• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

মার্কিন ভিসা-থেরাপিতে অন্তত ১০ প্রভাব

?এম আবদুল্লাহ ?

যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন ও ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের অধীনে বুধবার (২৪ মে) রাতে কেবলমাত্র বাংলাদেশের জন্যে নজীরবিহীন যে ভিসা বিধিনিষেধ জারি করেছে তার প্রভাব ব্যাপকতর হবে বলে আমার ধারণা। এটা স্যাংশনের চেয়েও অধিকতর কার্যকর হতে পারে।
এই ভিসা নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র থেমে থাকবে এমনটা ভাবার কারণ নেই। মানবাধিকার ইস্যুতে আরও স্যাংশনের যে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে তা এর বাইরে বলেই মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র কতটা কঠোর অবস্থানে রয়েছে তার প্রমাণ এককভাবে বাংলাদেশের জন্যে নয়া ভিসানীতি একযোগে পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিজে টুইট করে, সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র এবং ঢাকায় দূতাবাসের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছে। আবার তাৎক্ষণিক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে বুধবার রাতভর।

সরকার বিচলিত নয় বলে তাৎক্ষণিক যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তা অচিরেই উবে যেতে পারে। কারণ নয়া ভিসানীতির প্রভাব হবে বহুমাত্রিক। মূলতঃ এর লক্ষ্য রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অর্গান। রাষ্ট্র ও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মাঠ প্রশাসন পর্যন্ত এ পদক্ষেপের আওতাভুক্ত বলে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে। কয়েকটি সম্ভাব্য প্রভাব এখানে তুলে ধরা হলো।

১. বিগত দুটি নির্বাচনে যেসব বাহিনী ভোটাধিকার হরণে বেপরোয়া ছিল তারা সংযত হতে পারে। কারণ ওইসব বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় ব্যাক্তি ও তাদের পোষ্যবর্গ যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি নিতে দশবার ভাববে। বিশেষ করে পরিবারের সদস্যের চাপ সামলানো অনেকের পক্ষেই কঠিন হবে।
২. গত দুটি নির্বাচনে দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া আছে। এ বিধিনিষেধ আগামীতে তাদেরকে যথেচ্ছ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হতে পারে।
৩. ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ভন্ডুলে নেতৃত্বদানকারী বাহিনী কর্মকর্তারা সরাসরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন। অতএব অতিউৎসাহীর সংখ্যা কমে আসবে বলে আশা করা যায়।
৪. দলবাজ ও উচ্চাভিলাষী আমলারা ইলেকশন ইঞ্জিনীয়ারিংয়ের হাতিয়ার হতে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করবেন। বেপরোয়া ভাবটায় মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি হবে। বর্তমান ও সাবেক উভয় শ্রেণির আমলাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাখা হয়েছে।
৫. নির্বাচন কমিশনে দায়িত্বরতরা সরাসরি এ নিষেধাজ্ঞার প্রভাবভূক্ত। অতএব ক্ষমতাসীনদের তুষ্ট করতে কতটা উদোম হবেন তা ভাবতে হবে।
৬. নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আদালতকে যথেচ্ছ ব্যবহারের কুনজীর রয়েছে গত দুটি নির্বাচনে। আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে গত নির্বাচন অর্ধশতাধিক আসনকে বিএনপির প্রার্থীমুক্ত করে ফেলা হয়েছিল। বিচারকদের দিকে নজর রাখার কথাও জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে সেখানেও ইতিবাচক ফল আসতে পারে।
৭. দুদক, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিরোধীদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের হাতিয়ারে পরিনত করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তারাও মার্কিন কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়লেন।
৮. স্বাধীনচেতা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজসহ গণতন্ত্রমনা বিবেকবান নাগরিকদের প্রটেকশন দেওয়ার চেষ্টা আছে মার্কিন নতুন ভিসানীতিতে। চাইলে এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে মুক্তমনা ও আত্মমর্যাদাশীল মিডিয়া হাউজ। কারণ সাংবাদিক ও মিডিয়ার ওপর হস্তক্ষেপ, নিয়ন্ত্রণ ও খবরদারির সঙ্গে জড়িতরাও ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন।
৯. যেসব রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একতরফা ও পাতানো নির্বাচনের সঙ্গী হবে সেসব দলের নেতারা এই নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হবেন। ফলে অতীতের মতো আওয়ামী লীগ যেনতেনভাবে নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে চাইলে সঙ্গী পেতে বেশ বেগ পেতে হতে পারে।
১০. পেশাজীবি ও নাগরিক সমাজের নেতৃস্থানীয় যারা ফ্যাসিবাদ টিকিয়ে রাখতে নির্লজ্জ ভূমিকা পালন করে চলেছেন তাদের জন্যেও সতর্কবার্তা রয়েছে। টকশো ও প্রবন্ধ-নিবন্ধে জনগণের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান জানান দিলে তাদের জন্যেও মার্কিন মুল্লুকের দরজা বন্ধ হবে।

[? এটা লেখকের একান্তই ব্যাক্তিগত বিশ্লেষণ। ভিন্নমত স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। তাছাড়া এ পোস্ট কোন মতেই বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে উৎসাহিত করার জন্যে নয় বলেও নোট দেওয়া হয়েছে।]

Print Friendly, PDF & Email