শিরোনাম :

  • বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

জিয়াউর রহমান আ.লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন: ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বিতর্কিত করার হীন উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অপপ্রচারের একটি সংগঠিত ঘৃণ্য অপতৎপরতা জাতি গভীর ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য  করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ মঙ্গলবার বেলা ৩টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির উদ্যোগে ‘মহান স্বাধীনতার ঘোষক, রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যাচারের প্রতিবাদ’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত ১৫ আগস্ট সরকার প্রধান কর্তৃক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক ভূমিকাকে বিকৃত করার মাধ্যমে সে অপচেষ্টা নতুনভাবে শুরু করা হলো। অবশ্য বহুদিন ধরেই এই ষড়যন্ত্রের অপচেষ্টা চলছে। কিন্তু কখনোই তা হালে পানি পায়নি। আমাদের দেশ তথা গোটা বিশ্ব যখন করোনা আতঙ্কে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এবং এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যমতই যখন সর্বস্তরের জনগণের দাবি তখন সরকারের প্রধান ব্যক্তির মুখে ইতিহাস বিকৃত করার এই ঘৃণ্য অপচেষ্টা গোটা জাতিকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। আমরা নিন্দাভরে এই ঘৃণ্য অপচেষ্টার প্রতিবাদ জানাই।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকেই ব্যবহার করে চলেছে দেশের মালিক জনগণের বিরুদ্ধে। বিএনপির লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হচ্ছে একের পর এক মিথ্যা মামলা। বিচার- বহির্ভূত প্রক্রিয়ায় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা, গুম ও খুন আজ সরকারের দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছে। যা জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সংবিধানের মৌলিক চরিত্র পরিবর্তন করেও আশ্বস্ত নয় এই সরকার।’

‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের  নামে সকল গণমাধ্যম ও স্বাধীন মতামতের কণ্ঠরোধ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো জঘন্য আইনের। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে দলীয় ক্ষমতার হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। আসলে সরকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তাকে ভয় পায়। এত অত্যাচার, নির্যাতনের পরেও দেশব্যাপী বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি ও গণভিত্তির তথ্য সম্পর্কে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সরকার যতই অবগত হয়, ততই তাদের আক্রোশ বাড়ছে বিএনপি তথা দেশবাসীর প্রতি। আর সেই আক্রোশ থেকেই ইতিহাস বিকৃতির এ ঘৃণ্য তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে বর্তমান সরকার’, যোগ করেন বিএনপির এই নেতা।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘১৯৭১ সালে জাতি যখন নেতৃত্বহীন, কাণ্ডারীশূন্য হয়ে দিশেহারা, ঠিক তখনই ২৬ শে মার্চ জীবনের তোয়াক্কা না করে মেজর জিয়াউর রহমান অকুতোভয়ে স্বকণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন এবং সম্মুখ-যুদ্ধে নেতৃত্ব দিলেন। যিনি পরবর্তীতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিলেন, বিশৃঙ্খল সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনলেন, স্টেটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের আসন সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় ও রাজনীতিতে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে জনগণের মণিকোঠায় স্থান করে নিলেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ যার জানাজায় অংশ নিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করল, সেই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকেই এখন ১৫ আগস্ট হত্যার সাথে সম্পৃক্ত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের কারা হত্যা করেছে সেটা শেখ হাসিনার দায়ের করা মামলায় ইতিমধ্যে আদালতে নির্ধারিত হয়ে গেছে এবং এই হত্যার জন্য কোথাও জিয়াউর রহমানকে দোষারোপ করার মতো কিছুই পাওয়া যায়নি। ওই মামলায় জিয়াউর রহমান কিংবা তার ঘনিষ্ঠ কাউকে আসামিও করা হয়নি। কিন্তু তাতে আওয়ামী লীগের মন ভরছে না, এখন তারা জিয়াউর রহমান ও বেগম জিয়াকে সম্পৃক্ত করার ষড়যন্ত্র শুরু করছে।’

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান, বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের নামে এত সমালোচনা আর অপপ্রচার কেন করে আওয়ামী লীগ? কারণ তারা জানে আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম জিয়া। জিয়াকে হত্যা করা হয় ৪০ বছর আগে। তাদের অপ্রতিরোধ্য জনপ্রিয়তাকে ক্ষমতাসীনদের এতই ভয়, যে আজও একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়ার সাহস রাখে না তারা। আর তাইতো তারা নির্বাচন নিয়ে এত কূটকৌশলে লিপ্ত।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে যাদের সম্যক ধারণা আছে তারা সকলেই জানেন, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে। মরহুম রাষ্ট্রপতির শেখ মুজিবুর রহমানের লাশের ওপর দিয়েই সেদিন ওই মন্ত্রীসভার প্রায় সকল সদস্যরাই শপথ নিয়েছিল মোশতাক সরকারের মন্ত্রী হিসেবে। ১৯৭৫’র ১৫ আগস্ট এবং ৩ অক্টোবরে তৎকালীন আওয়ামী-বাকশাল নেতা খন্দকার মোশতাকের জাতির উদ্দেশে দেওয়া দুটি ভাষণ এর সুস্পষ্ট দালিলিক প্রমাণ বহন করে। সে ভাষণে তিনি মুজিব হত্যাকাণ্ডকে “এক ঐতিহাসিক প্রয়োজন” বলে উল্লেখ করেন।’

ডিএন/পিএন/জেএএ/৫:২৮পিএম/১৮৮২০২০২২