গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার সব তথ্য আগেই আমাদের কাছে ছিল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ff669018ce9d903ad3f1919e8ed5eb0a-578b509812d9aঢাকা: গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার সব তথ্য আগেই পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ছিল বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
রবিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক’ এই মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই গুলশানে একটি রেস্তোরায় ও ৭ জুলাই শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এই হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিদের মধ্যে দুই তরুণ নিবরাস ইসলাম ও আবির রহমান বেসরকারি নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। এছাড়া কয়েকবছর আগে থেকেই বিভিন্ন সময় জঙ্গি হামলায়ও এই বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান ছাত্রের নাম আলোচনায় আসে। অন্যদিকে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও জঙ্গিদের সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক প্রতিনিধি এবং ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে মতবিনিময় এক সভার আয়োজন করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘গুলশান হামলার আগে এ বিষয়ে সব ধরনের গোয়েন্দা তথ্য আমাদের কাছে ছিল। গোয়েন্দা তথ্য ছিল, গুলশান এলাকায় কিছু একটা ঘটতে পারে। এ কারণে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল। এর পেছনে কারা, কারা এদের মদদ দিয়েছে, তা আমাদের জানা আছে।’
প্রস্তুতি থাকার কারণেই দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পেরেছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ঘটনার তিন মিনিটের মাথায় আমাদের পুলিশ সদস্য এসআই ফারুক সেখানে যান। তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর কমিশনার জানতে পেরে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে যেতে বলেন। সেখানে হামলাকারীরা ভেতরে কী অবস্থায় ছিল, জিম্মিদের কী অবস্থায় রেখেছিল, তা জানার জন্য যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছিল। এরপর আপনারা সবাই দেখেছেন, সেনাবহিনীর নেতৃত্বে দক্ষতার সঙ্গে ১৩ মিনিটের মাথায় আমাদের অভিযান সফল হয়।’
কামাল বলেন, ‘শোলাকিয়ায়ও একই ধরনের হামলার চেষ্টা হয়েছিল, পুলিশ চেকপোস্টে আমাদের পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে।’ তিনি জানান, গুলশান হামলায় নিহত ৫ হামলাকারীর মৃতদেহ তাদের পরিবারের কেউ নিতে আসেনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে সব তথ্য আছে, কারা মানুষ হত্যা করার মত ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে জড়িত। তাদের ব্যাপারে সব জানি আমরা। আমরা কঠোর হতে চাই না, শান্তিপ্রিয় মানুষ শান্তি চাই। তাই আপনারা যারা পথভ্রষ্ট হয়েছেন তারা পথে ফিরে আসুন। একসময় মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে জঙ্গিরা টার্গেট করে তাদের অপকর্মে লিপ্ত করতো। ফলে আমরা সেখানে ব্যাপকভাবে নজরদারি করি এবং মাদ্রাসার ছাত্ররা যেন ভুল পথে পা না বাড়ায় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আমরা সক্ষম হয়েছি। এখন মাদ্রাসা থেকে সরে গিয়ে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এবং বিশ্বিবদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে তাদের জীবনকে বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এখন আমরা এখানে অনেক বেশি সচেতন হয়েছি।’

রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ করে কেউ পার পাবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা হাতে অস্ত্র ধরে, শরীরের রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। সেই স্বাধীন দেশে রাষ্ট্রদ্রোহীদের জায়গা নেই। আমরা কঠোর হাতে তা দমন করবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘জঙ্গিদের শরীরে কোনও বিশেষ মাদক ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখছি। আমরা মনে করি, হয়তো মাদকের প্রভাবই তাদের গ্রাস করছে। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, এই দেশের তরুণরা এতটা বিপথগামী নয়। তারা এই সামাজেরই সন্তান, তারা মানুষ হত্যা করতে পারে এটা বিশ্বাস হয় না।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আজ আপনাদেরকে ডেকেছি কিভাবে দেশকে এই অবস্থা থেকে বের করে আনা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ করতে। ইতোমধ্যে সরকারের সব উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আপনারাও সচেতন হয়েছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নজরদারি বাড়িয়েছেন, এ জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। অনেক আগে থেকেই আপনাদের প্রতি আমাদের এই আহ্বান ছিল। কিন্তু তখন এত সাড়া দেননি। এখন সাড়া দিয়েছেন কিন্তু একটু দেরি হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন আর কোনও জঙ্গি সন্ত্রাসীদের উৎপত্তি না হয়, সেদিকে আপনাদেরই খেয়াল রাখতে হবে।’

অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের সন্তানকে আপনারা সবসময় খেয়াল রাখবেন। তারা কী করছে, কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, সবকিছু তদারকি করবেন। তাদের ভেতরে সামাজিকতা, সচেতনতা সৃষ্টি করার দায়িত্ব আপনাদের।’

প্রধান অতিথি হিসেবে সভায় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান, র‌্যাব মহাপরিচালক ও পুলিশ প্রধান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, উপাচার্য, ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, আগামী ২৩ জুলাই দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি),  শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারশন নেতাসহ শিক্ষকদেরও ডেকেছে সরকার। এ দিন সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সভা করবেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কর্মকর্তারা। এতে সভাপতিত্ব করবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

Print Friendly, PDF & Email