শিরোনাম :

  • বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

করোনায় মৃত্যু

আনিসুজ্জামানকে আজিমপুরে দাফন করলো মারকাজুল ইসলামী

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শিক্ষাবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করেছে আল মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশ এর দাফন টিম । আজ শুক্রবার (১৫ মে)  বেলা পৌনে ১১টায় রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তার ছেলে আনন্দ জামান এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

আনন্দ জামান জানান, ‘আজ  বেলা পৌনে ১১টায় মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশ এর তত্তাবধানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এসময় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আবুল খায়ের লিটু, ড. আনিসুজ্জামানের জামাতা আজিমুল হক, চাচা আখতারুজ্জামানসহ কয়েকজন আত্মীয় উপস্থিত ছিলেন।’

এর আগে সকাল ১০টার দিকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে ড. আনিসুজ্জামানের মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার দাফনের সব আনুষ্ঠানিকতা হয়। ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আল মারকাজুল ইসলাম বাংলাদেশ ।

বৃহস্পতিবার (১৪ মে) রাজধানী ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ড. আনিসুজ্জামান। মৃত্যুর আগে ও পরে তার শরীর থেকে সংগৃহীত নমুনায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়। সে কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয় এবং এই শিক্ষাবিদকে শ্রদ্ধা জানানোর অন্য সব কর্মসূচি বাতিল করা হয়। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন আনিসুজ্জামান। ১৯৮৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে তার গবেষণা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি ২০১২ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সভাপতি ছিলেন।

মৌলবাদবিরোধী নানা আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত গণআদালতে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

প্রসঙ্গত, রাজধানী ঢাকার সম্মিলিত সামরিক  হাসপাতালে (সিএমএইচ) বৃহস্পতিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নন্দিত শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান। মৃত্যুর আগে ও পরে তার শরীর থেকে সংগৃহীত নমুনায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়। 

ড. আনিসুজ্জামানের ছেলে আনন্দ জামান জানিয়েছেন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকালে একবার তার বাবার শরীর থেকে করোনা সন্দেহে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে মৃত্যুর পর আরও একবার নমুনা সংগ্রহ করেন চিকিৎসকরা। পরীক্ষার পর রাত সাড়ে ৯টায় তাকে জানানো হয়েছে ড. আনিসুজ্জামান কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিলেন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করানো হয়েছে।

ড. আনিসুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরেই ফুসফুসে সংক্রমণসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। মহাখালীর ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতালে (সাবেক আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল) ২৭ এপ্রিল থেকে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৯ মে পরিবারের ইচ্ছায় তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়। ইউনিভার্সেল হাসপাতাল থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল নেওয়ার সময় ওই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী জানিয়েছিলেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান হার্ট, কিডনিসহ বেশ কিছু রোগে ভুগছিলেন। পরে তার স্মৃতিভ্রষ্টতা দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে আনন্দ জামান ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে জানান, সকাল থেকেই তার পিতা ড. আনিসুজ্জামানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। দুপুরে তিনি বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করতে থাকেন। সিএমএইচের চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তবে ওই স্ট্যাটাসে ড. আনিসুজ্জামানের করোনা পরীক্ষার কথা জানাননি তিনি।  

এদিকে, ভিন্ন একটি সূত্র জানিয়েছে, ড. আনিসুজ্জামানের ১০ মে আরও একবার করোনা পরীক্ষা হয়েছিল। তখন তার ফল নেগেটিভ আসে। এছাড়াও এ ঘটনার পর ড. আনিসুজ্জামানের পরিবার সদস্যদের নমুনা পরীক্ষার বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু জানা যায়নি। তিনি যেসব হাসপাতালে ছিলেন সেগুলোর চিকিৎসক, নার্সসহ সেবাসংশ্লিষ্টরাও এখন কোয়ারেন্টিনে যাবেন কিনা বা তাদের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে এখনও কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।  

এই শিক্ষাবিদ, লেখক ও জাতীয় অধ্যাপক মৃত্যুকাল স্ত্রী সিদ্দিকা জামান, দুই মেয়ে রুচিবা ও শুচিতা এবং একমাত্র ছেলে আনন্দ জামানসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও গুণগ্রাহীকে রেখে গেছেন। তার জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। তিনি ভাষা আন্দোলন (১৯৫২), ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান (১৯৬৯) ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে তার গবেষণা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি ২০১২ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সভাপতি ছিলেন।