অবশেষে মিললো রায়ের কপি

c1e62601da040ff06f563b09f1593000-BNP_Flagনিজস্ব প্রতিবেদকঃ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় অবশেষে মিলেছে। আদালতে রায় ঘোষণার দীর্ঘ ১২ দিন পর মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি হাতে পেলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। গতকাল সোমবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে ১১৭৪ পৃষ্ঠার রায়ের এ কপি পান আইনজীবীরা। বকশীবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতের কার্যালয় থেকে রায়ের অনুলিপি খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, ‘আসামি বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রসিকিউশন প সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সম হওয়ায় তাঁকে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারার বিধান মোতাবেক ৫ (পাঁচ) বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং আসামি তারেক রহমান, কাজী সালিমুল হক ওরফে কাজী কামাল, শরফুদ্দীন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং মমিনুর রহমান এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রসিকিউশন প সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সম হওয়ায় দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারার বিধান মোতাবেক ১০ (দশ) বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং বর্ণিত সকল আসামিকে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।

তবে রায়ে ৪০৯/১০৯ ধারা বিধান মোতাবেক খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়ার কথা বললেও এর কোনো ব্যাখ্যা দেননি বলে উল্লেখ করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানা উল্লাহ মিয়া। তিনি বলেন, ৪০৯ ধারায় যে সংজ্ঞা আছে তার আওতায় খালেদা জিয়া পড়েন না। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব। উচ্চ আদালতে এই সাজা টিকবে না। তিনি বলেন, আশা করি আজ মঙ্গলবার আপিল আবেদন দায়ের করতে পারব। তিনি আরো বলেন, রায় প্রস্তুত হওয়ার আগে রায় দেয়া হয়েছে। এ জন্য রায়ের কপি পেতে ১২ দিন দেরি হলো। রায় ৬৩২ পৃষ্ঠা হলেও সার্টিফায়েড কপি ১১৭৪ পৃষ্ঠা হয়েছে।

এর আগে মামলার শুনানি শেষে ১৪ দিনের মাথায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় দেন আদালত। রায়ের কপি গ্রহণ করার সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ তালুকদার, জাকির হোসেন ভূইয়াসহ শতাধিক আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রায় পাওয়ার পর খালেদা জিয়ার অন্যতম প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, রায় পেয়েছি। আপিল রেডি। আমরা সিনিয়ররা বসে সমন্বয় করে কাল (আজ) মঙ্গলবার আপিল ও জামিন আবেদন করব। রায়ে কী কী বিষয় তুলে ধরা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রায়ে একই কথা বলা হয়েছে। ট্রাস্টের টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি তুলেছেন। শেষ পর্যন্ত এটা আত্মসাতের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে রায়ে খালেদা জিয়া কিভাবে সম্পৃক্ত তা বলা হয়নি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ট্রাস্টের টাকায় হাতও দেননি। কুয়েতের আমিরের পাঠানো টাকা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে দু’টি ট্রাস্টে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া ট্রাস্টি নন। তার সাথে সম্পৃক্ত নন।

অন্য দিকে রায়ে অর্থদণ্ডের টাকা সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ কর্তৃক প্রত্যেককে সম অঙ্কে প্রদান করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, আরোপিত অর্থদণ্ডের টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত বলে গণ্য হবে। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে তাদের প্রত্যেককে ওই টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে দেয়ার নির্দেশ দেয়া গেল।

রায় পাওয়ার পর আপিলের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য গত রাতে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর ধানমন্ডির বাসায় সিনিয়র আইনজীবীরা বৈঠক করেন। বৈঠকে সিনিয়র আইনজীবীরা রায়ের বিভিন্ন পয়েন্ট নিয়ে পর্যালোচনা করেন। বৈঠকে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মেহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন, সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানা উল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, কায়সার কামাল, জাকির হোসেন ভূইয়া উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় প্রদানের দিন থেকে রায়ের কপি পাওয়ার অপোয় ছিলেন আইনজীবীরা। রায়ের কপি পাওয়ার পর তারা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল এবং জামিন আবেদন করবেন।
এ বিষয়ে আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, আমরা রায়ের কপি পেয়েছি। এখন রায় পর্যালোচনা করছি। মঙ্গলবার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও জামিন আবেদন দায়ের করতে পারব বলে আশা করছি। তিনি বলেন, রায় ঘোষণার ১১ দিন পর অতি প্রতীতি রায় এবং আদেশের কপি আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
রায়ের অনুলিপি পাওয়ার সময় কেন দীর্ঘায়িত হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে যে মামলায় জেল দেয়া হয়েছে, সে মামলা জেল হওয়ার মতো না। অর্থাৎ মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রায়ের কপি পাওয়ার কথা ছিল। সেখানে যখন দুই সপ্তাহ সময় লাগিয়েছে। সুতরাং এটা সরকারের প্রভাবমুক্ত নয়, তা চিন্তা করার সুযোগ নেই।

জামিনের বিরোধিতা করবে দুদক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের সত্যায়িত কপি সংগ্রহ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ।

গতকাল সকালে আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, আদালত থেকে জানানো হয়েছে আজ (সোমবার) বিকেলে রায়ের সার্টিফায়েড কপি দেয়া হবে। আমরা অপেক্ষা করছি। রায় পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার আপিল ও জামিন আবেদন করব।

এর আগে রায়ের সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। গত ১২ ফেব্রুয়ারি রায়ের কপি পেতে আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া তিন হাজার ফলিও জমা দেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পরপরই বেগম খালেদা জিয়াকে আদালত থেকে গ্রেফতার করে পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখন ওই কারাগারে আছেন। এ ছাড়া এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া মামলায় অপর চার আসামিকেও ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। খালেদা জিয়া ছাড়া অপর আসামিদের প্রত্যেককে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া এ মামলায় অপর যে চার আসামিকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে তারা হলেন, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।

গত ১৯ ডিসেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। এ দিন রাষ্ট্রপ যুক্তি উপস্থাপন করে। এরপর ২০, ২১, ২৬, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর এবং ৩, ৪, ১০, ১১ ও ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়র পে যুক্তি উপস্থাপন করেন তার আইনজীবীরা। এরপর মামলার অন্য আসামিদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। সর্বশেষে গত ২৫ জানুয়ারি উভয় পক্ষের যুক্তি উপস্থান শেষে ৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন ধার্য করা হয়।

 

Print Friendly, PDF & Email