাকে সাধারণভাবে ডাকে ‘সুফি’। পরদিন সকালে রেজর, সাবান নিয়ে বেসিনের সামনে গেছি। সেখানে মুখে চমৎকারভাবে বেড়ে উঠা, বা সুন্দর করে ছাঁটা শশ্রƒশোভিত তরুণের ভিড়। আমার বিব্রত হওয়ার পালা। আমি ওদের প্রায় দ্বিগুণ বয়সী লোক, ওদের সামনে সাবান মেখে শেভ করি কিভাবে। দাড়ি রাখার আবশ্যকতা নিয়ে কেউ ওয়াজ শুরু করলেই বা আমার কী করার আছে। কিন্তু আমাকে শেভ করতে হলো, কয়েকটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। যে ক’দিন ছিলাম, দাড়ি বিহীন বয়স্ক লোকজন দেখলেও দাড়ি বিহীন তরুণ দেখিনি।

দাঁড়ি কেমন বা কতটুকু হতে হবে সে সম্পর্কেও হাদিস আছে। রাসুলুল্লাহ বলেছেন, “পৌত্তলিকরা যা করে, তোমরা তার বিপরীত করো। দাড়ি লম্বা করো, গোঁফ ছোটো করে কাটো। দাড়ি কামানো মুশরিকদের তূল্য কাজ। এটি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।” কিন্তু কতো লম্বা হবে তা নিয়ে নানা জনের নানা মত আছে। কেউ ছোটো করে ছেঁটে রাখেন। কেউ রাখেন মাঝারি আকারের। আবার কেউ বাড়তে দেন, জীবনের কাঁচি ছোঁয়ান না। নিউইয়র্কে আমাদের অতি ঘনিষ্ট এক সজ্জন আছেন। আবু সামীহাহ্ সিরাজুল ইসলাম। শিক্ষকতা করেন। প্রচুর পড়াশোনা তাঁর। হেন বিষয় নেই যা তিনি জানেন না। চট্টগ্রামের লোক এবং ধার্মিক পরিবারের সন্তান। তাঁর দাড়ি মাশাআল্লাহ দেখার মতো। খুব কম মানুষের এমন দাড়ি দেখেছি। দীর্ঘ দাড়ি, নিউইয়র্কের বাতাসে ওড়াওড়ি করে। তাঁর পান্ডিত্যের কারণে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন স্থানে আমন্ত্রিত হন। সুযোগ পেলে আমিও তাঁর বক্তৃতা শুনতে যাই। একদিন তিনি বলছিলেন, এক ইহুদি ভদ্রলোক (মাথায় ছোট টুপি বা দীর্ঘাকৃতির টুপি দেখেই বোঝা যায়) এক ষ্টোরে দীর্ঘক্ষণ তাঁকে দেখছিলেন, একসময় কাছে এসে কিছু মনে না করলে একটি প্রশ্ন করতে চান। তিনি বিনা দ্বিধায় তাকে প্রশ্ন করতে বলেন। ইহুদি ভদ্রলোক জানতে চায় যে, দাড়িতে উনি কোন শ্যাম্পু ব্যবহার করেন।

গোঁড়া ইহুদিরা দীর্ঘ দাড়ি রাখে এবং মাথায় কালো রঙয়ের দীর্ঘ টুপি পরে। ব্রুকলিন এলাকায় প্রচুর ইহুদির বসবাস। এক বাংলাদেশী নতুন এসে ব্রুকলিন এলাকায় উঠেছেন। রাস্তায় বের হলে এক দাড়িওয়ালার সাথে প্রায় প্রতিদিন তার দেখা হয়। বাংলাদেশে আচরিত অভ্যাসবশত তিনি দাড়ির প্রতি শ্রদ্ধাবশত সালাম দেন। লোকটি সালামের উত্তর দেয় না। কয়েকদিন চলার পর লোকটি তার বন্ধুকে ঘটনাটি জানায় এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে যে, ‘দাড়িওয়ালা মুসলমান দেখে সম্মান করে সালাম দেই, একটা দিনও শালার ব্যাটা সালাম নিল না।’ বন্ধু তার কাছে বিবরণ শোনে এবং হাসে। পরামর্শ দেয় ওই ধরনের দাড়ি টুপিওয়ালা সামনে পড়লে সালাম না দিতে। কারণ লোকটি ইহুদি এবং পরিচিতজন ছাড়া তারা কারো সালাম নেয় না, সালাম দেয়ও না।

বাংলাদেশে এসে কাঁঠাল খেয়ে কাবুলিওয়ালার যে বিপদ হয়েছিল, সে কাহিনি বাঙালির জানা। কিন্তু দাড়ি নিয়ে সবচেয়ে বড় বিপদে পড়েছিল শিখরা। ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর দিল্লিতে শিখদের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়, সেই বিপদ থেকে প্রাণ বাঁচাতে অসংখ্য শিখ পুরুষকে তাদের ধর্মীয় কর্তব্য পালনের অংশ হিসেবে আজন্ম লালিত দাড়ি চেছে ফেলতে হয়েছিল, হাত থেকে কঙ্গন ও মাথা থেকে পাগড়ি খুলে ফেলতে হয়েছিল। ২০০১ সালে টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর যুক্তরাষ্ট্রে শিখ নিগ্রহের কারণ ছিল তাদের শোভনীয় দাড়ি ও পাগড়ি। নিগ্রহকারীরা তাদেরকে মুসলিম বিবেচনা করেছিল। বাংলাদেশে জেএমবি’র বিরুদ্ধে পুলিশী অভিযানের সময় তাদের বহু এক্টিভিষ্টকে দাড়ি বিসর্জন দিতে হয়েছে।

দাড়ির দৈর্ঘ্য নিয়ে বাংলাদেশেও অনেক কথা প্রচলিত আছে। এক লোক রাতের বেলায় কুপির আলোতে কিতাব পড়ার সময় দাড়ির দৈর্ঘ্য সম্পর্কিত একটি বিবরণ পায়; ‘দাড়ির দৈর্ঘ্য হতে হবে এক মুঠির সমান।’ লোকটি দাড়ি মুঠিতে নিয়ে দেখতে পায়, তার দাড়ি মুঠির বাইরেও বেশ লম্বা। দাড়ির মাপ সহীহ করার জন্য তখনই মুঠির বাইরে ঝুলে থাকা দাড়িগুলো জ্বলন্ত কুপির ওপর ধরে। চুল পোড়া গন্ধ ছড়িয়ে দাড়ি জ্বলতে থাকে। আগুনের উত্তাপ মুঠিতে লাগা মাত্রই সে মুঠি ছেড়ে দেয়। তার পুরো দাড়ি জ্বলে বিনাশ হয়।

লেখকঃ নিউইয়র্ক প্রবাসী খ্যাতিমান সাংবাদিক, লেখক ও অনুবাদ সাহিত্যিক

@ ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া

Print Friendly, PDF & Email